• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯, ০৫:৫১ পিএম

ঠাঁই নাই সমুদ্র শহরের কোথাও

ঠাঁই নাই সমুদ্র শহরের কোথাও
পর্যটননগরী কক্সবাজারে পর্যটকে ভরপুর। ছবি- জাগরণ

 

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই... ছোটো সে তরী আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত সোনার তরী কবিতার মতই সমুদ্র শহর কক্সবাজারের হোটেল মোটেল, গেস্ট হাউস, ফ্ল্যাট, আবাসিক ভবন, কটেজ কোথাও ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে কক্ষ খালি নাই। কবির তরী ভরা সোনার ধানে আর পর্যটননগরী কক্সবাজার ভরা পর্যটকে। ২১ ফেব্রুয়ারি ও সপ্তাহিক ছুটিসহ টানা তিনদিনের ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজারে প্রায় প্রতিদিনই ৫ লাখ পর্যটক অবস্থান করছেন।

পর্যটনে ভরপুর কক্সবাজার শহরের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে এভাবেই নিজের মনোভাব ব্যক্ত করেছে কক্সবাজার হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান কোম্পানি নাগু।

তার কথার সুরেই সুর মিলিয়ে একই সংগঠনের আবুল কাশেম বলেন, এবারের ২১ ফেব্রুয়ারিতে রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক এসেছে। বিগত ৫ বছরের কোন উৎসবে এত অতিথি কক্সবাজারে আসেনি।

পর্যটন সূত্র জানায়, শীতের শেষে বসন্তের শুরুতে হিম শীতলতার ছোঁয়া নিতে আসা পর্যটকে সরগরম হয়েছে সৈকত নগরীর বালিয়াড়ি ও পর্যটন স্পটগুলো। হোটেল-মোটেলগুলোতে ঠাঁই মিলছে না ভ্রমণপিপাসুদের। হোটেলে রুম না পেয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নেয় হাজারও পর্যটক। সন্ধ্যার পর থেকে কিছু হোটেলে বেশি দামে রুম নিয়ে উঠলেও অনেক পর্যটকেরই রাতযাপনের ব্যবস্থা হয়নি। এদিকে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু রাতে হোটেল-মোটেলে রুম না পেয়ে শহরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে অবস্থান নেয় হাজারও পর্যটক।

সৈকতে গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াড়িতে আসা আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা ঢেউয়ের সান্নিধ্য নিতে গোসলে নেমেছে। স্থানীয় পর্যটকরা বিচ চেয়ার কিংবা বালিতে বসে সুখ-দুঃখের অনুভূতি শেয়ার করছেন। আবার কেউ হাঁটছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

জানা যায়, টানা ছুটিকে কেন্দ্র করে সাগরের নীল জলরাশি ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন প্রায় ৫ লাখ পর্যটক। শহরের ৫ শতাধিকের বেশি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট, কটেজ এবং ফ্লাটের এখন ‘ঠাঁই নেই’ অবস্থা। পর্যটকরা সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা, ইনানী, হিমছড়িসহ ৬টি পয়েন্ট ছাড়াও ভ্রমণ করেছেন, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝর্না, রামুর বৌদ্ধ বিহার, রেডিয়েন্ট ফিশ ওর্য়াল্ড, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, সোনাদিয়া ও সেন্টমার্টিনসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে সমুদ্রের পাড় যেন উৎসবে পরিণত হয়েছে। কেউ রুম পেয়ে আনন্দে মেতে উঠলেও না পেয়ে হতাশ অর্ধলক্ষাধিক পর্যটক।

কক্সবাজার হোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতি মুখপাত্র কলিম উল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) থেকে কক্সবাজারে প্রায় ৫ লাখ পর্যটক অবস্থান করছে যা শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকব। এই তিনদিনে পর্যটন খাতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যবস্থা হবে।

পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০০ সালের শুরু থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে থার্টিফাস্ট নাইট, ইংরেজি বর্ষকে বিদায়-বরণ ও জানুয়ারির শীতকালীন ছুটির অবকাশ যাপনে কক্সবাজার আসতো লাখ লাখ পর্যটক। কিন্তু রামু ট্র্যাজেড়ির পর এ নিয়ম পাল্টে যায়। নানা আশঙ্কায় তখন থেকে থার্টিফাস্ট নাইট পালনে ধরা বাধা নিয়ম বেধে দেয় প্রশাসন। মৌসুমের এ সময়টা তাই আগের মতো আর জমে না। কিন্তু ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ইস্যুর পর হতে সারা বছরই দেশি-বিদেশি সাংবাদিক, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারি নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা মিলে সরবই রয়েছে পর্যটন জোনের সকল ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান। অনেক গেস্ট হাউস ও ফ্ল্যাট পুরো মাসের জন্য বুকিং নিয়ে অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছে এনজিও প্রতিষ্ঠান। হোটেলগুলো কমবেশি নিত্যদিন ব্যবসা করলেও বেশিরভাগ রুম খালি থাকত। তবে, সপ্তাহিক ছুটিসহ ভিন্ন ছুটি এক হলে পর্যটকে টৈ টম্বুর হয়ে উঠছে কক্সবাজার। তেমনি ভাষা দিবসের ছুটির সঙ্গে সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা কয়েকদিন জমজমাট সৈকত নগরী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার পর্যটন স্পটগুলো দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটকদের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিতে লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মেইন বিচসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে কয়েকটি টিম সার্বক্ষণিক কাজ করবে। মোটরসাইকেল নিয়ে সকাল ৮ থেকে রাত ৯ পর্যন্ত মোবাইল ডিউটিতে রাখা হয়েছে অপর টিম। এছাড়াও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা একাধিক টিমে বিভক্ত হয়ে মাঠে রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের একাধিক টিম সাগর পাড় ও পর্যটন এলাকায় কাজ করছে।

কেএসটি