• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০১৯, ০৯:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১১, ২০১৯, ০৯:৪২ পিএম

প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত বুয়েটে আন্দোলন চলবে

প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান না হওয়া পর্যন্ত বুয়েটে আন্দোলন চলবে
বুয়েটের ভিসি ড. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা - ছবি : কাশেম হারুন
প্রশাসনিক কার্যক্রম চলবে, একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবির প্রায় সবটুকু মেনে নেয়ার আশ্বাস দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকাল থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আলোচনা শেষে রাত ৮টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন।  

বুয়েট অডিটোরিয়ামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনাকালে উপাচার্য বলেন, ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলে তাদের সকল দাবি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য করার জন্য তিনি ছাত্রদের আন্তরিক সহযোগিতা চান।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি, আগামী ১৪ তারিখের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ রাখতে হবে। বুয়েট কর্তৃপক্ষকে তারা বলছেন, আমাদের যেসব দাবি মেনে নিয়েছেন এসব দাবি যথাযথ প্রয়োগ হলেই মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ফাহাদ হত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি পরীক্ষা নিলে ফাহাদের রক্তকে অপমান করা হবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আবরার ফাহাদের লাশের ওপর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন ছাত্র ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই। মেনে নেয়া দাবিগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন না করে ভর্তি পরীক্ষা কোনোভাবেই অনুষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না। প্রতিশ্রুতি যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

আলোচনার শুরুতে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চান বুয়েটের ভিসি। তিনি বলেন, আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করছি। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও। তিনি জানান, আবরারের পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। মামলার খরচ বুয়েট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। বিচারকাজ দ্রুত শেষ করতে সরকারকে চিঠি দেয়া হবে।

এরপর তিনি ঘোষণা দেন নিজ ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার। সেই সঙ্গে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ও মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ১৯ শিক্ষার্থীকে বুয়েট থেকে সাময়িক বহিষ্কারেরও ঘোষণা দেন তিনি। তিনি জানান, এসব অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর তাদের চূড়ান্ত বহিষ্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এসময় শিক্ষার্থীরা বুয়েটের ভিসির কাছে জানতে চান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত স্থায়ী কি না? নাকি এ সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে আবার বদল হবে। এর প্রেক্ষিতে ভিসি সাইফুল ইসলাম ছাত্রদের বলেন, তার মেয়াদও তো স্থায়ী নয়। 
 
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ড. মিজানুর রহমান আন্দোলনকারী ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, আগামী ১৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আছে। সেই পরীক্ষাটি তোমরা সুষ্ঠুভাবে নিতে সুযোগ দাও। তোমাদের আন্দোলন চলুক। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। 

এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রশাসনিক কার্যক্রম চলতে পারে, তবে ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। 

ছাত্রদের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ড. মিজান আবার বলেন, তোমরা কেন ভর্তি পরীক্ষাকে জিম্মি করছ? 

শিক্ষার্থীরা কিছুক্ষণ নীরব থেকে সমস্বরে শ্লোগান দিয়ে ওঠেন, আমাদের আন্দোলন চলবে। ‘স্যার’রা অডিটরিয়াম থেকে চলে যেতে পারেন। 
এরপর রাত ৮টার দিকে ভিসি সাইফুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষকরা মিলনায়তন থেকে একে একে বের হয়ে যান।

শিক্ষকরা বের হয়ে যাওয়ার পর আন্দোলনকারী ছাত্ররা মিলনায়তন থেকে বের হয়ে বুয়েটের শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা দাবি আদায়ের সপক্ষে আবারও শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করতে থাকেন পুরো বুয়েট ক্যাম্পাস। 
 
আন্দোলনকারীদের শ্লোগান ছিল- ‘ফাঁসি ফাঁসি, ফাঁসি চাই, হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই’, ‘খুনিদের ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘এক আবরার কবরে, লক্ষ আবরার বাইরে’, ‘ফাঁসি ছাড়া যাবো না’, ‘বহিষ্কার, বহিষ্কার, খুনিদের বহিষ্কার’, ‘শিক্ষা সন্ত্রাস এক সাথে চলে না’। 

বাংলাদেশের ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি দেয়ার চুক্তির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

এরপর, আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট ক্যাম্পাস।

এইচএম/ টিএস/ এফসি 

আরও পড়ুন