রূপগঞ্জের কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের মানবেতর জীবন

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১, ০৯:৫১ এএম রূপগঞ্জের কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের মানবেতর জীবন

করোনার প্রভাবে গত ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে আছে রূপগঞ্জের ২৫৭ টি কিন্ডারগার্টেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোর ৪৫০০ শিক্ষক বর্তমানে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সরকারী বেতন-ভাতা থাকলেও ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে উঠা এসব বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তা-না থাকায় হিমশিম খাচ্ছেন। 

এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিমাসে শিক্ষার্থীদের দেড় কোটি টাকার উপড়ে বেতন প্রদান করেন। তবে এসব বেতন শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকা থেকেই প্রদান করেন প্রতিষ্ঠান মালিকপক্ষ। করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির এমন চরম বিপর্যয়ের পর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বন্ধ থাকাকালীন মাসের বেতন পরিশোধ করবেন কিনা তা-নিয়েও সন্দিহান। ফলে চরম সংকটে পড়বেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা। সংকট কাটিয়ে উঠতে সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষক সরকারের সহযোগীতা পাওয়ার দাবী জানিয়েছেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপগঞ্জ উপজেলার ২৫৭ টি কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। উপজেলার এসব স্কুলের কোন প্রতিষ্ঠানে ৩২ জন। কোনটাতে ২০ জন। আবার কোনটাতে ১০ জন শিক্ষক রয়েছেন। সে হিসাবে গড়ে ২৫৭ টি প্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষক রয়েছে। বেতনের ক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠান ২০ হাজার। আবার কোন প্রতিষ্ঠান ৫০ হাজার। কোনটা আবার এক লাখ টাকা বেতন প্রদান করেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  শিক্ষকরা পেলেও কিছু প্রতিষ্ঠান এখনো পাননি। তবে মার্চ থেকে শুরু করে চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত স্কুল বন্ধ থাকার ফলে বেতন শিক্ষকরা পাবেন কিনা তা-নিয়ে সন্দিহান। কিংবা আরো কয়মাস স্কুল বন্ধ থাকে তা-নিয়েও চিন্তিত স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা। শিক্ষকরা বলছেন, যেহেতু মহামারীর কারণে স্কুলগুলো বন্ধ ছিলো। সেক্ষেত্রে অভিভাবকরা বেতন যদি দিয়ে উঠেন, তাহলে হয়তো মালিকপক্ষ বেতন পরিশোধ করবেন। 
মাস চারেক আগে বিয়ে করেছেন তরুণ আশ্রাফউদ্দিন। নগরপাড়া এলাকার ব্রাইট শিশু কানন হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। পাশাপাশি টিউশনি। এদিয়ে চলে যেতো শিক্ষক আশ্রাফউদ্দিনের সংসার। কিন্তু করোনা কুপোকাত দিয়েছে এ শিক্ষকের নতুন সংসার জীবন। স্কুল বন্ধের পাশাপাশি টিউশনিও বন্ধ। এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন তিনি। 

তিনি বলেন, কেজি স্কুলের বেতন আর কতো সবাইর জানা। তবুও চলে যেতো, প্রাইভেট পড়িয়ে। স্কুলের যখন বেতন দেয়ার সময় হয়েছে তখনই হঠ্যাৎ স্কুল বন্ধ করে দিতে হলো। যদি অভিভাবকরা খুশি হয়ে দেয় তাহলে হয়তো পাবো। আর না দিলে মালিককেতো কিছু বলা যাবেনা। কামশাইর ঈমান ভূঁইয়া ক্রিয়েটিভ স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ মমিন মিয়া বলেন, আমাদেরতো ভরসাই স্কুল আর প্রাইভেট। করোনার কারণে প্রাইভেটও বন্ধ। এখন না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে। সকলের মতো সরকার যদি আমাদের প্রণোদনা দিতেন তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতাম। 

ইছাখালী সুফিয়া খাতুন মডেল স্কুলের মালিক ফিরোজ ভূঁইয়া বলেন, করোনার প্রভাবে বিপদ হয়ে গেলো। শিক্ষকদের বেতন নিয়ে টেনশনে আছি। আমাদেরতো ছাত্রছাত্রীদের বেতন দিয়েই চলতে হয়। রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বিয়টা ভাববার। কিন্তু মহামারীতেতো কারো হাত নেই। সুতরাং অভিভাবকরাও বিষয়টা দেখবেন এটা আশা রাখি। 

জাগরণ/এমআর