কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন আর কত দূর?

সাকলাইন যোবায়ের, কুমিল্লা প্রকাশিত: আগস্ট ১, ২০২১, ১০:৩২ এএম কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন আর কত দূর?

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও বিভিন্ন অনলাইনে ভাইরাল হয়ে পড়েছে যে কুমিল্লা কুমিল্লা বিভাগ হচ্ছে। হাটে, মাঠে-ঘাটে, সবার আলোচনা ছিল কুমিল্লা বিভাগ হচ্ছে। কিন্তু কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা না হয়ে ৩ টি নতুন উপজেলা গঠন করা হয়েছে।

কুমিল্লা টাউন হলে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিভাগ ভেঙে কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।  

কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের জন্য ৬১ বছর ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন কুমিল্লাবাসী। এখানে বিভাগ পরিচালনার প্রয়োজনীয় কার্যালয়ও রয়েছে। শুধু বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশের ডিআইজি রেঞ্জের কার্যালয় স্থাপন করলেই বিভাগের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

সূত্রমতে, কুমিল্লায় জাতীয় ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় এবং কুমিল্লা-নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে গঠিত আঞ্চলিক অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি দফতর রয়েছে। 

কুমিল্লাকে বিভাগ করলে এ দফতরগুলোর মধ্যে অনেকটিই নতুন করে স্থাপন করতে হবে না। এগুলোকেই বিভাগীয় দফতর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ইতিমধ্যে বিভাগের অন্যতম অনুষঙ্গ কুমিল্লায় সিটি করপোরেশন স্থাপিত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে কুমিল্লার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অবস্থান।

এখানে পাবলিকসহ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যথা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড।

সরকারি মেডিকেল কলেজসহ পাঁচটি মেডিকেল কলেজ রয়েছে কুমিল্লায়। ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবির বলেন, ‘ কুমিল্লা বিভাগ সময়ের দাবি। কুমিল্লাকে বিভাগ করলে অনেক সরকারি দফতর নতুন করে স্থাপন করতে হবে না। এগুলোকেই বিভাগীয় দফতর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও পুলিশের ডিআইজি রেঞ্জের কার্যালয় স্থাপন করলেই বিভাগের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’

তিনি বলেন, দেশের সুপ্রাচীন সমৃদ্ধ জনপদ কুমিল্লা। সমতট অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র কুমিল্লা। সপ্তম শতাব্দী থেকেই কুমিল্লা অঞ্চল ছিল শিক্ষা-দীক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ। ওই সময় কুমিল্লার কোটবাড়ীতে শালবন বিহারসহ একাধিক জ্ঞানালয় গড়ে ওঠে; যা ছিল ওই সময়ে বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জ্ঞানার্জনের জন্য এখানে ছুটে আসতেন পন্ডিতরা।

১৯৮৯ সাল থেকে কুমিল্লা বিভাগের দাবি জানিয়ে আসা প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘১৯৬১ সালে লাকসামে প্রথমে কমিল্লা বিভাগের দাবি ওঠে। ১৯৮৯ সাল থেকে আমরা সাংগঠনিক দাবি করে আসছি। প্রথমে কুমিল্লা গণফোরাম, পরে বৃহত্তর কুমিল্লা গণদাবি পরিষদের ব্যানারে বিভাগের দাবি জানাই। ১৯৯৪ সালে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন পরিষদ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলেও কুমিল্লাকে প্রাধান্য দেওয়া হতো।

ব্রিটিশরা এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ জেলা হিসেবে কুমিল্লাকে বিবেচনা করতেন। যার কারণে এখানে তারা বিমানবন্দর, সেনানিবাসসহ বহু প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। ১৮৯০ সালে কুমিল্লা মিউনিসিপ্যালিটি (পৌরসভা) স্থাপিত হয়; যা এখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। ১৮৯০ সালে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে মাত্র চারটি পৌরসভা স্থাপন করা হয়। অন্যগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ।’ তিনি মনে করেন বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহের আগেই কুমিল্লা বিভাগের দাবিদার ছিল।

সাংবাদিক গোলাম কিবরিয়া জানান, সময়ের পয়োজনে কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ ছয় দশক ধরে কুমিল্লাবাসী দাবি জানিয়ে আসছেন। সর্বশেষ কুমিল্লা টাউন হলে এক জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গ বন্ধুর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বিভাগ ভেঙে কুমিল্লাকে বিভাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

কুমিল্লাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি আরও সামনে চলে আসে। এতে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবে রূপ পাবে বলে মনে করছেন তারা। তাই বৃহত্তর এ অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠী আশায় বুক বেঁধেছে কুমিল্লা বিভাগ এবার বাস্তবে রূপ নেবে।

কুমিল্লা সদর ৬ আসনের সংসদ সদস্য কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কুমিল্লাকে বিভাগ করার জন্য ৩০ মিনিট বক্তব্য রেখে জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং বিভাগের জন্য অনেক যুক্তি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী তখন মাথা নেড়ে হ্যাঁ সম্মতি দেন।

জাগরণ/এমআর/এমএ