• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৯, ০২:০৮ পিএম

কারাগারে হামলা করে এটিবি প্রধানকে মুক্ত করতে চায় জঙ্গিরা

কারাগারে হামলা করে এটিবি প্রধানকে মুক্ত করতে চায় জঙ্গিরা
গেফতারকৃত জঙ্গিরা। ছবি: জাগরণ।

 

গোপনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এটিবি) নামের জঙ্গি সংগঠনটিকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছে জঙ্গিরা। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হলো, সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাকে মুক্ত করতে না পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে তারা মুক্ত করবে। সংগঠন প্রধানকে মুক্ত করার জন্য এরইমধ্যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন একটিভিস্ট, ব্লগারকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘টার্গেট এন্ড কিলিং‘ এর ভিকটিম করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি একটিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশে যুক্ত হয়ে, উক্ত গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যা চেষ্টা চলছে।

আজ শুক্রবার ( ১ জানুয়ারি) সকালে কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এসব তথ্য জানান কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। এর আগে এই টিমের সক্রিয় ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক জানান, দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ এবং অনলাইন এ্যাকটিভিস্টদের হত্যা চেষ্টার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪ সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব।

গত ২৮ জানুয়ারি র‌্যাব রাজধানীর আশুলিয়া থেকে এটিবির সক্রিয় সদস্য মোঃ আব্দুস ছোবহান ওরফে হাবিব (২৮) কে গ্রেফতার করে। তাকে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর ৬(২) এর (ঈ) ৮/৯/১০/১২ ধারায় আশুলিয়া থানার মামলা নং- ৮৪ এর মাধ্যমে ২৯ জানুয়ারি পুলিশের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

আসামির দেয়া তথ্য এবং মামলার ছায়া তদন্তের উপর ভিত্তি করে ৩১ জানুয়ারি রাত ২ টায় রাজধানী উত্তরা থেকে ৪ জন সক্রিয় সদস্যেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল।

গেফতারকৃতরা হলেন, মোঃ শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মোঃ আম্মার হোসেন (২০), মোঃ রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারী (২৪),
মোঃ রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলাম (২৪), মোঃ আব্দুল মালেক (৩১)। তাদের কাছ থেকে উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

    জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া উগ্রবাদী বই, মোবাইল ও ধারালো অস্ত্র। ছবি: জাগরণ।

জঙ্গিদের সম্পর্কে র‌্যাব জানায়,

মোঃ শাহরিয়ার নাফিস

গ্রেফতারকৃত মোঃ শাহরিয়ার নাফিস ওরফে মোঃ আম্মার হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় , সে ৭ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে দুই বছর বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। পরবর্তীতে পুনরায় পূর্বের হাইস্কুলে পড়াশোনা শুরু করে। ২০১৭ সালে অনলাইনে (ফেসবুক) আমানের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে এবিটিতে যোগদান করে। আমান তার নিয়ন্ত্রক।

আমানের নির্দেশনায় সে ৪ থেকে ৫ টি ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে প্রচার-প্রচারণা চালাতো ও জঙ্গি সদস্য সংগ্রহের কাজ করত। এভাবে সে ৭/৮ জনকে এবিটির সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। শাহরিয়ার এবিটির টার্গেট কিলিং মিশনের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনলাইনে বিভিন্ন একটিভিস্টদের উপর নজরদারি করা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার ছদ্মবেশে ফেসবুকে একটি গ্রুপে (নাস্তিক গ্রুপ) ঢুকে পরে। এরপর সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই গ্রুপের এক সদস্যকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এই মিশনে গ্রেফতারকৃত শাহরিয়ার ও অপর দুই সদস্যকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে একজন ধারালো অস্ত্রসহ এবং অপর সদস্য বরগুনা থেকে বগুড়া যায়। বগুড়া পৌঁছে তারা অনলাইনে ফোন করে উক্ত এ্যাকটিভিস্টকে সাক্ষাৎ করতে বলে। কিন্তু উক্ত ব্যক্তি সাক্ষাৎ না করায় তাদের মিশন সম্পন্ন হয়নি। তারপর তারা বগুড়া থেকে স্ব স্ব গন্তব্য স্থলে ফেরত যায়।

মো. রাসেল

গ্রেফতারকৃত মোঃ রাসেল ওরফে সাজেদুল ইসলাম গিফারীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ২০১৩ সালে এসএসসি পাশ করে একটি গামেন্টে চাকুরি নেয়। সে সময় সে ফেইসবুকে উগ্রবাদী পোস্ট ও ভিডিও দেখতো এবং অন্যদের সঙ্গে এ সম্পর্কে আলোচনা করত। ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ফেইসবুকের মাধ্যমে এটিবির নিয়ন্ত্রক আমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং আমান তাকে জঙ্গি সংগঠনে যোগদানে জন্য উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে সে ছদ্মবেশে একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত। মোঃ রাসেল এটিবির একটি অংশের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে। সে নিয়ন্ত্রকের নির্দেশনায় বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ, তাদের কাছে অর্থ সংগ্রহ ছাড়াও সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

মোঃ রবিউল ইসলাম

গ্রেফতারকৃত মোঃ রবিউল ইসলাম ওরফে নুরুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, সে ২০১০ সালে দাখিল পাশ করে। তারপর বগুড়া পলিটেকনিক্যাল থেকে ২০১৫ সালে ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। সে ২০১৮ সালে শাহরিয়ারের মাধ্যমে এটিবিতে  যুক্ত হন।

মোঃ আব্দুল মালেক

গ্রেফতারকৃত মোঃ আব্দুল মালেককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে প্রাইভেট গাড়ি চালক। সে ২০১৮ সালে রাসেলের মাধ্যমে এটিবিতে যুক্ত হন।

মুফতি মাহমুদ জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ থেকে জানা যায়, বর্তমানে গোপনে তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে উজ্জীবিত করার কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অন্যতম পরিকল্পনা তাদের সংগঠনের প্রধান জসিমউদ্দিন রহমানীকে কারাগার থেকে মুক্ত করা। যদি তারা তাদের নেতাকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুক্ত করতে না পারে, তাহলে কারাগারে হামলা করে হলেও জসিমউদ্দিন রহমানীকে মুক্ত করবে।

তিনি আরও জানান গ্রেফতারকৃতরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি এ্যাকটিভিস্ট গ্রুপে ছদ্মবেশে যুক্ত হয়ে, উক্ত গ্রুপের সদস্যদের চিহ্নিত করে হত্যার চেষ্টা করেছে। একটি জাতীয় পত্রিকায় বিবাহ সংক্রান্ত হাদিস নিয়ে কটুক্তি করায় উক্ত পত্রিকার সম্পাদককে তারা হত্যার পরিকল্পনা করে। কিন্তু উক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্বেই তাদেরকে আটক করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান র‌্যাবের মিডিয়া উইং পরিচালক।

আরআর/সাইসে