
‘আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা, সেটাই আমার পরিচয়। আর কিছু না’- কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে মেট্রোরেলের বগি। শনিবার মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আবেগঘন মুহূর্ত তৈরি হয়।
মেট্রোরেলে করে যাত্রা শুরুর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয় সাংবাদিকদের। অনেক বিশ্বনেতাদের মতো বলা হয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রীকে কিন্তু তিনি কার সঙ্গে নিজের মিল পান জানতে চাইলে তিনি বলে ওঠেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা সেটাই আমার পরিচয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার আমিত্ব বলে কিছু নেই। কারণ আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি এদেশের মানুষের কল্যানে। মানুষ যখন ভালো থাকে ওটাই আমার সব থেকে বড় আনন্দ। আমার মনে হয় আমার বাবার আত্মাটাও শান্তি পাবে। এই যে এতো সাহস এবং শক্তি এটাও উৎস কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মুজিব কন্যা হিসেবে, সেটাই আমার বড় উৎস। আমি জাতির পিতার কন্যা। বাংলাদেশের জনগন তারাই আমার উৎসের আধার।
জাতি নতুন কিছু পেতে চাচ্ছে কিনা প্রশ্নে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এখন লক্ষ্য স্মার্ট জনগন করে তোলা। শিক্ষায় দীক্ষায় জ্ঞানে বিজ্ঞানে উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দেশকে উন্নত করতে চাই। সেই প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা তৈরি করেছি। বাংলাদেশ কারো কাছে হাত পাতবে না। সম্মানের সাথে চলবে। কারণ জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিযদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে তুলবো।
এক সময় মেট্রোরেলে চড়ে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে মেট্রোরেলের আগারগাঁও টু মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর আধুনিক এই নগর গণপরিবহনে চেপে বসেন প্রধানমন্ত্রী। মাত্র ২৫ মিনিটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিলে পৌঁছান তিনি। মতিঝিল স্টেশনে নেমে আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় জনসভার উদ্দেমে রওনা দেন তিনি।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্বের পথ মাত্র ৩৮ মিনিটে পার হতে পারবেন যাত্রীরা। এলিভেটেড লাইন হওয়ায় রাজধানীর চিরচেনা যানজটে পড়তে হবে না যাত্রীদের। উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত পুরো পথের জন্য ভাড়া গুণতে হবে ১০০ টাকা। অবশ্য শুরুতে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের সবগুলো স্টেশনে মেট্রোরেল থামবে না। চলবে সকাল থেকে রাত অবধি।
জানা গেছে, এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাইকা। বাকি ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বহন করছে বাংলাদেশ সরকার। মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে চুক্তি সই হয়।
প্রথমে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের কথা ছিল। যাত্রীদের সুবিধা বিবেচনায় সেটি কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে অনুশাসন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত দূরত্ব এক দশমিক ৬ কিলোমিটার। বর্তমানে বর্ধিত অংশের অর্থাৎ মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ চলছে। যদিও নির্মাণকাজের শুরুতে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের বাস্তব কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ দশমিক ০৮ শতাংশ।
জাগরণ/রাজনীতি/আওয়ামীলীগ/এমএ/এসএসকে