• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৪, ২০২১, ০৯:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৫, ২০২১, ০৩:৩৯ এএম

আফিফ-নুরুলের জুটিতে বাঘদের অমূল্য জয় 

আফিফ-নুরুলের জুটিতে বাঘদের অমূল্য জয় 

ব্যাটিং বিপর্যয় সামলে নিয়ে আফিফ হোসেন ধ্রুব এবং নুরুল হাসান সোহানের ঠাণ্ডা মাথায় গড়া জুটিতে ভর করে পাঁচ ম্যাচ টি-২০ সিরিজের দ্বিতীয়টিতেও অস্ট্রেলিয়াকে বধ করে ছাড়ল বাংলাদেশ। ৫ উইকেটের এই জয়ে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া টাইগাররা এখন সিরিজ জয়ের আশায় আছে।

ঢাকার মিরপুর শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জয়ের জন্য ১২২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মিচেল স্টার্কের ফুল অ্যান্ড স্ট্রেইট বলের লাইন মিস করে বোল্ড হয়েছেন সৌম্য সরকার। 

প্রথম ম্যাচে ২ রান করলেও এদিন শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে সেরার পুরস্কার জেতা বাঁহাতি এই ওপেনার। প্রথম ম্যাচে ৩০ রান করা মোহাম্মদ নাইমও এদিন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। জস হ্যাজেলউডের লেন্থে বলে বোল্ড হয়েছেন ১৩ বলে ৯ রান করা নাইম। 

চারে নামা শেখ মেহেদী হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ২১ রানে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশের শুরুর বিপর্যয়ে সামাল দেয়ার দেন সাকিব আল হাসান। মিচেল স্টার্কের বলে টানা তিনটি চার মেরে দারুণ শুরু করেন সাকিব। তাঁদের দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৭ রান।

অ্যান্ড্রু টাইয়ের স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে ১৭ বলে ২৬ রান করা সাকিব ফিরলে ভাঙে তাঁদের এই জুটি। মিাহমুদউল্লাহ রিয়াদও এদিন সাজঘরে ফিরেছেন থিতু হওয়ার আগেই। অ্যাস্টন অ্যাগারের আউট সাইড অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজ হয়ে সাজঘরে ফেরেন বাংলাদেশের এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।

এদিন রানের খাতাই খুলতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। তাঁর বিদায়ের একটু পরই অ্যাডাম জাম্পার বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়ে সাজঘরের পথে হাঁটেন মেহেদি। এক ছক্কায় ২৪ বলে ২৩ রান করেছেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। যদিও এই ইনিংসটি খেলতে ৪ বার জীবন পেয়েছেন তিনি। 

৬৭ রানে ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন আফিফ এবং সোহান। তাদের ব্যাটে ভালোভাবেই লড়াইয়ে ফিরে আসে স্বাগতিকরা। এই দুই ব্যাটারের ৪৪ বলএ ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি ৮ বল বাকি থাক্তেই টাইগারদের জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেয়। ৩১ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কার মারে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন আফিফ। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেয়া নুরুল ২১ বলে ৩ চারের মারে ২২ রান করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে একটি করে উইকেট পান মিচেল স্টার্ক, জশ হ্যাজেলউড, অ্যাশটন অ্যাগার, অ্যাদাম জাম্পা ও অ্যান্ড্রু টাই। 

এর আগে টাইগারদের বোলিংয়ের সামনে হাঁসফাঁস করতে থাকে ক্যাঙ্গারুরা। টানা দুই টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই টস ভাগ্য গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে। তবে প্রথমটিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া ম্যাথু ওয়েড বুধবার টস জিতে নেন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এই ম্যাচেও ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি সফরকারীদের। শেষটা তো একেবারেই নয়। ৭ উইকেটে হারিয়ে ১২১ রানের বেশি অজিরা করতেই পারেনি। 

নাসুম আহমেতের ওভারে দুই চার মারা অ্যালেক্স কেয়ারিকে বেশিক্ষণ টিকতে দিলেন না মেহেদি হাসান। এই অফ স্পিনারের বলে মিড অনে ক্যাচ নিলেন নাসুম।অফ স্টাস্পের বাইরে ফুল লেংথ বল লেগে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন কেয়ারি। ঠিক মতো পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে মিড অনে যাওয়া ক্যাচ মুঠোয় জমান নাসুম। দুই চারে ১১ বলে ১১ রান করেন কেয়ারি। অজিদের স্কোর তখন ১৩।  

পাওয়ার প্লে শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে উইকেট পেলেন মুস্তাফিজুর রহমান। দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দিলেন জশ ফিলিপিকে। শর্ট অব লেংথ ডেলিভারি সরে গিয়ে লেগে খেলতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। স্লোয়ার বল খেলতে পারেননি ব্যাটে। অনেকটা ভেতরে ঢুকে ছোবল দেয় স্টাম্পে। এক চারে ১৪ বলে ১০ রান করেন ফিলিপি।

মন্থর শুরুর পর দলকে টানলেন মিচেল মার্শ ও মইসেস হেনরিকস। তাদের ব্যাটে সিরিজে প্রথম পঞ্চাশ রানের জুটি পেল অস্ট্রেলিয়ার। অস্ট্রেলিয়ার জমে যাওয়া জুটি ভাঙলেন সাকিব আল হাসান। দারুণ এক ডেলিভারিতে মোইজেস হেনরিকেসকে বোল্ড করে দিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। সাকিবকে স্লগ করতে চেয়েছিলেন হেনরিকেস। কিন্তু বলে-ব্যাটে করতে পারেননি। এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্প; ভেঙে যায় ৫২ বল স্থায়ী ৫৭ রানের জুটি।

আক্রমণে ফেরা শরিফুল ইসলামের উপর শুরু থেকেই চড়াও হতে চেয়েছিলেন মিচেল মার্শ। তেড়েফুড়ে মারতে গিয়ে ঠিক মতো খেলতে পারেননি ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ক্যাচ গ্লাভসে জমান নুরুল হাসান সোহান।  ৪২ বলে পাঁচ চারে ৪৫ রান করেন মার্শ। প্রথম ম্যাচ একই স্কোরে ফিরেছিলেন তিনি। সফরকারীদের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ৯৯।

খানিক পর মুস্তাফিজের জোড়া আঘাত। চড়াও হতে গেলেন ম্যাথু ওয়েড। অফের দিকে সরে গিয়ে ফাইন লেগ দিয়ে খেলার চেষ্টায় হলেন বোল্ড। উপড়ে গেল স্টাম্প। ৭ বলে ৪ রান করেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। পরের বলে মিলে অ্যাশটন অ্যাগারের উইকেট। গুড লেংথ বল কাট করতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তার প্রত্যাশার চেয়ে বাড়তি লাফিয়ে ও ভেতরে ঢুকে গ্লাভস ছুঁয়ে জমা পড়ে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে। মুস্তাফিজের হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেন মিচেল স্টার্ক।

শরিফুল ইসলামের বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন অ্যাশটন টার্নার। বাঁহাতি পেসারের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি উড়িয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন টার্নার। টাইমিং হয়নি একেবারেই। একটু সরে গিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান মাহমুদউল্লাহ। ৭ বলে ৩ রান করেন টার্নার।

বাংলাদেশের পক্ষে ২৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২৭ রান দিয়ে ২ উইকেট পান শরিফুল ইসলাম। মেহেদী হাসান ৩ ওভারে ১২ ও সাকিব ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে একটি করে উইকেট নেন।