• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২২, ২০১৯, ০৩:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২২, ২০১৯, ০৩:০৭ পিএম

‘নারীর গৌরবগাঁথাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান’

‘নারীর গৌরবগাঁথাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান’
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী- ছবি: জাগরণ

ইতিহাসে নারীদের গৌরবগাঁথাকে সামনের দিকে সমৃদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ইতিহাসবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শনিবার (২২ জুন) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তন বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের ৪৯তম বার্ষিক আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। 

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। ‘ইতিহাসে নারী: দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গ’- এই আলোচ্য বিষয়কে সামনে রেখে এবারের সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ।

শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘নারীদের সফলতার ইতিহাস, গৌরবের ইতিহাস, প্রতিবাদ এবং সংগ্রামের ইতিহাসকে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং তা ধারণ করতে হবে। ইতিহাসে নারীদের অবদান নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণা করলে অনেক নারীর অবদানের কথা উঠে আসবে যাদের আমরা চিহ্নিত করতে পারিনি। তাদের আমাদের অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে। এসময় তিনি ইতিহাসে নারীদের গৌরবগাঁথাকে সামনের দিকে সমৃদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ইতিহাসবিদদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘রাজনীতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি প্রত্যেকটি বিষয়ই একজন নারীর জীবনকে প্রভাবিত করেছে। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা দেখতে পাই ঠিক তেমনিভাবে একজন নারীকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। এর যেমন ‘ইম্প্যাক্ট’ রয়েছে আবার ‘এফেক্ট’ও রয়েছে। আমরা যখন ইতিহাসে একজন নারীকে বিশ্লেষণ করবো, তখন অবশ্যই এই প্রত্যেকটি বিষয় আমাদের দেখতে হবে যে, সামগ্রিকভাবে এসব বিষয় একজন নারীকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে। অনেক নারীই হয়তো ইতিহাসের লেখনিতে নেই, ইতিহাসের কালাবর্তে বিলীন হয়ে গেছেন। যদিওবা তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে নারীকে বিশ্লেষণ করলে আমাদের অনেক বৈষম্য, বঞ্চনা, পশ্চাদপদতার কথা মনে করতে হবে। তবে সবচেয়ে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণার জায়গাটি হলো, সকল বাঁধা অতিক্রম করে নারী কিন্তু তার সফলতা এবং জয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন। আমি মনে করি ইতিহাসে নারী তার জয়ের গল্প রচনায় চিরসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’

সম্মেলনে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নারীরা সকল ক্ষেত্রেই নিজেদের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, অর্থনীতি, কৃষি সকল ক্ষেত্রে নারীদের অবদান রয়েছে। ক্ষণা তার বচনের মধ্য দিয়ে আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গী, প্রীতিলতা আমাদের প্রতিবাদী হতে অনুপ্রাণিত করে ও আত্মত্যাগে সাহসী করে তোলে। এছাড়াও আমাদের আরো অনেক প্রাতঃস্মরণীয়া আছেন, যারা এদেশের ইতিহাসে অবদান রেখেছেন। এদেশের নারীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে পেছনে থেকে অবদান রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধে নারীরা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেছেন, আহার যুগিয়েছেন, সাহস যুগিয়েছেন। আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এভাবেই নারীরা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। তবে আমাদের সেই ইতিহাস সব সময় অবহেলিত থেকে গেছে। ইতিহাসে  নারীদের এই অবদান যথাযথভাবে তুলে ধরতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের মধ্যে দ্বৈততা রয়েছে। একদিকে নারী মা এবং দেবী অন্যদিকে নারীর সামাজিক যে অবস্থান আবার ভিন্ন। এই দ্বৈততার একটা অবসান প্রয়োজন। রাজনীতিতে সিদ্ধান্ত  গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ যত বাড়বে, প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন সমতার জায়গায় প্রতিটি  ক্ষেত্রে আসবে ততই এই দ্বৈততা ঘুচে যাবার পথ তৈরি হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাংবিধানিকভাবে নারী-পুরুষ সমতার বিধান প্রণয়ন করেছিলেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার দর্শন অনুসরণ করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর উন্নয়নে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল।’

উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে নারীদের বর্তমান যে অর্জন, সেটিই আমাদের এক ধরনের ইতিহাস। সেটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হলো আমাদের ইতিহাসবিদদের বড় কাজ। এসময় তিনি এই সম্মেলন থেকে উপস্থাপন করা সকল গবেষণা প্রবন্ধ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারীদের অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এর আগে জাতীয় সংগীতের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারসহ এদেশের বিভিন্ন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আত্মদানকারীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ নেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সম্মেলনে অতিথিরা বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের ইতিহাস চর্চা’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকগণ। এছাড়াও দিনব্যাপী এ আয়োজনে বাংলাদেশ ও ভারতের ইতিহাসবিদগণ ‘ইতিহাসে নারী: দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এমআইআর/টিএফ