• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ১০:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ১০:২৮ পিএম

যুবলীগে তোলপাড়, আতঙ্ক

যুবলীগে তোলপাড়, আতঙ্ক

দুর্নীতি-চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের জোরালো পদক্ষেপে তোলপাড় চলছে দলটির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন যুবলীগে। অভিযোগের তীর সংগঠনের বেশ কিছু নেতার দিকে থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আত্নসমালোচনার কথাও বলছেন যুবলীগ নেতারা। এরইমধ্যে বুধবার সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর সংগঠনটিতে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি যুবলীগেও শুরু হলো শুদ্ধি অভিযান? তবে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এ প্রসঙ্গ বলেছেন, সংগঠনটিকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।  

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের বেশকিছু দুর্নীতিবাজ নেতার দুর্নীতি-টেন্ডারবাজির গোয়েন্দা তথ্য দলীয় প্রধানের কাছে পৌঁছে গেছে। কেউ কেউ আবার এসব নেতার অপকর্ম ফাঁস করে দিতে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশনের হাতে তুলে দেয়ার চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, অভিযুক্ত অনেক যুবলীগ নেতা অসুস্থতা দেখিয়ে এরইমধ্যে দেশের বাইরে চলে গেছেন এবং অনেকেই যাওয়ার চেষ্টাও করছেন। আবার শুদ্ধি অভিযানের খবর পেয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলা বিলাসবহুল ক্যাসিনোয় জুয়াড়িদের আনাগোনা কমেছে বলেও জানা গেছে। অনেকে ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে আছেন। এর মধ্যেই বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) যুবলীগ নেতার মালিকানাধীন ক্যাসিনো ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে র‌্যাবের অভিজানের পর বেশ আতঙ্ক বিরাজ করছে সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।   

বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগে অপকর্ম হয়নি, কেউ করেনি এটা বলি না। অপকর্ম হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। এটা অন্তত আওয়ামী লীগে হয়, অন্য কোনো দল ব্যবস্থা নেয় না। বিএনপিও ব্যবস্থা নেয় না। আওয়ামী লীগে এই পলিটিক্যাল কনসার্ন আছে, কাজেই কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি করলে শাস্তি।’

জানা গেছে, যুবলীগের শুদ্ধি অভিযান বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রকাশ্য হুশিয়ারি দেয়ায় সংগঠনের অভিযুক্তরা এখন আতঙ্কিত। বিশেষ করে গত দুই মেয়াদে যারা চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকৌশলে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন এখন তারা চরম উদ্বেগ-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কোনোভাবে তদবির করে নিজের নাম দলের গুড লিস্টে আনা যায় কি না সেজন্য অনেকেই পথ খুঁজছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ বিষয়ে শিথিল না থাকার কারণে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের র্শীষ নেতারাও কোনো অভিযুক্ত নেতাদের সহানুভূতি দেখাতে নারাজ।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছে, রাজধানীতে যুবলীগের বিভিন্ন অপতৎপরতা চলছে। শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে- ঢাকায় অন্তত ১০০টি ক্যাসিনো চলছে যুবলীগের তত্ত্বাবধানে। পুলিশের এই প্রতিবেদন পেয়ে যুবলীগের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ছাত্রলীগের পর এবার যুবলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অপরাধ করে পার পাওয়ার প্রবণতা আওয়ামী লীগে নেই। যারা দুর্নীতিতে জড়িত তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলা আছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রগুলো বলছে, গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহি কমিটির বৈঠকে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ‍যুবলীগের বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, ক্যাডারবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ বেশ কিছু অভিযোগ এনে উষ্মা প্রকাশ করেন।  সেই সঙ্গে ওই নেতাদের বিরুদ্ধে জিরো টলানেন্সে নীতির কথাও জানান। এর পর থেকে যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে গ্রেফতার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে গত কয়েকদিন গুঞ্জন ছিল, যা বুধবার সত্যি হলো।   

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগের পর যুবলীগের দুর্নীতিবাজদের ধরতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য সংগঠনগুলোতেও এই অভিযান চলবে। এর পাশাপাশি যুবলীগ নিজেও সংগঠনটির নেতাদের তদন্ত করতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি সংগঠনের দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।

তবে এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতারা বলছেন, আওয়ামী যুবলীগ এসব সমালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সংগঠনের ভেতর কেউ যেন নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধ না করে সেজন্য জিরো টলারেন্স নীতিতে চলবে এ সংগঠন। এজন্য বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এ ট্রাইব্যুনালে যুবলীগের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ এলে তা তদন্ত ও অনুসন্ধান করা হয়। দোষী নেতাকর্মী তিনি যেই হোন না কেন, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে যুবলীগের এ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে প্রশ্ন আছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা বলছেন, যুবলীগের এ  ট্রাইব্যুনাল কাদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে সেটাও দেখার বিষয়। কারণ এ ট্রাইব্যুনাল যদি অভিযুক্ত থাকে, তাহলে সুষ্ঠু বিচার করা সম্ভব নয়। এমনটাই বলছিলেন আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা।

যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার পর যুবলীগে থাকা দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ-টেন্ডারবাজ এবং অস্ত্রবাজ নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিযানের হাত থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও হেভিওয়েট নেতার কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কেউ আবার রয়েছেন আত্মগোপনে। যুবলীগের দুর্নীতিবাজ ও ক্যাডারবাজ অনেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিপুলসংখ্যক ফৌজদারি মামলা রয়েছে।      

মঙ্গলবার অভিযুক্তদের বিষয়ে আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলেছেন, যুবলীগের বিভিন্ন ব্যক্তি ও কমিটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে। যুবলীগ অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

বুধবার বিকালে গোলারটেক মাঠে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের অন্তর্গত মিরপুর-শাহআলী ও দারুসসালাম থানার অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ড নং ৭,৮,৯,১০ ও ১১ যৌথ ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, যুবলীগ নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে।  

এএইচএস/ এফসি

আরও পড়ুন