মাস্ক ব্যবহারে অনীহা, বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

দিনাজপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০২২, ০৫:২৭ পিএম মাস্ক ব্যবহারে অনীহা, বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

করোনা মহামারির নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তাররোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খেতে বা খাবার কিনতে হলে প্রদর্শন করতে হবে করোনা টিকার সনদ (কার্ড)।

গত ১৩ জানুয়ারি থেকে এই নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে করোনা টিকা সনদ দেখার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেই। কোথাও মানা হচ্ছে না বিধিনিষেধ, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও এটা ছাড়াই চলছে অধিকাংশ মানুষ।

শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা দিয়েছে। গণপরিবহনগুলোতেও সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক ব্যবহার নেই বললেই চলে। যে যার মতো করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাচল করছে। ফলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব ও দেশে এ রোগের সংক্রমণ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের গত ১০ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিস্তার রোধে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা ১৩ জানুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সার্বিক কার্যাবলী চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ মতে, দেশের ১২টি জেলা করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুকিতে রয়েছে,এর মধ্যে দিনাজপুর জেলাও রয়েছে। এনিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন এই অঞ্চলের মানুষ।

এদিকে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যবিভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরার্মশ দিলেও তা মানছেন না কেউ। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতামুলক মাইকিং করেলেও মাস্ক ব্যবহারে সচেতন হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। 

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। 

সরেজমিনে, খাবারের হোটেল বা রেস্তোরায়ঁ টিকা সনদ দেখার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে অনেকে গাদাগাদি করে মানুষ হোটেলে বসে খাচ্ছেন এবং খাবার কিনছেন। মাস্ক ছাড়াই খাবার পরিবেশন করছেন হোটেলের কর্মচারীরা। কোথাও নেই টিকা সনদ দেখার ব্যবস্থা। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নেই কোনো নজরদারি। পৌর শহরের খাবারের হোটেলগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র।মাস্ক ছাড়াই সাধারণ মানুষ অবাধে ঘোরাফেরা করছেন। 

পৌর শহরের রাজধানী হোটেলের ম্যানেজার ইমরান হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি পুরোপুরি অবগত নন। প্রসাশনের তৎপরতা না থাকার কারণে এখনও সেরকমভাবে দেখা হচ্ছে না টিকা সনদ। অনেকে এখনও টিকা দিতে পারেননি। আবার কেউ কেউ দিয়েছেন কিন্তু সনদ সঙ্গে আনেননি, কেউ আবার একটি টিকা দিয়েছেন। এসব নানা কারণে টিকা সনদ দেখাতে পারছেন না ক্রেতারা। ওই হোটেলে নাশতা করতে আসা একজন বলেন, তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বের হবার কারণে টিকা সনদ সঙ্গে আনতে পারেননি। এরপর থেকে খাবার খেতে এলে নিয়ে আসবেন।

ঢাকা বিরানী হাউজ এর কর্মচারী শাহিন বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এর পর থেকে বিষয়টি যাচাই করবেন। ওই দোকানে খেতে আশা ইশিতা জামান বলেন, হোটেল মালিকরা আমাদের কাছে কখনো টিকা সনদ দেখতে চাননি তাই সঙ্গে আনেননি। রহমানিয়া খাবার হেটেলের মালিক জিয়াউর রহমান, বরকোতিয়া হেটেলের ম্যানেজার সাইদ রানাসহ কয়েকজন হোটেল মালিক বলেন, এই বিধিনিষেধের ব্যাপারে তারা কিছু জানেন না। এরপর থেকে তারা বিষয়টি মেনে চলবেন। 

ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভ্যাক্সিনের জন্য এই উপজেলায় এ পর্যন্ত এক লাখ ২৩ হাজার ৫৯৩ জন নিবন্ধন করেছেন। প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন এক লাখ ৯ হাজার ১২১ জন। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৭৭ হাজার ১২৯ জন। করোনার বুস্টার ডোজ গ্রহণ করেছেন এক হাজার ৭৮৪ জন। ১২-১৮ বছরের ছাত্র-ছাত্রীদের ১৬ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। তাদের জন্য আরো ৫ হাজার টিকার চাহিদা দেয়া হয়েছে। মোট করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৬৯৭জন। এরমধ্যে ৬৮২ জন সুস্থ হয়েছেন আর মারা গেছেন ১৩ জন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় একজনসহ বর্তমানে মোট ২ জন আক্রান্ত রয়েছেন, যা গত এক মাস আগেও শূন্যের কোঠায় ছিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন,করোনা বিষয়ে সরকারি বিধিনিষেধ সম্পর্কে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতনতা সৃষ্টি এবং মাইকিং করে প্রচার করা হচ্ছে। ঘুব শীঘ্রই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মশিউর রহমানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সবাইকে সচেতন করতে বারবার প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে গেলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ ঠিকমতো বিধিনিষেধ মানছেন না। যেহেতু স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের জেলাকে উচ্চঝুঁকির মধ্যে ধরা হয়েছে, সেহেতু সবাইকেই সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। নয়তো সামনে আরো বড় ধরনের সমস্যার আশঙ্কা রয়েছে।