• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০১৯, ০৩:০৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৯, ২০১৯, ০৩:২৯ পিএম

সড়কে বন্ধ হয়নি নৈরাজ্য

জাবালে নূরের বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের এক বছর

জাবালে নূরের বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের এক বছর
জাবালে নূর বাসের চাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীব- ফাইল ছবি

আজ ২৯ জুলাই। এদিনে ‘জাবালে নূর’ বাসের চাপায় রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীবের মৃত্যু ঘটে। দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়ে গেছে। যাদের মৃত্যুতে রাস্তায় নেমে ছিল তাদের সহপাঠিসহ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সড়কের সেই চিরাচরিত দৃশ্য বদলায়নি। বেপরোয়া বা বিশৃঙ্খলা চলাচল কোনোটাই বন্ধ হয়নি, অরাজকতা নৈরাজ্য। 

গত বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে কালশী ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে দ্রুত গতির জাবালে নূর বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর ওঠে যায়। এসময়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান দুইজন। আহত হন ১৫ জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ২৯ জুলাই রাতে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মিমের বাবা জাহাঙ্গীর আলম মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদী দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেখতে দেখতে এক বছর পার হয়ে গেলো মেয়ে হত্যার বিচার পেলাম না। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই জানি না, কি হবে। আমার মত আর কোন বাবা যেন সন্তান হারা না হয়। আমি তো এক সন্তান হারিয়ে লক্ষ লক্ষ সন্তান পেয়েছি। কিন্তু অনেকের সন্তান হারিয়ে যাচ্ছে এই সড়ক দুর্ঘটনায়। দক্ষতা, প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে আমাদের সন্তানদের হারাতে হচ্ছে। অদক্ষ চালকদের কারণে রাস্তায় আমার মেয়ের মত অনেকের তাজা প্রাণ ঝরছে। যারা আমার মেয়ের প্রাণ কেড়ে নিল আমি তাদের উপযুক্ত বিচার চাই। তাদের সর্বোচ্চ সাজা হচ্ছে এমনটাই যেন দেখে যেতে পারি। তা না হলে আমার মেয়ের আত্মায় কষ্ট পাবে। আমি অপেক্ষায় আছি।  

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগে গাড়ি চালাতাম। মেয়ে মরে যাওয়ার পর থেকে আর চালাই না। আর চালাবোও না। চলাফেরা করতে গেলে কেমন অস্বস্থি লাগে। কেমন কেমন যেন লাগে। কোন অপরাধ করেছি যে আল্লাহ আমার মেয়েটাকে নিয়ে গেছে।

দিয়ার মা রোকসানা বেগম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আমি যেভাবে কাঁদছি, আর কোনো মা যেন আর এভাবে না কাঁদে, আল্লাহর কাছে আমি এ দোয়াই করি। দেশবাসীর কাছে তিনি তার মেয়ের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।   

এ ঘটনার পরই শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছিল যে ইচ্ছে থাকলেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতে পারে। সেই ঘটনার পর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালকদের কারণে সড়কে নিরাপদভাবে চলাচল করতে পারছে না সাধারণ জনগণ। এটিই তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ট্রাফিক আইন মানার প্রবণতা কারো মাঝেই নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালকরা সড়ক দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর একারণেই সড়ক-মহ্সড়কে ঝরছে অসংখ্য প্রাণ।  

নিহত দিয়া ও রাজিবের স্বজনরা জানান, দিয়া ও রাজিবের মৃত্যুর পর সরব ছিল সব গণমাধ্যম। তখন সব মহল থেকেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তাগিদ দেয়া হয়। দুই পরিবারকে বিভিন্ন মহল থেকে আর্থিক অনুদান দিলেও দায়ীদের এখনো সাজা হয়নি।

তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম বলেন, মৃত দিয়ার বাবা জাহাঙ্গীর আলমের দায়ের করা মামলা ডিবি পুলিশ তদন্ত করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে। মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালতে বিচারাধীন। তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উত্তর ক্যান্টরমেন্ট জোনাল টিমের পরিদর্শক কাজী শরীফুল ইসলামকে জেরা করছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আগামী ২২ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তার জেরা শেষে আত্মপক্ষ শুনানি ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণা করবেন আদালত। সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ মামলার বিচারকাজ শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

প্রসঙ্গত, দাখিলকৃত চার্জশিটে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে মাছুম বিল্লাহর চালানো বাসটি ফ্লাইওভারের ঢালে রেলিং ও দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওই সময় যাত্রীরা বাসটি সাবধানে চালানোর জন্য চালক ও তার সহকারীকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা যাত্রীদের অনুরোধ রাখেননি।

মামলায় কারাগারে আছেন- জাবালে নূর পরিবহনের বাসচালক মাসুম বিল্লাহ, জোবায়ের সুমন, মোজাহাঙ্গীর আলম, চালকের সহকারী মো. এনায়েত হোসেন। অপর আসামি চালকের সহকারী মো. আসাদ কাজী পলাতক রয়েছেন। আসামি জাবালে নূর পরিবহনের বাসমালিক মো. শাহদাত হোসেন আকন্দের মামলার অংশের কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

এইচএম/টিএফ

আরও পড়ুন