সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি দলের ডাকা তৃতীয় দফার অবরোধ শুরু হচ্ছে বুধবার।
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার অবরোধ শেষ হওয়ার আগেই নতুন কর্সমূচি ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
৭ নভেম্বর বিএনপি বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে। সে কারণে মঙ্গলবার অবরোধ দেয়নি দলটি।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে সেই সমাবেশ থেকে ২৯ অক্টোবর হরতাল ডাকে দলটি।
একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর সারা দেশে অবরোধ করে তারা। আলাদা কর্মসূচি দিয়ে সঙ্গে যোগ দেয় যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত। ৎ
বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দলও একই কর্মসূচি দেয়। সেই অবরোধ শেষে রোব ও সোমবার নতুন করে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা হয়।
২৮ অক্টোবর সমাবেশের দিন থেকে অবরোধ কর্মসূচির শুরুর পর থেকে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন সড়কে বাস, ট্রাক, অটোরিকশায় আগুন দেওয়ার এবং ভাঙচুর করার খবর এসেছে।
২৮ অক্টোবর সংঘর্ষের পর রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৩৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন, দলের ভাইস চেয়ারপারসন শামসুজ্জামান দুদু, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীও।
বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এবং পরবর্তীতে ৯ দিনে ১৩২টি মামলায় তাদের পাঁচ হাজার ৫৫৯ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসাব বলছে, রোব ও সোমবার সর্বাত্মক অবরোধ চলার সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ২১টি যানে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি বাস, দুইটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, একটি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি লেগুনা পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
২৮ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১০টি আগুনের সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে ২৮ অক্টোবর ২৯টি, ২৯ অক্টোবর ১৯টি, ৩০ অক্টোবর-১টি, ৩১ অক্টোবর ১১টি, ১ নভেম্বর ১৪টি, ২ নভেম্বর ৭টি, ৪ নভেম্বর ছয়টি, ৫ নভেম্বর ১৩টি এবং ৬ নভেম্বর ১০টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
র্যাব জানায়, অবরোধের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগের জড়িতদের ধরতে বাহিনীটি কঠোর নজরদারি করবে। তাদের গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হবে।
২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর ২০১৫ সালে ওই নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে টানা তিন মাস হরতাল-অবরোধ পালন করে বিএনপি-জাসায়াত জোট।
তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। বহু গাড়িতে পেট্রোল বোমা মারা হয়। সরকার হঠাতে না পেরে ২০১৮ সালে তারা নির্বাচনে অংশ নেয়। এবার সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আবারও তারা আন্দোলন করছে।
জাগরণ/রাজনীতি/অবরোধ/বিএনপি/এসএসকে/কেএপি