• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২১, ০৩:৫৮ পিএম

অপেক্ষা আজ মৃত্যুতে রূপদান

অপেক্ষা আজ মৃত্যুতে রূপদান

বাড়িটা বেশ পুরনো; নেই সংস্করণ
হেলে আছে পুবে, ঝড়-তুফানে নড়বড় করে
গাত্র ভরা শৈবাল, চাপ্টা ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ে।
কখন যেন বাড়িটি পূর্ণরূপে ভেঙে যায়!
শোনা যায়, বাড়ির মালিকের পূর্বপুরুষেরা
বাড়ির মেঝে মাটির নিচে হরেক রকম খাঁটি
স্বর্ণমুদ্রাসহ দামি প্রাচুর্য লুকিয়ে রেখে গিয়েছিল।

নিকষকালো আঁধারে আবৃত বাড়িটি। বহুদিন
ধরে সেথায় বাতির স্পর্শ লাগে না। দিন কিবা
রাত সর্বদা বাড়িটি অন্ধকারে নিমজ্জিত। জিন-
প্রেতাত্মার মেলা বসে সকাল-সাঁঝে। সাহসী
বেশে যে কেউ প্রবেশ করলে আধমরা হয়ে বের
হয়। সাহসের ঘাটতি নেই কভু তবুও ঢের ভয়!
বাড়িটি ভেঙে পড়লেই যেন সব হবে লুটপাট।

বাড়িটি ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে
তস্কর। বুদ্ধিকৌশল নির্মাণে সদা মগ্ন তারা।
হাজার কোটি দামে বিক্রি করবে ঐসব স্বর্ণমুদ্রা।
তবে তাদের যে তট সহে না। বাড়ির প্রহরীও
দূর হতে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন চোখে মাখে।
মালিক চরম উদ্বিগ্ন; জিন-প্রেতাত্মার আগ্রাসে।
প্রতিবেশীর হিংস্র থাবা কখন যে এসে পড়ে!

অজানা এক ব্যাধিতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে
মালিক। ছেলেমেয়েরা শিশুকাল হতে কৈশোরে
পদার্পণ। অবুঝ ওরা খেলাধুলায় মেতে থাকে।
মৃত্যুকামনায় ব্রত তস্কর প্রতিবেশী ও প্রহরী।
বদনে যেন তাদের নীরব উল্লাসের ঢেউ বইবে।
কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন যে খুবই নিকটে। কিছু
দিবস অতিক্রান্ত হওয়ার স্মরণে হঠাৎ একদিন
কানে ভেসে আসে মালিকের মৃত্যুর দুঃসংবাদ।

তস্করের বদনে যে অট্টহাসির ফোয়ারা বইছে
বহুল কাঙ্খিত স্বপ্ন বুঝি আজ বাস্তবে রূপদান
হতে চলছে; প্রহরীকে সাথে নিয়ে তস্করের দল
প্রবেশ করে অন্ধকারে আচ্ছন্ন বাড়িটায়। হাতে
টর্চ। ধুকধুক করে কাঁপছে বুক। দশ অধিক
তস্করের মিলনকাল। দূরে কুকুর ঘেউঘেউ ডাকে।
হঠাৎ মেঘে আচ্ছন্ন আকাশ; বিদ্যুৎ চমকানোর
গর্জনে মুখরিত চারিপাশ, ঝড় তুফানের উপদ্রব।

গাছপালা তরুলতা ভাঙছে, বাতাসের বেগে
বাড়িটা দোলছে। তস্করদের বুকের কাঁপুনি যায়
বেড়ে। মুখ দিয়ে দরুদ কিংবা সুরা আসছে না।
সর্দার বলে; হায়! হায়! ভেঙে যাবে না তো!
হঠাৎ মচমচ শব্দের ঝঙ্কার শ্রবণে ভেসে আসে।
একি! ভাঙতে শুরু করেছে বাড়িটা! দেয়াল ধসে
পড়ছে।  উপর থেকে শৈবাল যুক্ত ইট খসে খসে
দুমদুম শব্দে সবার গাত্রে পড়ছে। দরজা কোথায়!

তীব্র গতিতে ইটগুলো খসে তস্করদের মাটির
সাথে মিশিয়ে দেয়। বাড়ির বাহির হতে আর্তনাদের
ধ্বনিতে ঘুম ভাঙে অন্যান্য প্রতিবেশীর।
ভেঙে পড়ার অপেক্ষা আজ বাস্তবে পরিণত হলো
তবে সেটাতে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। হায়!