• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ১১:২৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ১১:২৫ এএম

যুবলীগে শুদ্ধি অভিযান

বাতিল হচ্ছে দুর্নীতিবাজ নেতাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স 

বাতিল হচ্ছে দুর্নীতিবাজ নেতাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স 

ছাত্রলীগের পর যুবলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষায় যুবলীগে মনস্টারের চেয়েও খারাপ নেতা রয়েছে। তাই খুব শিগগিরই শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে যুবলীগে। আর এ অভিযানের কথা শুনেই যুবলীগের ব্যানারে থাকা দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজ নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এরই মধ্যে একাধিক নেতা চলে গেছেন আত্মগোপনে। অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে কেউ কেউ  আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও হেভিওয়েট নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন।

যেসব যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সরাসরি চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তারা অসুস্থতার ভান করে উন্নত চিকিৎসার উছিলায় এরই মধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন। কতিপয় নেতা যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার আতঙ্কে ভুগছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, ছাত্রলীগের পর যুবলীগেও শুদ্ধি অভিযান চালানোর ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ করেছেন। এ কারণে এ সংগঠনের দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজ এবং টেন্ডারবাজ নেতারা রয়েছেন মহাআতঙ্কে। বিশেষ করে গত দুই মেয়াদে চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকৌশলে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হয়ে এখন রীতিমতো গডফাদার বনে গেছেন, তারা চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তদবির করে নিজের নাম দলের গুড লিস্টে আনা যায় কি- না সেজন্য অনেকেই এখন পাগলের মতো সে পথ খুঁজছেন। তবে দলীয় সভানেত্রী এ ব্যাপারে কোনও ধরনের শিথিল দেখাচ্ছেন না  তাই গডফাদারদের অনেকেই নিজেদের গাঁ বাঁচাতে আত্মগোপনে চলে গেছেন।

ছাত্রলীগের সভাপতি ও জিএস পরিবর্তনের পর যুবলীগে শুদ্ধি অভিযানের খবরে ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা বিলাসবহুল ক্যাসিনোতে জুয়াড়িদের আনাগোনা কমে গেছে। যুবলীগের কয়েকজন দাপুটে নেতার নৈমিত্তিক পদচারণ থাকলেও তারাও আকস্মিক সেখানে আসা-যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান গোয়েন্দারা। শুধুু তাই নয়, যুবলীগের যেসব নেতা-কর্মী এতদিন দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিয়েছেন, সময় খারাপ দেখে তারাও এখন তাদের পাশ থেকে সটকে পড়েছেন।এমনকি অনেকে দলীয় গডফাদারদের সঙ্গে টেলি যোগাযোগও বন্ধ। দুইদিন আগেও যুবলীগের দাপুটে যেসব নেতার অফিস ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ে শত শত কর্মীর ভিড় ছিল, সেখানে এখন শূন্যতা বিরাজ করছে। নানা দুর্নীতি-অপকর্মের মাধ্যমে স্বল্পসময়ে ফুলে ফেঁপে ওঠা যুবলীগের দুর্নীতিবাজ নেতা এখন নিজরাই অফিসে আসছেন না। কেউ কেউ আবার দেশ ছেড়েছেন। দেশ ছাড়ারও চিন্তা-ভাবনা করছেন কেউ কেউ।

দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নানা অপকর্মের তথ্য দলীয় হাইকমান্ডের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন যুবলীগের বেশকিছু ত্যাগী নেতা।  অসৎ. দুর্নীতিবাজ নেতাদের অপকর্ম ফাঁস করে দিতে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের দুর্নীতিবাজ নেতাদের মধ্যে যারা ক্যাডারবাজি করে স্বল্পসময়ে আখের গুছিয়েছেন, তারাই এখন মূলত বেশি আতঙ্কে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বহু ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এমনকি এদের মধ্যে কেউ কেউ একাধিক হত্যা মামলার আসামি।

গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য থেকে জানা গেছে, যুবলীগের বেশকিছু নেতা নানা অপকৌশলে নিজ নামে এক বা একাধিক আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাগিয়ে নিয়েছেন। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে নানা অপকর্ম করেছে বলে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। ওইসব অভিযোগ সত্য কি- না তা যাচাই করে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব নেতার আগ্নেয়াস্ত্রের তালিকা তৈরি করার জন্য এরই মধ্যে গোয়েন্দাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করা হবে। পাশাপাশি ওইসব ঘটনায় মামলা রুজু করার মতো যথেষ্ট গ্রাউন্ড পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

অস্ত্রবাজ গডফাদারদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একজন নেতা বলেন, এসব অস্ত্র তারা তাদের নিজেদের স্বার্থেই ব্যবহার করেন। কারণ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অস্ত্রের ঝনঝনানির কোনও প্রয়োজন নেই। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে চলাফেরা করা নেতাদের ব্যাপারে যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে তাদের ভবিষ্যৎ বুঝে নেয়া উচিত। এতে ব্যর্থ হলে তাদেরই এর কঠিন ফল ভোগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ওই নেতাদের অভিযোগ, যুবলীগের মুষ্টিমেয় দুর্নীতিবাজ নেতা এলাকায় মাদক ব্যবসা ও জুয়ার আসরসহ নানা অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তারা নিজেরাই নিজেদের দলীয় নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা পাচ্ছেন। এছাড়া যুবলীগের বেশকিছু ক্যাডারবাজ নেতা দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের অপমান অপদস্ত করছেন। এমনকি কখনও কখনও তাদের ওপর নৃশংস হামলা চালাচ্ছেন। এতে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এসব বিষয়ও ট্রাইব্যুনালের আলোচনায় আসছে।

ডিএমপি এলাকার একাধিক থানার ওসি বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, কদিন আগেও যুবলীগের যেসব নেতা দাপটের সঙ্গে থানায় এসে বিভিন্ন অপরাধীদের ছাড়িয়ে নিতে হুমকি-ধমকি দিতেন, তারা এখন নরম সুরে তদবির করছেন। কেউ কেউ আবার তা-ও ছেড়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ী কিংবা চাঁদাবাজদের ব্যাপারে যুবলীগের কোনও নেতাই এখন থানায় আসছেন না বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, শুধু যুবলীগেই নয়, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের অন্য সব সংগঠনের দুর্নীতিবাজ নেতারাও আতঙ্কিত।

ছাত্রলীগের পর যুবলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, যারা অপকর্ম করে, অনিয়ম করে, এ ধরনের নেতা-কর্মীদের দলের ভেতরে না থাকাই উচিত। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি। যুবলীগের ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  বলেন, এখানে স্পষ্ট বিষয়টা হচ্ছে, সরকার ও দলের ইমেজটা ক্লিন হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী ক্লিন ইমেজের জন্য সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন।  

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন