সিরাজদিখানে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মিস্ত্রীরা

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ১, ২০১৯, ১১:৫১ এএম সিরাজদিখানে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মিস্ত্রীরা
সিরাজদিখানে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত মিস্ত্রীরা

মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ডিঙ্গি নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মাঝি ও মিস্ত্রীরা। নিচু এলাকায় বর্ষার মৌসুমে ঘর থেকে বের হলেই প্রয়োজন হয় নৌকার। নাগরিক জীবনে এ কারণে কদর বেড়ে যায় কাঠের তৈরি এ যানটির। আবহমানকাল থেকে বর্ষার মৌসুমে কোষা নৌকা ব্যবহার করে আসছে। বর্ষার পানিতে যখন খাল-বিল ও বাড়ির চারপাশ থৈ থৈ করে তখন মানুষজন কোষা নৌকার মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করে।

বর্ষাকালে নিচু এলাকায় বসবাসকারী লাখো মানুষের চলাচলে এ সময়ে নৌকা গুরত্ব অপরিসীম। বর্ষার পানিতে প্লাবিত এসব এলাকার জেলেরা নৌকা দিয়ে রাত দিন মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। উপজেরার নিচু এলাকার বাসিন্দারা নৌকার মাধ্যমে খেয়া পার হয়ে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, স্কুল- কলেজ, হাট বাজারে পারাপার হয়ে থাকে। কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য বহনে কোষা নৌকাই তাদের একমাত্র ভরসা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার কাঠ মিস্ত্রীরা দিনের সবটুকু সময়ই ব্যয় করছেন নৌকা তৈরিতে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও রাস্তার পাশে এখন নৌকা তৈরি ও বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। উপজেলার  ইমামগঞ্জ বাজার, মালখানগর এবং ইছাপুরা বাসস্ট্যান্ডের পাশে গড়ে উঠেছে ডিঙি ও কোষা নৌকা তৈরি ও বিক্রির বাজার। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ক্রেতারা তাদের পছন্দসই নৌকা এখান থেকে কিনে থাকেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে এ নৌকার ব্যবহার কমলেও এ পেশার সঙ্গে সংশিষ্টদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করার দাবি জানিয়েছে নির্মাণকারীরা। এক সময় বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় পালতোলা নৌকা চলতো। বিভিন্ন হাট বাজারে মালামাল আনা নেয়ার জন্য ডিঙ্গি নৌকার ব্যবহার হতো।

কারিগরদের নৌকা তৈরি ও ক্রয়-বিক্রয়ের কার্যক্রমকে ঘিরে জড়িয়ে রয়েছে জীবন-জীবিকা। সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষ্ণ মন্ডল জানান, নৌকা তৈরি এটা আমাদের পারিবারিক পেশা। ছোট বেলা থেকেই বাবার সাথে নৌকা তৈরির কাজ করছি। বর্ষা এলেই নৌকা তৈরির কাজ বেড়ে যায়। এটি তৈরিতে বিশেষ কোন কাঠ নিদিষ্ট ভাবে ব্যবহার হয় না। আগে ভালো কাঠ দিয়ে  তৈরি করতাম। এখন কড়াই, চাম্বল ও মেহগনি দিয়েই বেশি নৌকা তৈরি করি। এটি তৈরিতে কাঠ ছাড়াও মাটিয়া তৈল, আলকাতরা, তারকাটা, গজাল, পাতাম ইত্যাদি লাগে যা নৌকাকে দীর্ঘ দিন টিকসই রাখে। দুই জনে প্রতিদিন দুইটি ডিঙ্গি নৌকা তৈরি করতে পারি। ভালো একটি নৌকা তৈরিতে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা খরচ হয়। বিক্রি হয় ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকায়। তবে বিলে পানি না থাকায় আগের মতো নৌকার চাহিদা নেই।’

সিরাজদিখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশফিকুন নাহার দৈনিক জাগরণকে বলেন, কোষা নৌকা নির্মাণ ও ব্যবহারের সুদীর্ঘকালের ঐতিহ্য রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী এ বাহনকে ধরে রাখতে এবং নির্মাণ শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই কোষা নৌকাসহ নির্মাণ শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

টিএফ