• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৭:১৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ১০:৪৯ পিএম

ক্যাসিনোতে আটক ১৪২, বিপুল টাকা ও মাদক উদ্ধার

যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ অস্ত্রসহ গ্রেফতার

যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ অস্ত্রসহ গ্রেফতার
খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া - ফাইল ছবি

রাজধানীতে ‘ক্যাসিনো’ চালানোর মামলায় যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অবৈধ অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে। তার মালিকানাধীন ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়েছে। ক্লাবে পাওয়া গেছে মদ আর জুয়ার বিপুল আয়োজন। ২৪ লাখ টাকাও সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। 

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে খালেদের বাসা এবং ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান শুরু করেন র‌্যাব সদস্যরা। বিকাল ৩টার দিকে ডিবির সদস্য পরিচয়ে কয়েকজন তার গুলশানের বাসায় আসেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় বাসায় আসেন খালেদ মাহমুদ। এর পরপরই বিকাল ৪টার দিকে বাসায় ঢোকে করে র‌্যাব। সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ির লোকজনকে ডেকে বলা হয়, আপনারা আসুন। বাড়ি তল্লাশি করা হবে। লকার থেকে একটি অবৈধ পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি, ২০১৭ সালের পর নবায়ন না করা একটি শটগান উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ওয়াল আলমারি থেকে দুটি প্যাকেটে ৫৮৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে অস্ত্র দুটি জব্দ করা হয়েছে। রাত ৯টার দিকে খালেদ মাহমুদকে ডিবি অফিসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। গুলশানের এই ভবনটি ৪ বছর আগে কেনেন খালেদ মাহমুদ। 

ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে উদ্ধার মাদকদ্রব্য   - ছবি : কাশেম হারুন 

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মো. সারওয়ার-বিন-কাশেম জানিয়েছেন, ‘ক্যাসিনো’ চালানোর মামলায় অস্ত্রসহ যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর গুলশানে নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ইয়ংমেনস ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে আটককৃতরা  - ছবি : কাশেম হারুন

ফকিরাপুলে খালেদের মালিকানাধীন ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চলাকালে ক্যাসিনোর চারদিকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে র‍্যাব। এসময় ক্যাসিনোর ভেতরে সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ওই ক্লাব থেকে দুই নারীকর্মীসহ ১৪২ জনকে আটক করা হয়। 

মতিঝিল থানার পাশেই অবস্থিত ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবটি ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার জন্য ক্রীড়ামোদীদের কাছে পরিচিত হলেও এই ক্লাবে ক্যাসিনোর আদলে জুয়ার আসর পরিচালনার বিষয়টি স্থানীয়দের ভীষণ বিব্রত করতো। জানা গেছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই ক্লাবের কমিটিতে যুবলীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ক্লাবে তাদের প্রভাব বাড়তেই থাকে। অভিযোগ রয়েছে, ক্লাবের ভেতর নিয়মিত মদপানের আসর বসানোর পাশাপাশি হাউজি খেলা চালু করেন তারা। এরপর এখানে জুয়ার আসর অব্যাহত হারে বাড়তেই থাকে। শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া এই ক্লাবের সভাপতি এবং অন্যতম জুয়া পরিচালনাকারী বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্লাবের চেয়ারম্যান স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন।

ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের ক্যাসিনো   - ছবি : কাশেম হারুন

 

ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে আটক দুই নারী

অভিযান পরিচালনার পর ক্লাবটির ক্যাসিনোতে ঢুকে দেখা গেছে, এর ভেতরে রয়েছে মোট ৯টি ক্যাসিনো টেবিল, এরমধ্যে ভিআইপি টেবিল একটি। জুয়ার ফ্ল্যাশ গেম ছয়টি।

 

সূত্র জানায়, চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবলীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বাড়িতেও অভিযান চালানো হচ্ছে।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনটির প্রভাবশালী নেতা খালেদকে ধরতে অভিযান নামে র‌্যাব। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে চাঁদাদাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী যুবলীগের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ‘তারা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ’ বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগের ঢাকা মহানগরের একজন নেতা যা ইচ্ছে করে বেড়াচ্ছে, চাঁদাবাজি করছে। আরেকজন এখন দিনের বেলায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলেন। সদলবলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরেন। এসব বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্রবাজি করেন, যারা ক্যাডার পোষেন, তারা সাবধান হয়ে যান, এসব বন্ধ করুন। তা না হলে, যেভাবে জঙ্গি দমন করা হয়েছে, একইভাবে তাদেরকেও দমন করা হবে।

যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট এবং সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন বলে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়।

ক্যাসিনো থেকে আটক শতাধিকের দণ্ড
ইয়ংমেনস ক্লাব থেকে আটক ১৪২ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম জানিয়েছেন, ৬ জন কর্মচারীসহ ৩১ জনকে এক বছর এবং বাকিদের ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোর ম্যানেজার একজন নেপালি। অভিযানের খবর পেয়ে তিনি পালিয়ে গেছেন। তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

জেডএইচ/ এফসি

আরও পড়ুন