• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৬:১১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৬:২৪ পিএম

ঢাবির জিয়া হল

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) রাজনৈতিক প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রথম বর্ষের ২৫ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।

শনিবার (১৩ জুলাই) দিবাগত রাতে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। 

হল সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের কর্মসূচি ছিল। সেই প্রোগ্রামে প্রথম বর্ষের কিছু ছাত্র টিউশনি, ক্লাস ও ব্যক্তিগত কাজ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এ কারণে ওই দিন রাতে প্রথম বর্ষের সব ছাত্রকে গেস্টরুমে ডাকে দ্বিতীয় বর্ষের তথাকথিত ‘পলিটিক্যাল ভাইরা’। এ সময় যারা প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিল না, তাদেরকে রাতে রুমে ঘুমাতে নিষেধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি তাদের রুমমেটদেরও বলে দেয়া হয়- তারা যাতে রুমে ঢুকতে না পারে। কিন্তু বড় ভাইদের নিষেধ অমান্য করে সেসব ছাত্রদেরকে রুমে ঘুমাতে দেয় তাদের রুমমেটরা।

এ ঘটনায় নেতাদের নির্দেশ অমান্য করা ও প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে শনিবার রাতে হলের ২১২ নম্বর রুমে ১ম বর্ষের ২৫ শিক্ষার্থীকে লোহার রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, মারধরের সময় মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোলেমান রনি, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের মাহমুদুল হাসান, স্বাস্থ্য অর্থনীতির রুবেল হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের সাফওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের অনুসারী।

এ সময় নির্যাতনের মাত্রা সহ্য করতে না পেরে সমাজবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বড় ভাইদের আপত্তিকর গালি দিয়ে ফেলে। এ অপরাধে তাকে আলাদা করে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে দ্বিতীয় দফা মারধোর করা হয়। এ সময় তাকে শিবিরের পেইজে জোরপূর্বক লাইক দিতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

অন্যদিকে, সাংবাদিকরা খবর পেয়ে চলে আসায় দ্বিতীয় বর্ষের পলিটিক্যাল ছাত্ররা রুম থেকে রড, স্ট্যাম্প সরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এছাড়া মনির এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীকে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে নিয়ে গিয়ে দেড় ঘণ্টা আটকে রেখে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। এ সময় তারা যাতে সাংবাদিকদের সামনে কিছু স্বীকার না করে সে নির্দেশ দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

এরপর সাংবাদিকরা ও জিয়া হল প্রভোস্ট তাদের দু’জনকে রাত আড়াইটার দিকে খুঁজে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ভয়ে সবকিছু অস্বীকার করে। 

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জিয়া হলের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, দ্বিতীয় বর্ষের বড় ভাইরা আমাদের গেস্টরুমে নিয়মিত শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। এর মধ্যে রনি, রুবেল, মাহমুদ, ইমরান ও সাফওয়ান নিয়মিত আমাদের গায়ে হাত তোলে। গতকাল গেস্টরুমে তারা আমাদের সবাইকে রড, বাঁশ, স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়েছে। মনির বড় ভাইদের নির্যাতনের শিকার হয়ে ভুলে গালি ফেলায় তাকে মেরে গুরুতরভাবে আহত করা হয়েছে। আরেকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ ঘটনার পর বড় ভাইরা আমাদের রুমে এসে সাংবাদিকদের সামনে কিছু বলতে নিষেধ করে দিয়েছে। আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।

ঘটনায় অভিযুক্তরা নিজেদের মুঠোফোন বন্ধ রাখায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তারা সবাই হল সংসদের এজিএস ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের পদপার্থী আবিরের অনুসারী। এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে এর সঙ্গে জড়িতদের নিজে বহিষ্কারের জন্য সুপারিশ করবেন বলে জানিয়েছেন আবির।

জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনকে এ ব্যাপারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. জিয়া রহমান রাতে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এ ঘটনার তদন্তের জন্য হলের শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ঘটনার সত্যতা যাচাই করবো। কেউ অপরাধ করে থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমআইআর/একেএস

আরও পড়ুন