ঠাকুরগাঁওয়ে সারের কৃতিম সংকট

সার বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি চাষিরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২১, ০৪:২০ পিএম সার বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি চাষিরা

কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশের উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। ধান,গম ও সব ধরনের সবজি উৎপাদনের জন্য বেশ পরিচিত এ জেলা। অন্যান্য জেলাগুলির তুলনায় এখানকার কৃষকরা স্বাবলম্বী হলেও বর্তমানে সার বিক্রেতাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন তারা। রাসায়নিক সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সাধারণ চাষিদের কাছে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সার সেন্ডিকেট চক্রটি।

কৃষকদের অভিযোগ ডিলাররা অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করছেন। তাই ধান ও সবজি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার অধিক দামে কেনার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাদের।
অভিযোগ রয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ে সার ব্যবসায় কৃষি বিভাগের তেমন তদারকি নেই। এতে করে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো দামে সার বিক্রি করছেন। সার ডিলারদের ক্যাশমেমোর মাধ্যমে চাষিদের কাছে সার বিক্রির নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রির কারণে তা করছেন না ডিলাররা। অদৃশ্য কারণে সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে এসব সার ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সার নিতে গিয়ে দাম নিয়ে কথা বললেই সারের সংকট রয়েওছে বলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সে কৃষককে। সার কেনার সময় ক্যাশ মেমো চাইলেই ডিলাররা বলেন সার নেই। আর বেশি দামে কিনলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়। এভাবে ডিলাররা বিভিন্ন ব্যবসায়ীর নামে শত শত বস্তা ক্যাশ মেমো করছেন। আর চাষিদের কাছে মেমো ছাড়া বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে কতৃপক্ষের দাবি সার প্রয়োজন মাফিক মজুদ রয়েছে।
 
ঠাকুরগাঁও বিএডিসির (সার) সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ২১১ জন ডিলারের অনুকূলে জুলাই মাসে টিএসপি সারের বরাদ্দ এক হাজার ৯৬, এমওপি এক হাজার ৮৬ টন, ডিএপি এক হাজার ৬১৯ টন। পর্যাপ্ত সার রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো ডিলার সার না পেয়ে ফেরত যাননি।

কৃষি বিভাগ ও বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে বাফার নিবন্ধিত ৬৩ জন ডিলার প্রতিটি ইউনিয়নে ইউরিয়া সার বিক্রি করবেন। অন্যদিকে, বিএডিসির ২১১ জন ডিলার শুধু নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বিক্রি করবেন। কৃষি বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ নিশ্চিত করবে বাফা ও বিএডিসি। তবে বিএডিসির ২১১ জন ডিলারের মধ্যেই বাফার ৬৩ জন ডিলার অন্তর্ভুক্ত। তারাই সব প্রকার সারের বরাদ্দ পান। বাকিরা শুধু নন-ইউরিয়া সারের বরাদ্দ পান।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দানারহাট এলাকার চাষি মাজেদুর বলেন, শিবগঞ্জ ও পল্লী বিদ্যুৎ, ভাউলারহাট, রোড বাজারে বিএডিসির ডিলার, বাফারসহ কয়েকটি দোকানে সার কিনতে গিয়েছিলাম। তারা বস্তায় সরকারের দামের চেয়ে ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দাম নিলেও ক্যাশ মেমো দিচ্ছে না।

সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কৃষক বেলাল হোসেন বলেন, সার নিয়ে কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে তদারকি নেই। ডিলাররা নিজেদের সুবিধার্থে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।

বিএডিসি ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম ভাসানী বলেন, সার ডিলারদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। তবে সমিতি আছে। নিয়ম অনুযায়ী ডিলাররা সার উত্তোলন করে সরকারি দরেই বিক্রি করছেন। তবে চাহিদার চেয়ে টিএসপি ও এমওপি সারের সরবরাহ কম। সেজন্য কেউ বেশি নিতে পারে। যারা বেশি নিচ্ছেন, তারা অন্যায় করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, অভিযোগ পেয়ে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের তদারকি জোরদার করা হয়েছে। কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার লাইসেন্স বাতিল করা হবে।