• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২০, ১০:৩৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৯, ২০২০, ১০:৩৭ এএম

‘দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে তরুণসমাজই মূল চালিকাশক্তি’

‘দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে তরুণসমাজই মূল চালিকাশক্তি’

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচক পরিবর্তনে তরুণসমাজই মূল চালিকাশক্তি।’

বুধবার (৮ জানুয়ারি) বেলা ৩টায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। উদ্বোধনের পর রাষ্ট্রপতি ও সমাবর্তন বক্তাকে সমাবর্তন স্মারক দেয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার পর রাষ্ট্রপতি সমাবর্তনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। 

সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিচর্চা ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি দেশ ও বিদেশে কর্মক্ষেত্রে শাবির গ্র্যাজুয়েটরা শ্রেষ্টত্ব অর্জনের মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে আনছে। দারিদ্র্য নিরসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। বিশ্ব দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এসময় গ্রাজুয়েটদের পাশাপাশি উপস্থিত অতিথিবৃন্দের কাছে ফরমালিনমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ফরমালিনের কারণে বর্তমানে দেশে ক্যান্সার সহ অন্যান্য মরণঘাতি রোগ বেড়ে যাচ্ছে, যার দায়ভার আমরা কেউই এড়াতে পারি না।

মো. আবদুল হামিদ বলেন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় তরুণদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি চাকরি বা অন্য চাকরির পিছনে মনোনিবেশ না করে উদ্যোক্তা হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে তিনি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রী, পিএইচডি ও স্বর্ণপদক দেন।

পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রই এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নিজেদের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছে। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর নতুন এই বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত যে কোনো অসামর্থ্য দেশকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নিরন্তর গবেষণা। নিত্য নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও তার প্রসারের ওপরেই নির্ভর করে দেশের সমৃদ্ধি। তথ্য প্রযুক্তিতে সাক্ষমতার ফলেই উন্নয়নকে আজ দেশের অপামর জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে তোমরা আরো দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি। 

রাষ্ট্রপতি এর আগে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার যিয়ারত করেন। সিলেটের রাস্তা-ঘাটের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিদেশের রাস্তা-ঘাটে থুথু ফেলতেও মানুষ ভয় পায়, অথচ আমাদের দেশে মানুষ নোংরা করার আগেও একবারও ভাবে না, তাদের পরিষ্কারের মানসিকতা হারিয়ে গেছে। শাহাজালাল ও শাহপরানের এ পবিত্র ভূমির রাস্তাগুলো ঘুরে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে, ধারণা করেছিলাম রাস্তা আরো পরিষ্কার থাকবে। এখানে সেখানে পলিথিন, কলার বাকল, কাগজ পড়েছিল। এক্ষত্রে তিনি জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব নিতে বলেন। 

এছাড়া তিনি সিলেটের ছাতকের কমলার স্বাদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, সব জায়গায় এখন শুধু চীনের কমলা পাওয়া যায়। যা দেশে আনতে আড়াই মাস লাগে। এসবে ফরমালিন দেয়া থাকে। শুধু ফলমূল না শাকসবজি, মাছ, মাংস সবকিছুতেই ফরমালিন। এসব খাওয়ার ফলে দেশে ক্যান্সারের রোগী প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০/৩০ বছর আগেও এত ক্যান্সারের রোগীর কথা শুনতাম না। যারা বেশি লাভবান হওয়ার জন্য যারা ফরমালিন ও কেমিক্যাল দিচ্ছে তারা গণহত্যা করছে। এদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার এবং সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০০০-০১ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ৬ হাজার ৭৫০ জন গ্র্যাজুয়েটের ডিগ্রি ঘোষণা করেন রাষ্ট্রপতি। তাদের মধ্যে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য ২০ জন শিক্ষার্থীকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম।

সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, পাঠ্য বইয়ের বাইরে অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহের কারণে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হচ্ছে না। মেধার বিকাশ সাধনের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করতে পারলে শিক্ষার্থীরা আরও অনেকদূর অগ্রসর হতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, জ্ঞানকে আমরা সনদের ওজনে মাপতে শুরু করেছি, তার উপর গবেষণাকে পশ্চিম অনুসৃত পদ্ধতি ও প্রকাশনা শর্তের অধীনে এনে দেশীয় জ্ঞানকে গৌণ অবস্থানে ঠেলে দিয়েছি। এখন বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যাললেয় গবেষণা সাধারণত চাকরিতে স্থায়ী হওয়া এবং পদোন্নতি পাওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত। এর একটি কারণ আমাদের উচ্চশিক্ষার সামনে পিছনে পাহাড়ের মত দাড়িয়ে থাকা বাজার। এই বাজারের ভেতর চাকরির বাজার আছে, যার সবচেয়ে কাঙ্খিত রূপটি সরকারি চাকরি, আরও আছে কর্পোরেট বাজার, আছে মিডিয়া ও নানান পরিষেবাসহ ছোটোবড়ো অনেক বাজার। প্রাথমিক পর্যায় থেকে আমরা মুখস্ত বিদ্যায় পারদর্শী পরীক্ষার্থী তৈরি করছি। 

কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বা পাঁচ বছর মেয়াদী বাজার বান্ধব কোনো শিক্ষাকার্যক্রম শেষ হতে না হতে বাজার বদলে যায়, তাতে প্রবেশের শর্তগুলোও পাল্টে যায়। বাজারে শর্তগুলো সম্পর্কে আমাদের আগে থেকে কোন ধারণা থাকে না, ফলে শিক্ষার্থীদের সেইভাবে তৈরি করতে পারি না। 

শিক্ষার ন্যায়নিষ্ঠতা ও মানবিকতা এই দুটি উদ্দেশ্যকে ক্রমাগত আমরা অবহেলা করে আসছি। শিক্ষার্থীদের সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। ফলে, আমাদের সমাজ থেকে সুনীতি চলে যাচ্ছে। সমাজের সংঘটিত বিভিন্ন অন্যায়কে স্বাভাবিক বলে মেনে নিচ্ছি। সমাজ যত বস্তুগত উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তত তার নীতিনিষ্ঠতায় ভাঙ্গন ধরছে। 

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন- শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। এসময় আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

টিএফ