• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : মার্চ ২৪, ২০১৯, ০৯:২৬ এএম

জীবনের চাকা থমকে যাচ্ছে জবি শিক্ষার্থী রুবিনার

জীবনের চাকা থমকে যাচ্ছে জবি শিক্ষার্থী রুবিনার

জীবনের চাকা থমকে যাচ্ছে রেলে দুই পা কাটা পড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুবিনা আখতারের। কৃত্রিম পা লাগানো হলেও তার ওজন বেশি হওয়ায় হাঁটতে পারে না সে। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক তাকে চাকরি দেওয়ার যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তারও কোন বাস্তবায়ন হয়নি। রুবিনার স্বপ্ন ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে সরকারি চাকরি নেবেন কিন্তু এখন পড়ালেখাই বন্ধ তার। তার শারীরিক অবস্থার কারণে তার পক্ষে একা ঢাকায় থাকা সম্ভব নয় তাই বাড়িতে চলে গেছেন। এখন পড়াশোনা করাই অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

গত বছরের ২৮ জানুয়ারি কমলাপুর রেল স্টেশনে দুই পা হারিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে দরিদ্র পরিবারের ভবিষ্যৎ। সেদিন টিউশনি শেষ করে ঢাকা থেকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য কমলাপুর স্টেশন যান রুবিনা। ছয় নম্বর প্লাটফর্ম থেকে পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মে যেতে রেললাইন পার হওয়ার সময় ইঞ্জিনে কাটা পড়ে দুই পা। রুবিনার ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে এ পর্যন্ত দশ লাখ টাকার ওপরে ব্যয় হয়েছে। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ছাড়াও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং বিভিন্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় এই টাকা উঠেছে। তবে জীবনের চাকা সচল করতে আরেকটু সহযোগিতা প্রয়োজন তার।

রুবিনার বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ থানার শান্তিনগর গ্রামে। পিতৃহারা পরিবারে দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রুবিনা মেজ। বড়বোন প্রতিবন্ধী হওয়ায় মায়ের সঙ্গে বাড়িতেই থাকেন সে। ছোট ভাই রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

স্কুলজীবন থেকেই রুবিনা উপবৃত্তি আর টিউশনির টাকায় লেখাপড়া করতেন। স্থানীয় শান্তিনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও কালীগঞ্জ মহাবিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাস করেন। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ পান। কোচিং না করেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান কিন্তু এক বছর সময় নষ্ট হবে ভেবে ভর্তি হননি। স্বপ্ন দেখেছিলেন তাড়াতাড়ি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে ছোট ভাইকে উচ্চশিক্ষিত করে গড়ে তুলবেন। 
দুর্ঘটনার পর সহপাঠীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তার চিকিৎসার দাবি জানায়। আর সে সময়কার রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। এবং তার পাশাপাশি সে সুস্থ হলে রেল মন্ত্রণায়ে চাকরির দেওয়ার আশ্বাসও দেন।
এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের ১৫ এপ্রিল রুবিনাকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। সে সময় কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য নগদ আড়াই লাখ টাকা তুলে দেন। এ ছাড়াও রুবিনার পরিবারকে আরও ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এর দুই দিন পর ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। সেখানে চার থেকে পাঁচ মাস হাঁটা চলার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় রুবিনাকে। এক বছর চিকিৎসা নেওয়ার পর রুবিনা এখন তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। 

রুবিনা দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘এখন মোটামুটি সুস্থ অনুভব করছি। তবে এখনো পুরোপুরি হাঁটা-চলা করতে পারি না। আমাকে যে কৃত্রিম পা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলো অনেক ভারী। যার জন্য চলাফেরা করাটা অনেকটাই কঠিন। হালকা পা লাগালে এতদিন ভালোভাবে হাঁটতে পারতাম। কৃত্রিম পা লাগানোর সময় আমি তাদের বলেছিলাম হালকা পা লাগানোর জন্য। কিন্তু তারা টাকার জন্য কমদামি পা লাগিয়েছে।’

তিনি বলেন ‘সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক সুস্থ হওয়ার পর রেল মন্ত্রণালয়ে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন। চাকরিটা হলে আমি আবার ঢাকায় গিয়ে লেখাপড়াটা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু তিনি আর মন্ত্রী না থাকায় চাকরি পেতে বিলম্ব হচ্ছে। এখন ঢাকায় আমার পক্ষে একা চলাচলা করা সম্ভব না। আমার চলাফেরার জন্য সহযোগী হিসেবে একজন লোক দরকার এবং আলাদা বাসারও দরকার। আর এগুলোর ব্যবস্থা করতে হলে অনেক টাকার প্রয়োজন। যা আমার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।’ 

কেএসটি