• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ৯, ২০২১, ০১:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ৯, ২০২১, ০২:১৪ পিএম

নাটকে বাবা-মা চরিত্র ফেরত চান চঞ্চল চৌধুরী

নাটকে বাবা-মা চরিত্র ফেরত চান চঞ্চল চৌধুরী

নাটক নির্মাণের বাজেট কমেছে। তাই পরিচালকেরা নাটকে মা-বাবার চরিত্র না রেখে শুধু কেন্দ্রীয় দুই চরিত্র রেখে নাটক নির্মাণ করেন। যদিও একটা সময় নাটকে বাবা-মায়ের চরিত্র ছিল নাটকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি দাদা-দাদি ও নানা-নানির চরিত্রও রাখা হতো নাটকে। সেই সব দিন আজ অতীত। তবে অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী আবারও নাটকে বাবা-মায়ের চরিত্র ফেরত চান। মা দিবসে ফেসবুকে এমনটি লিখেছেন তিনি।

চঞ্চল চৌধুরী লিখেছেন, “পিতৃ-মাতৃ পরিবারহীন আমরা। যখন আমার অভিনয়ের যাত্রা শুরু তখন অধিকাংশ নাটক-সিনেমা ছিল সামাজিক ও পারিবারিক। কত কত চরিত্র। দাদা-দাদি, নানা-নানি, বাবা-মা, ভাই-বোন। বহু চরিত্রের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ছিল আমাদের নাটক সিনেমায়। প্রায় প্রতিটি নাটক বা সিনেমা ছিল চলমান সমাজ এবং বাঙালি সংস্কৃতির বাস্তব প্রতিফলন। কালান্তরে সেই সব দিনগুলো কীভাবে যেন শেষ হয়ে গেল।”

তিনি আরও লিখেছেন, “অধিকাংশ চরিত্র এখন আমাদের নাটকে অনুপস্থিত। অধিকাংশ নাটক নির্মাণ হচ্ছে প্রধানত দুটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে। পুরো নাটকে নায়ক আর নায়িকার প্রেমের প্যানপ্যানানি আর ঘ্যানঘ্যানানি সকল নাটক প্রেমে ভরপুর। মুক্তিযুদ্ধ বা একুশে ফেব্রুয়ারির নাটকেও অসংলগ্ন প্রেমের উপস্থিতি মূল বিষয়টির ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। হুমায়ূন আহমেদের সেই সময়ের নাটকগুলো দেখলেই পরিবারের একটা চমৎকার চিত্র পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে হাতে গোনা কয়েকজন নাট্যকার, যেমন মাসুম রেজা বা বৃন্দাবন দাসের গল্পে বাবা-মা, দাদা-দাদি, ভাই-বোনসহ অনেক চরিত্রের উপস্থিতি মেলে। কিন্তু ইদানীং পারিবারিক বা সামাজিক নাটকের গল্পে ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাই। দাদা-দাদি, নানা-নানি নিখোঁজ। নাটকে বাবার চরিত্র থাকলে মা মৃত। মায়ের চরিত্র থাকলে বাবা পরলোকগত। যেখানে বাবা-মাকেই একসাথে পাওয়া যায় না সেখানে ভাই-বোন আসবে কোত্থেকে? আর অন্যান্য চরিত্রের কথা তো বলাই বাহুল্য।”

এ সময় চঞ্চল নাটকের বাজেল স্বল্পতাকে দায়ী করে লেখেন, “অনেকগুলো কারণের মধ্যে নির্মাণ বাজেটের স্বল্পতা এবং খরচ বাঁচিয়ে কোনোমতে নাটকের নামে ফুটেজ কালেকশন এর জন্য দায়ী। স্পষ্ট মনে পড়ে, প্রথম দিকের কাজে সহশিল্পী হিসাবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিল্পী এটিএম ভাই, ফরিদী ভাই, মধু দা, বাচ্চু ভাই, আমিরুল ভাই, মহসিন ভাই, মামুন ভাই, এনাম আংকেল, সবুজ ভাই, কে এস ফিরোজ ভাই, নরেশদা, আসাদ ভাই, হায়াত ভাই, পীযূষদা, রহমতদা, দিলারা আন্টি, ফেরদৌসী আপা, মায়া ঘোষ, শর্মিলী আপা, জলি আপা, ডলি ভাবি, আফরোজা আপা, সুবর্ণা আপাসহ অনেককেই বাবা-মা, দাদা-দাদি, বড় ভাই বা বোনের চরিত্রে পেয়েছি। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি তাদের কাছে। তাদের মধ্যে অনেকেই অতৃপ্তি আর হতাশা নিয়ে বেঁচে আছেন, কেউ কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলেও গেছেন।”

এ সময় তিনি আক্ষেপের সুরে বলেন, “অনেক অভিজ্ঞ আর সিনিয়র শিল্পীদের অভিনয়ের জন্য ডাকা হয় না। এইভাবেই আমাদের নাটক-সিনেমাও আজ অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। এখন টুকটাক মা হিসেবে যাদেরকে মাঝেমধ্যে পাই; গ্রামের নাটকেও তাদের চুল স্ট্রেইট করা, ভ্রু প্লাক করা। তাদের সাথে অভিনয়ের সময় সন্তান হিসেবে কোনো আবেগই কাজ করে না।”

নাটকের বাব-মার চরিত্র ফেরত চেয়ে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, “এত কথা বলার কারণ, আমরা আমাদের নাটকে বাবা-মাকে ফেরত চাই। দাদা-দাদি ফেরত চাই। বড় ভাই-বোন ফেরত চাই। জমজমাট পরিবার চাই।”