• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২১, ০৫:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২৬, ২০২১, ০৫:০৫ পিএম

লিটন-মুশফিকে হাসলো বাংলাদেশ    

লিটন-মুশফিকে হাসলো বাংলাদেশ    

মাত্র ৪৯ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ যখন চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনেই অলআউট হওয়ার প্রহর গুণতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ, তখনই মুশফিক আর লিটনের রেকর্ড ২০৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি বাংলাদেশকে চালকের আসনে বসিয়ে দিনটা পার করিয়ে দিলেন। 

পাকিস্তানের বিপক্ষে নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেলেন লিটন দাস। একইসঙ্গে তিনি পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে গড়েছেন রেকর্ড জুটি। আলোক স্বল্পতার কারণে ৫ ওভার আগেই শেষ হওয়া প্রথম দিনে টাইগারদের স্কোর ৪ উইকেটে ২৫৩ রান। 

২২৫ বল খেলে সেঞ্চুরি পাওয়া লিটন ১১ চার ও ১ ছক্কার মারে ঠিক ১১৪ এবং মুশফিক ১৯০ বলে ১০ চারের মারে ৮১ রানে অপরাজিত থেকে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।  

চা বিরতির পুরো সময় জুড়ে লিটন ড্রেসিংরুমে ফেরেননি, হয়ত ফিরতে চেয়েছেন নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়ে। তাই তো উইকেটে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে এসে আবারো বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম লাগোয়া নেটে ব্যাটিং কোচের আর্মার বিপক্ষে ব্যাট করেছেন চা পানের বিরতি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত।

শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) পাকিস্তানের বিপক্ষে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকরা। টস জিতে বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করতে নামেন সাদমান ইসলাম ও সাইফ হাসান। প্রথম ওভারেই শাহিন আফ্রিদির মুখোমুখি সাদমান। তার ওভারটি দেখেশুনে খেলেন এই ওপেনার। তবে প্রথম ওভারেই আউট হতে পারতেন তিনি। শাহিনের প্রথম ওভারে সাদমানের ব্যাটের কানায় লেগে তালুবন্দী করেন উইকেটকিপার রিজওয়ান। কিন্তু কেউ আবেদন না করায় প্রথম ওভারেই বেঁচে যান সাদমান।
দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলীকে চার মেরে বাংলাদেশের রানের খাতা খোলেন সাইফ। দুই ওপেনার মিলে ভালো শুরুর আভাসই দিচ্ছিলেন। কিন্তু ইনিংসের পঞ্চম ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদির করা বাউন্সার সামলাতে গিয়ে আবিদ আলির হাতে ক্যাচ তুলে দেন সাইফ হাসান। আউট হওয়ার আগে করেন ১৪ রান।

দলীয় ৩৩ রানে হাসান আলীর বলে এলবিডাব্লিউ হলেন সাদমান ইসলাম। পাকিস্তানের আবেদনে আউটের সিদ্ধান্তে দিলে রিভিউ নিয়েছিলেন বাংলাদেশের ওপেনার। কিন্তু উইকেট বাঁচাতে পারেননি। ২৮ বলে ১৪ রান করেন সাদমান। তিনটি চার ছিল তার ইনিংসে। দলীয় অধিনায়ক মুমিনুল হক মাত্র ৬ রানেই ফেরেন প্যাভিলিয়নে । আর শান্তর সংগ্রহ ১৪ রান। 

ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর দলটাকে তো খাঁদের কিনারা থেকে টেনে এনেছেন মুশফিক আর লিটন। দুজনে মিলে শাহীন আফ্রিদি-হাসান আলীদের পেস এবং সাজিদ খান-নুমান আলীর স্পিন সামলেছেন শুরু থেকেই। ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে থাকেন স্বভাবসুলভ সব দৃষ্টিনন্দন শটস।

লিটন ৬২ ও মুশফিক ৫৫ রান নিয়ে তৃতীয় ও শেষ সেশনের খাল শুরু করেন। তবে বিপদে হতে পারত ইনিংসের ৬৫তম ওভারে। ব্যক্তিগত ৬৭ রানে জীবন পান লিটন। আফ্রিদির করা বলে পুল করেন লিটন, বল সোজা মিড উইকেটে দাঁড়ানো সাজিদ খানের হাতে। কিন্তু তা লুফে নিতে ব্যর্থ হন সাজিদ। 

জীবন পেয়ে আর পেছনে ফিরে তাকাননি লিটন। ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। বাঁহাতি স্পিনার নুমান আলির করা ৭৮তম ওভারের তৃতীয় বলে মিড অফে ঠেলে দিয়ে ছুঁয়েছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার। যদিও ফিল্ডারের সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙলে রান আউটই হতে হতেন লিটনকে। পঞ্চাশ রানের মাইলফলক ছুয়ে উদযাপন না করলেও সেঞ্চুরির পর ব্যাটে তুলে সতীর্থদের অভিবাদনের জবাব দেন।

শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলী, নোমান আলী, সাজিদ খানরা হতাশায় মুষড়ে পড়েন লিটন-মুশফিকের ব্যাটের কাছে। বিশ্বমানের পাকিস্তানি বোলারদের যেন মাটিতে নামিয়ে আনলেন এই দু’জন। এতে অপেক্ষা বাড়ল অভিষেক হওয়া ইয়াসির আলী রাব্বির। প্রথম সেশন থেকে দিনের বাকিটা সময় প্যাড পরে বসে থাকতে হলো তাকে। যদিও আলোক স্বল্পতার কারণে নির্ধারিত সময়ের পাঁচ ওভার আগেই শেষ হয় প্রথম দিনের খেলা।

তৃতীয় ও শেষ সেশটিও স্বপ্নের মতো কাটল স্বাগতিকদের। সেশনে ২৬ ওভার ব্যাট করেন লিটন-মুশফিক। কোন উইকেট হারাতে হয়নি বাংলাদেশ দলের। দাপুটে ব্যাটিংয়ে দুজনের পার্টনারশিপ থেকে আসে অবিচ্ছেদ্য ২০৪ রান। যেখানে চট্টগ্রামে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিতে নাম তোলেন লিটন-মুশফিক। যা টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষেও সর্বোচ্চ।