• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০১৯, ০৩:২৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ২৩, ২০১৯, ০৫:৩৯ পিএম

তবে আলোচনায় এখনো ব্রেক্সিটই

জনসন না হান্ট- নতুন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ব্রিটেন

জনসন না হান্ট-  নতুন প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ব্রিটেন

 

ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা এখন মাত্র সময়ের অপেক্ষা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদের জটিল অংক মেলানোর ভার আর যুক্তরাজ্যের নেতৃত্ব থেরেসা মে কার হাতে দিয়ে যাবেন, তার ফয়সালা হবে আজ মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)। দেশটির বেশিরভাগ আইনপ্রণেতাদের মতে, এবার ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ঢুকতে চলেছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী  বরিস জনসন। যদিও বিতর্ক বরাবরই তার সঙ্গী। নাম ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে বেশকিছু গণমাধ্যম দাবি করছে, জনসনের পক্ষে একা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া অনেকটাই মুশকিল। তাই সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট।

বরিস জনসন এবং জেরেমি হান্টের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নিতে সোমবার (২২ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির ১ লাখ ৬০ হাজার নিবন্ধিত সমর্থক। এখন শুধু ফলাফলের অপেক্ষা। মঙ্গলবার দুপুরের আগে আগে লন্ডনে সেই ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আর তাতে যিনি কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হবেন, তিনিই বুধবার (২৪ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেবেন। 

ব্রেক্সিট ব্যর্থতায় দলে বিদ্রোহের মুখে সরে যেতে বাধ্য হওয়া থেরেসা মে মঙ্গলবার সকালে তার মন্ত্রিসভার সঙ্গে শেষ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন। বুধবার বিকালে রানির সঙ্গে দেখা করে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র দেবেন তিনি। মূলত তখনই ১০ ডাউনিং স্ট্রিট থেকে তিনি শেষবারের মতো জন্য বক্তৃতা প্রদান করবেন। এর পরপরই তার উত্তরসূরি বাকিংহাম প্যালেস ঘুরে এসে অসীন হবেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর পদে এবং তিনিও সেখান থেকে নিজের প্রথম বক্তৃতাটি দেবেন। ভোটের আগে শুক্রবার ও শনিবার কনজার্ভেটিভ পার্টির এক অনলাইন জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ নেতাকর্মী বরিস জনসনকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন। আর জেরেমি হান্টের পক্ষে বলেছেন ১৫ শতাংশ।

   

কনজারভেটিভ পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার দৌড়ে স্পষ্টতই এগিয়ে আছেন লন্ডনের সাবেক মেয়র জনসন। অবশ্য অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, বরিস জনসনের অধীনে তারা কাজ করবেন না। হ্যামন্ড বলেছেন, ‌‘বরিস প্রধানমন্ত্রীর পদে আসার সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করব।’ হ্যামন্ডের দাবি, বরিসের ব্রেক্সিট নীতির সঙ্গে তিনি কখনই একমত নন। একই সঙ্গে ইস্তফার কথা জানিয়েছেন ব্রিটিশ আইনমন্ত্রী ডেভিড গোক। তার মতে- চুক্তি হোক কিংবা না হোক, আগামী ৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাবে ব্রিটেন। বরিস সবসময়ই এই নীতির পক্ষে। সম্প্রতি বরিস বলেছেন, ‘যেভাবেই হোক আগামী ৩১ অক্টোবর ইইউ ছেড়ে ব্রিটেনকে বেরোতেই হবে।’ যদিও জেরেমি হান্ট অবশ্য এখনো আশা করেন যে চুক্তিটি টেকানো সম্ভব। তিনি বলেছেন, ‘ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আরও পিছাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে এ ক্ষেত্রে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন একটি চুক্তি তৈরিতেও সম্মত আছি।’

প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেলে আগামী ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের দায়িত্ব বর্তাবে বরিস জনসনের ওপর আর তিনি ‘যে কোন মূল্যে’ তা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে মের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হতে না পারায় এক বছর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নানা কারণে আলোচিত জনসন। ২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পর্কোচ্ছেদের রায় হয়। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে থেরেসা মে সেই দায়িত্ব নিয়ে বিচ্ছিন্নতার পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এই জোট থেকে কোন প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্য আলাদা হবে এবং এরপর ইইউভুক্ত বাকি ২৭টি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক কেমন হবে, সেই পথ বের করার জন্য ২১ মাস সময় পেয়েছেন মে। কিন্তু সেজন্য যে পরিকল্পনা তিনি সাজিয়েছিলেন তা পার্লামেন্টে পাস করাতে না পারায় ব্রেক্সিটের সময়সীমা বাড়িয়ে নতুন তারিখ ঠিক হয় ৩১শে অক্টোবর। কিন্তু নিজের দলে বিদ্রোহের মুখে গত ৭ জুন নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিতে বাধ্য হন থেরেসা মে, যদিও তার সরকারের মেয়াদ রয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। ওই মেয়াদের বাকি সময়ের জন্য যিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাবেন, তাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করে বিচ্ছেদের হিসাব চূড়ান্ত করতে হবে। আর তাতে তিনি ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার নতুন চক্করে পড়তে হবে যুক্তরাজ্যকে।

এ দিকে ব্রিটিশ লেবার পার্টির সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউনের মতে, ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পূর্ণ চুক্তিহীন ব্রেক্সিট অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাদের মতে, ব্রিটেন বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি থেকে সামনে আরও ভয়ঙ্কর জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবে। টনি ব্লেয়ার ব্রিটেনের একটি দৈনিকে সম্পাদকীয়তে লিখেছেন, ‘চুক্তিহীন প্রক্রিয়ার ফলে আসলে ঠিক কী ঘটতে চলেছে, তা নিশ্চিতভাবে এখনো কেউই বুঝতে পারছে না। কেননা কোনো উন্নত দেশ রাতারাতি এভাবে নিজেদের সকল বাণিজ্যিক বন্দোবস্ত পরিবর্তন করে না। ব্রেক্সিট ইস্যুটি নিয়ে দ্বিতীয় গণভোটই হচ্ছে একমাত্র উপায়। কেননা ইইউ এখন আর এই চুক্তিটি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবে না। তাই কোনো প্রকারের চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট মানে দেশের অর্থনীতিকে খাদের কিনারে নিয়ে ফেলা।’

যদিও লেবার পার্টির ভেতরেও এখন বেশ সঙ্কট বিরাজ করছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা জেরেমি করবিনকে একদল সমর্থন জানালেও অপর দল তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তাছাড়া দলের একাংশের মধ্যে ইতোমধ্যে ইহুদি বিদ্বেষের অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে করবিন তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও দাবি বিশ্লেষকদের। তবে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গে এখনো ঘোষিত কোনো অবস্থানে যাননি করবিন; আর সেটাও দলের ভেতর এক বড় ক্ষোভের কারণ। অনেকের ধারণা, এই ইস্যুতে পার্লামেন্টে দ্বিতীয়বার গণভোটের আয়োজন হলে সেখানেই হয়তো সমর্থন জানাতে পারেন করবিন; যদিও তিনি এখনো সেটাও স্পষ্ট করতে পারেননি।

পার্লামেন্টে বিরোধী দল নড়বড়ে হলে শেষ পর্যন্ত সুবিধা পাবেন বরিস জনসনই। কেননা এখনো সেখানে শাসক দল কনজারভেটিভ পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তাই যেকোনো বিল পাশ করাতে গেলে আগে তাদের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি পার্টির উপরে নির্ভর করে থাকতে হয়। যে কারণে বরিস জনসনকেও এবার পার্লামেন্টের সম্মতি নিয়ে ব্রেক্সিট চুক্তি বিষয়গুলোতে এগোতে হবে। অপর দিকে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট বলবৎ করতে ব্রিটেনের নয়া প্রধানমন্ত্রী যাতে কোনো দিন পার্লামেন্টকে অচল করতে না পারেন; সে জন্য গত সপ্তাহে আইনপ্রণেতারা একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। কেননা তাদের ধারণা, বরিস যদি একবার পদে আসেন, তাহলে নিজের অবস্থান শক্ত করতে খুব দ্রুতই তিনি ভোটের পথে হাঁটবেন।

সূত্র : বিবিসি

এসজেড

আরও পড়ুন