নৈশ প্রহরী ও ফার্মাসিস্টকে কারণ দর্শানো নোটিশ

ডাক্তারের টেবিলের উপরে কুকুর

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১০, ২০২১, ০৩:৪৮ পিএম ডাক্তারের টেবিলের উপরে কুকুর

কোটালীপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি

অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে ছিলেন সুমন শেখ (৩৫) নামে এক যুবক। জরুরী বিভাগে এসে দেখেন ডাক্তার, নার্স বা কর্তব্যরত কোন ব্যক্তি রুমে নেই। ডাক্তারের টেবিলের উপর শুয়ে আছে নেড়ি একটি কুকুর। এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন সুমন শেখ। পরবর্তীতে সুমন শেখ মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডি থেকে পোস্ট করেন । মূহুর্তেই ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিটিতে দেখা যায় ডাক্তারের টেবিলের উপরে উঠে একটি নেড়ি কুকুর ঘুমিয়ে রয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ছবিটি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের। গত রোববার দিবাগত রাত ১১টা সুমন শেখ ছবিটি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন।

সুমন শেখ উপজেলার পিঞ্জুরী গ্রামের মৃত মইয়ার আলী শেখের ছেলে। এ ঘটনায় সুমন শেখসহ অনেকেই ওই রাতে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত বৈদ্য ফার্মাসিস্ট দিপক বিশ^াস ও নৈশ প্রহরী হালিম শেখকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন। সঠিক ভাবে নোটিশের জবাব না দেওয়া হলে দায়িত্বে অবহেলার কারণে এই ২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

আজ মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, ওই রাতে (৮ আগস্ট) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাজিয়া সুলতানা লোপা, ফার্মাসিস্ট দিপক বিশ^াস ও নৈশ প্রহরী হালিম শেখ জরুরী বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু জরুরী বিভাগে কেহ না থাকার কারণে একটি নেড়ি কুকুর চিকিৎসকের টেবিলের উপরে উঠে ঘুমিয়ে পড়ে।

সুমন শেখ বলেন, গত রোববার দিবাগত রাত ১১টার দিকে আমার অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসি। জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখি কেউ নেই। ডাক্তারের টেবিলের উপরে একটি কুকুর ঘুমিয়ে আছে। আমি তখন এই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করি। এরপর অনেক ডাকাডাকি পরে ফার্মাসিস্ট দিপক বিশ^াস ও নৈশ প্রহরী হালিম শেখ এসে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তরকে ডেকে আনেন। এরপর ডাক্তার রাজিয়া সুলতানা লোপা আমার শাশুড়ির চিকিৎসা করেন। আমি দায়িত্বে অবহেলাকারীদের শাস্তি দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্তব্যরত ব্যক্তিদের সকলের আচারণই খারাপ। এরা অধিকাংশ সময়ই রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এদের আচার আচারণের কারণে অনেক রোগীই এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন না। আমরা চাই এরা সেবার মনোভাব নিয়ে আমাদের চিকিৎসা করুক।

ফার্মাসিস্ট দিপক বিশ^াস বলেন, আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট পদে চাকুরী করি। জনবল কম থাকার কারণে আমাকে জরুরী বিভাগে ডিউটি করতে হয়। ওই রাতে অল্প সময়ের জন্য আমি ও নৈশ প্রহরী হালিম শেখ জরুরী বিভাগের পাশে ১০২ নম্বর রুমে গিয়ে ছিলাম। এর ফাঁকে জরুরী বিভাগের ডেবিলের উপর একটি কুকুর উঠে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি এসে কুকুরটি দেখতে পেয়ে তাড়িয়ে দেই।

ডা. রাজিয়া সুলতানা লোপা বলেন, জরুরী বিভাগ দেখার দায়িত্ব ফার্মাসিস্ট ও নৈশ প্রহরীর। আমরা রাতে জরুরী বিভাগের পাশে ডাক্তারদের যে রুম আসে সেখানে থাকি। রোগী আসলে ফার্মাসিস্ট ও নৈশ প্রহরীরা আমাদের ডেকে নেয়। টেবিলের উপরে কুকুর উঠে ঘুমানোর বিষয়টি আমি দেখেনি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুশান্ত বৈদ্য বলেন, জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তারের টেবিলের উপরে কুকুর উঠে ঘুমানোর ছবিটি আমি দেখেছি। দায়িত্বে অবহেলার কারণে ওই রাতে কর্মরত ফার্মাসিস্ট দিপক বিশ^াস ও নৈশ প্রহরী হালিম শেখকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা ২জনে সন্তোসজনক জবাব না দিতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।