• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৬:৩১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ১৫, ২০২০, ০৭:৫০ পিএম

সাংবাদিকদের মূর্খ বললেন জবি উপাচার্য

সাংবাদিকদের মূর্খ বললেন জবি উপাচার্য
জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রক্টর মোস্তফা কামালের নিয়োগ ও পিএইচডি জালিয়াতির সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের মূর্খ বললেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। আর মোস্তফা কামালের পিএইচডি জালিয়াতির সংবাদকে মিথ্যা অ্যাখ্যা দিয়ে দৈনিক যুগান্তর, ইনকিলাব পত্রিকা ক্যাম্পাসে পুড়িয়েছে মোস্তফা কামালের অনুসারী জবি ছাত্রলীগের একাংশ ও জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জমান আসাদের অনুসারীরা।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মিছিল করে রফিক ভবনের সামনে পত্রিকা পোড়ায় তারা। এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রক্টরের নিয়োগ ও পিএইচডি ডিগ্রির অনিয়মে প্রশাসনের স্পষ্ট ব্যাখ্যা ও জরুরি তদন্তের দাবি জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল ঐক্যজোট ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। আর জালিয়াতকারীর পক্ষ নিয়ে উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের সাংবাদিকদের মূর্খ বলায় প্রতিবাদ জানিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। 

বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন জানেন না এমন মূর্খ সাংবাদিকরাই এধরনের সংবাদ লিখতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি এর নিয়ম নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের একাডেমিক কাউন্সিলের নিয়ম ছিল ‘যদি কোনো বিভাগের শিক্ষক ওই বিভাগেই পিএইচডি করেন তবে তিনি ২ বছর পরেই পিএইচডি জমা দিতে পারবেন। সে নিয়ম অনুসারে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হাফিজুল ইসলামকে পিএইচডি দেয়া হয় ৩৭তম একাডেমিক কাউন্সিলে। এর ১ বছর পর একই নিয়মে মোস্তফা কামালকে পিএইচডি ডিগ্রী দেয়া হয়। এ নিয়মটি শুধু মাত্র ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের জন্যই প্রযোজ্য। তাছাড়া বর্তমান প্রক্টর মোস্তফা কামালকে পিএইচডি দেয়া হয়েছে ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিলে। সুতরাং তার পিএইচডি যাবতীয় নিয়ম মেনেই দেয়া হয়েছে।

জবি ছাত্রলীগের একাংশ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জমান আসাদের অনুসারীরা বলেন, যুগান্তর ও ইনকিলাব পত্রিকাকে তারা জামাত ও বিএনপি এজেন্ট বলে দাবি করেন। তাদের অবস্থান প্রগতিশীল চিন্তার বিরুদ্ধে যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) প্রক্টর মোস্তফা কামাল- ছবি : জবি

বিবৃতিতে প্রগতিশীল ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৪ জানুয়ারি দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিক সহ অনলাইন পত্রিকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের গুরুতর অভিযোগের সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের প্রেক্ষিতে কোনো রকম স্পষ্ট ব্যাখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দেয়নি। উপরন্তু উপাচার্যের পক্ষ থেকে কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই অভিযোগ উড়িয়ে দেয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

প্রগতিশীল ছাত্রজোট নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রক্টরের মতো দায়িত্বশীল পদে অবস্থান করা একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনাকাঙ্ক্ষিত ও উদ্বেগজনক যা সমাজে শিক্ষকদের নৈতিক অবস্থানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ সময় তারা প্রক্টরের অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে স্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও স্পষ্ট প্রশাসনিক ব্যাখ্যা দাবি করেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোনায়েম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক তানজিম সাকিব এক যৌথ বিবৃতিতে প্রক্টরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগকে অনাকাঙ্ক্ষিত এবং উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করে প্রশাসন কর্তৃক অভিযোগকে আমলে নিয়ে অবিলম্বে সঠিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তদন্তকে নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার নিশ্চয়তা চেয়েছেন।

জবি সাংবাদিক সমিতির এক প্রতিবাদ বার্তায় সভাপতির হুমায়ুর কবির ও সাধারণ সম্পাদক লতিফুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি বস্তুনিষ্ঠতায় বিশ্বাসী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের যথাযথ প্রমাণ ও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে যাচাই করা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান তার নিয়োগ ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদানে অনিয়মের তদন্ত না করেই তার পক্ষে সাফাই গেয়ে উল্টো সাংবাদিকদের মূর্খ হিসাবে আখ্যায়ত করেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্ব্বোচ্চ জায়গা থেকে উপাচাযের্র এ বক্তব্যে সাংবাদিক সমাজ হতাশ এবং যা কোনোভাবেই আশা করে না।

জানা যায়, ২০১১ সালের ২৪ ডিসেম্বর শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচসিসে ১টিতে ১ম বিভাগ/ গ্রেডিং পদ্ধতিতে ১টিতে কমপক্ষে ৩.০০ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ১টিতে ১ম শ্রেণি অথবা গ্রেডিং পদ্ধতিতে ৩.৬০ থাকতে হবে। স্বীকৃত জার্নালে ১টি প্রকাশনা থাকতে হবে। এবং স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রার্থীদের ন্যূনতম ৩ বছরের শিক্ষকতায় অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। স্বীকৃত উচ্চতর গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

আর ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি আবেদনের যোগ্যতা দেখা যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) পিএইচডি রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত ৪ নম্বর ধারার ‘বি’ নং উপধারায় একজন থিসিস রেজিস্ট্রেশনের তারিখ হতে ৩ বছরের আগে পিএইচডি থিসিসি জমা দিতে পারবে না। 

পিএইচডি নীতিমালার ২ এর (২) উপধারায় বলা হয়েছে, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগের জন্য পিএইচডি করতে হলে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। আর গ্রেডিং পদ্ধতিতে ন্যূনতম ৩ দশমিক ২৫ সিজিপিএ থাকতে হবে। কিন্তু মোস্তফা কামালের সার্টিফিকেট থেকে দেখা যায় যে তার স্নাতক পর্যায়ে তার ফলাফল ২য় শ্রেণি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ফলাফলে তার অবস্থান ৯০জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯তম।

আর তার প্রাপ্ত নম্বর মোট নাম্বারের ৪৬ শতাংশ। আর মোস্তফা কামালের স্নাতক/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রার্থীদের ন্যূনতম ৩ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা যায় উনি ২০১০ সালের ৩১ মে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান,মানবিক ও ভাষা স্কুলে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি মোস্তফা কামালের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের আবেদন পত্রে দেখা যায় সেখানে তিনি তার স্নাতক ও স্নাতক পর্যায়ের অভিজ্ঞতায় ১ বছর ৭ মাস ২২ দিন উল্লেখ করেছেন। সহাকারী অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে ২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিলে মোস্তফা কামালের পিএইচডি থিসিস উত্থাপন হলে একাধিক ডিন ও জেষ্ঠ শিক্ষক তার বিরোধীতা করেন।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান তার নিজ ক্ষমতাবলে ৩ বছরের মধ্যে থিসিস জমা দেয়ার নিয়ম সংশোধন করে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ২ বছরের মধ্যে থিসিস জমা দেয়ার নিয়ম করেন। পরে ওই একাডেমিক কাউন্সিলে পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়। যা ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর ৭১ তম সিন্ডিকেট মিটিংয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। 


টিএফ