• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯, ০৫:০৫ পিএম

গর্ভাবস্থায় যে খাবার পরিহার করতে হবে

গর্ভাবস্থায় যে খাবার পরিহার করতে হবে

 

সাধারণ অবস্থায় মন চাইলেই যেকোনো খাবার ইচ্ছেমতো খাওয়া যায়, তবে গর্ভধারণ করলে খাদ্য গ্রহণে একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কিছু খাবার আছে যা সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হয়, আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো গর্ভস্থ শিশুর ভালোর জন্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হয়। 

সুতরাং, নিচের খাবারগুলো সম্পর্কে সচেতন হোন


পেঁপে

কাঁচা বা আধা কাঁচা পেঁপেতে উচ্চ পরিমাণে ল্যাটেক্স থাকে যা ইউটেরিন কন্ট্রাকশন ঘটায়, ফলে গর্ভবতী মায়েদের মিসক্যারেজ হতে পারে।

এছাড়া কাঁচা পেঁপেতে পাপাইন নামক এনজাইম থাকে যা গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকর। এই পাপাইনের কারণে গর্ভকালীন সময়ে বিষক্রিয়া এবং সন্তানের জন্মগত ত্রুটি পর্যন্ত হতে পারে।

তবে সবারই যে পেঁপেতে সমস্যা হবে এমন নয়। তবে গর্ভকালীন সময়ে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অবশ্যই কাঁচা বা আধা কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, বিশেষ করে যারা প্রথমবার মা হতে চলেছেন এবং যাদের পূর্বে মিসক্যারেজ হওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
  
তবে পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স এবং পাপাইনের পরিমাণ অনেকটা কম থাকে তাই পাকা পেঁপে গর্ভবতী মায়েদের জন্য অনেকটাই নিরাপদ। তবে গর্ভাবস্থার ১ম  তিন মাস  পর।


কাঁচা বা আধা সিদ্ধ ডিম

অনেকেই গর্ভকালীন সময়ে বাড়তি পুষ্টির আশায় কাঁচা ডিম অথবা ডিম খেতে পারেন না বলে আধা সিদ্ধ অথবা পোসড ডিম খেয়ে থাকেন যা অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে   পারে।

কেননা, কাঁচা ডিম স্যালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে আর এই অবস্থায় যদি ডিম ভালভাবে সিদ্ধ বা না ভেজে খাওয়া হয় তবে গর্ভবতী মায়েদের স্যালমোনেলা দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথা, জ্বর প্রভৃতি সমস্যায় ভুগতে পারেন যা গর্ভবতী মা এবং শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

সুতরাং, যখনই ডিম খাবেন, তা ভালভাবে সিদ্ধ বা ভেজে খান। আর কাঁচা ডিম দিয়ে তৈরি যেকোনো জিনিস যেমন মেয়োনেজ পরিহার করুন।
 

আনারস

আনারসে থাকা ব্রোলামিনের কারণে সারভিক্স সংকুচিত হয়ে যেতে পারে, যার ফলে সময়ের আগেই গর্ভপাত হতে পারে। তাই, গর্ভাবস্থায় আনারস এবং আনারসের তৈরি যেকোনো খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।


বেশি পরিমাণে অর্গান মিট

অর্গান মিট যেমন- লিভার, কলিজা, মগজ এবং জিহ্বা ভিটামিন বি-১২, আয়রন, ভিটামিন-এ এর ভালো উৎস হলেও গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। বেশি পরিমাণে অর্গান মিট গ্রহণ করলে উচ্চ মাত্রায় কপার এবং ভিটামিন এ গ্রহণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যার ফলে ভিটামিন-এ টক্সিসিটি এবং উচ্চ পরিমাণে কপার গ্রহণের ফলে গর্ভের সন্তানের জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

সুতরাং, পুষ্টিকর এই খাবারটি গর্ভকালীন সময়ে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য মাসে ১-২ বার খেতে পারেন।


সজিনা

সজিনা অনেকেরই খুব পছন্দের একটি খাবার। তবে গর্ভকালীন সময়ে পরিমিত পরিমাণে সজিনা গ্রহণ করা উচিত। কেননা, সজিনায় থাকা আলফা সিটেস্টোরল নামক উপাদান গর্ভপাত ঘটতে পারে। তাই গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি এড়াতে সীমিত পরিমাণে সজিনা খান। 
 

কাঁকড়া

বর্তমানে, খাবার হিসেবে কাঁকড়া বেশ জনপ্রিয়। তবে গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ নয়। কাঁকড়ায় উচ্চ পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে যার কারণে ইউটেরাস সকুচিত হয়ে ইন্টারনাল ব্লিডিং হতে পারে। ফলে ঘটতে পারে গর্ভপাত। সুতরাং, যত সুস্বাদু হোক আর খুব প্রিয় হোক না কেন গর্ভবতী অবস্থায় কাঁকড়াকে ‘না’ বলুন।


অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন 

চা, কফি, চকোলেট এবং সফট ড্রিঙ্কসে ক্যাফেইন থাকে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণ করলে কম ওজনবিশিষ্ট শিশু, ফিটাল গ্রোথ কম হওয়া এবং মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। এ কারণে, একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করার পরামর্শ দেয়া হয়।

গর্ভাবস্থায় সারাদিনে ১-২ কাপের বেশি চা বা কফি পান করা উচিত নয়, সেই সঙ্গে সফট ড্রিঙ্কস গ্রহণ সম্পূর্ণরূপে বাদ দিতে হবে।


সামুদ্রিক মাছ

সামুদ্রিক মাছ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হলেও, সামুদ্রিক মাছে উচ্চ পরিমাণে মার্কারি থাকায় গর্ভবতী মায়েদের সীমিত পরিমাণে সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করা উচিত। কেননা, অতিরিক্ত মার্কারি গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে।

সুতরাং, টুনা, সারডিন, ম্যাকারেল প্রভৃতি মাছ পরিহার করুন।


অপাস্তুরিত দুধের তৈরি খাবার 

অপাস্তুরিত বা কাঁচা দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার গর্ভবতী মায়েদের জন্য ক্ষতিকর। কেননা, এই খাবারগুলো লিস্টেরিয়া, ই-কোলাই এবং কমফাইলো ব্যাকটেরিয়া বহন করতে পারে। তাই, গর্ভবতী মায়েদের অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন এড়াতে সফট চিজ এবং যেসব খাবারে কাঁচা দুধ ব্যবহার করা হয় তা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে হবে।


ফাস্ট ফুড

গর্ভধারণের কিছুদিন আগে থেকেই চেষ্টা করুন বাইরের খাবার বা ফাস্ট ফুড পরিহার করতে। কেননা, এইসব খাবার তৈরি এবং দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করতে যে উপাদান ব্যবহার করা হয়, তা আপনার এবং আপনার সন্তান উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মা গর্ভকালীন সময়ে প্রায়ই জাঙ্ক ফুড খেয়েছেন তাদের সন্তানদের মধ্যে মানসিক সমস্যা তুলনামূলক বেশি।

সুতরাং, নিজের অনাগত সন্তানের সুস্থতার জন্য বাদ দিন সব অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস। 

উপরে উল্লিখিত সব খাবারেই যে সব গর্ভবতী মায়ের সমস্যা হবে এমন নয়। তবে গর্ভকালীন সময়ে একটু বাড়তি সাবধানতা প্রয়োজন। খাদ্যগ্রহণ বা অন্য যেকোনো বিষয়ে একটু অসাবধান হলে যেকোনো ধরনের গর্ভকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে।

তাই, উপরের খাবারগুলো সম্পর্কে নিজে সচেতন হোন এবং অন্যকেও সচেতন করুন।


লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড

এফসি