• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৪:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ৩, ২০১৯, ০৪:৫৬ পিএম

হংকং‍‍য়ের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের আহ্বান

হংকং‍‍য়ের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের আহ্বান

ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলবর্তী দেশ হংকং'য়ের কাছে ভবিষ্যতে আর কোনো সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি না করতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের একটি দল। শনিবার (৩ আগস্ট) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবর লেখা এক চিঠিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের দুই চেয়ারম্যান। 

সম্প্রতি সরকার বিরোধী বিক্ষোভে গণতন্ত্রকামীদের ওপর অতিরিক্ত প্রশাসনিক বল প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে দেশটির চীনাপন্থি শাসক ক্যারি ল্যামের বিরুদ্ধে। এবার মূলত সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মার্কিন আইনপ্রণেতারা এ আহ্বান জানিয়েছেন।

এক সময়ের ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে পরিচিত হংকং বর্তমানে চীনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও 'এক দেশ, দুই ব্যবস্থা'র অধীনে কিছু মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন ভোগ করছে হংকং। অঞ্চলটির সম্পূর্ণ নিজস্ব বিচার ও আইন ব্যবস্থা রয়েছে, যা মূল চীনের চেয়ে অনেকটাই ভিন্ন।

এর আগে গত মাসে দেশটিতে কথিত আসামি প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে মাঠে নামেন লক্ষাধিক গণতন্ত্রকামী। তাদের আশঙ্কা, পার্লামেন্টে বিলটি অনুমোদন লাভ করলে ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তিদের চীনা সরকারের কাছে প্রত্যর্পণের সুযোগ সৃষ্টি হবে। 

পরবর্তীতে লাখো জনতার সেই গণবিক্ষোভের মুখে এক পর্যায়ে বিলটিকে 'মৃত' বলে দাবি করেন দেশটির চীনপন্থি শাসক ক্যারি ল্যাম। যদিও এতে আশ্বস্ত হতে না পেরে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন হংকংয়ের জনগণ। 

এ দিকে চলতি সপ্তাহে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি অ্যাকটিভিস্টরা তাদের টুইট বার্তায় রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাসের ব্যবহৃত খোলসের ছবি প্রকাশ করেছেন। যেখানে তারা জানান, সেগুলো বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ ব্যবহার করেছে। টুইট বার্তায় তারা আরও লিখেন, 'এসব অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা।' তাছাড়া গত বেশ কিছুদিনে সড়কে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস আচরণের অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

অপর দিকে এমন প্রেক্ষাপটে ক্যারি ল্যাম সরকারের কাছে সামরিক সরঞ্জাম ও ভিড় নিয়ন্ত্রণকারী উপকরণ বিক্রি বন্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানালেন মার্কিন আইনপ্রণেতারা। শনিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার রসের কাছে চিঠি দিয়ে এ আহ্বান জানান কংগ্রেসের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ক্রিস্টোফার স্মিথ এবং জেমস ম্যাকগভার্ন।

চিঠিতে লেখা হয়, 'আমরা আপনাদের কাছে ভবিষ্যতে হংকং পুলিশ বাহিনীর কাছে সামরিক সরঞ্জাম ও ভিড় ও দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণকারী উপকরণ বিক্রি বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আরও চাই যে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ঘোষণা দিক যে তারা হংকংয়ের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অভ্যন্তরীণ নিপীড়নে কোনও ভূমিকা পালন করবে না।'

প্রায় ১৫০ বছর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকদের অধীনে থাকার পর ১৯৯৭ সালের ১ জুলাই লিজ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অঞ্চলটি শক্তিশালী চীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিবসটির ২২ বছর পূর্তিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে সড়ক অবরোধ করেন গণতন্ত্রকামী লোকজন। প্রতি বছরের এই দিনে কর্মকর্তারা এক দিকে সরকারি ভবনগুলোতে উৎসব পালন করেন আর অপর দিকে গণতন্ত্রকামীরা অবস্থান নেন রাজপথে।

দীর্ঘদিন যাবত হংকং চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হলেও ২০৪৭ সাল থেকে অঞ্চলটিকে স্বায়ত্তশাসনের নিশ্চয়তা দেয় দেশটি। এর আগে গত মাসেও চীনপন্থি এক বিল নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছিল ইউরেশিয়ার দক্ষিণপূর্ব উপকূলের এই দেশ। 

মূলত চীন এবং তাইওয়ানে আসামি প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত একটি বিলের বিপক্ষে তখন গোটা দেশে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনকারীদের মূল ক্ষোভ দাঁড়ায় চীনের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে।

বেইজিংয়ের দুর্বল আইন ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের রেকর্ডের কারণে হংকংয়ের সাধারণ মানুষ সেখানে কাউকে ফেরত পাঠাতে চাইছেন না। তাদের মতে, পার্লামেন্টে বিলটি পাস হলে তা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে চীনা হস্তক্ষেপের সুযোগ অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে।

এসকে

আরও পড়ুন