গোপনে ‘লিঙ্গ’ পরিবর্তন, সুবলকে দেখতে মানুষের ঢল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২, ০৪:২০ পিএম গোপনে ‘লিঙ্গ’ পরিবর্তন, সুবলকে দেখতে মানুষের ঢল

ঠাকুরগাঁওয়ে স্বেচ্ছায় লিঙ্গ পরিবর্তন করে ছেলে থেকে রুপান্তরিত মেয়ে হয়েছেন একজন। এ নিয়ে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার থুমনিয়া গ্রামে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে তাকে এক নজর দেখতে ।

১৯৯৯ সালের ২৭ জানুয়ারি থুমনিয়া গ্রামে ছেলে হয়ে জন্ম নেয় সুবল শীল। সেখানকার পরিবেশে বড় হয়ে উঠেন। কিশোর বয়সে সুবলের আচরণ ছিল কিছুটা মেয়েদের মতো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুতুল খেলা সহ আলতা, শাড়ি, চুড়ি পড়তে ভালো লাগতো তার । এ জন্য পাড়ার বন্ধুরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। নিজের এ ধরনের অস্বাভাবিক ইচ্ছে নিয়ে নানা প্রশ্ন আসতো তার মনে। নিজের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে এর পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে অস্ত্রপচার করে নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন করে সুবল শীল থেকে হয়েছেন মেধা শর্মা।

পুরুষ থেকে রুপান্তরিত নারী হওয়া মেঘা শর্মার মা আলো রানী ও বাবা জগেশ শীল বলেন, সুবল যখন ছোট তখন থেকে তার আচরণ কিছুটা মেয়রদের মতো। বড় হবার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে। মেয়েদের মতো সাজগোজ করতে তার ভালো লাগতো। আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। অনেক চেষ্টা করেও তার মেয়েদের মত আচরণ আমরা পাল্টাতে পারিনি। এমন স্বভাব পাল্টাতে অনেক গালমন্দও করতাম। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। 

অবশেষে আমার ছেলে এখন পরিপূর্ণ মেয়ে।

মেঘা শর্মাকে দেখতে মানুষের ঢল

রুপান্তরিত নারী হওয়ার সিদ্ধান্তে প্রথমে রাজি হননি বাবা মা। পরবর্তীতে সন্তানের সুখ মনে করে সন্তানের ইচ্ছাকেই মেনে নিয়েছেন তারা। এখন পরিবারের সবার সাথেই মিলেমিশে রয়েছেন তারা। মেঘার পরিবারে বাবা-মা, দাদি সহ রয়েছে আরও একভাই ও এক বোন। তারাও মেঘাকে সহযোগিতা করছেন বলে জানিয়েছেন মেঘা।

মেঘা শর্মা জানান, লিঙ্গ পরিবর্তন চিকিৎসাকালীন পরিবার ব্যতিত সবার কাছে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন তিনি। হঠাৎ বাড়িতে এসে পাড়ায় জানাজানি হলে সবাই তাকে দেখতে বাড়িতে ভিড় জমায়। অনেকেই খারাপ মন্তব্যবও করে। আবার অনেকে সাপোর্টও করে অনুপ্রেরণা জোগায়।

তিনি বলেন, সবকিছুর উর্ধ্বে আমার ইচ্ছাশক্তি আর আমার স্বপ্ন। আমার পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছে। আমি আমার পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করতে চাই। সমাজের অধিকাংশ মানুষ মনে করছে আমি এখন সমাজের বোঝা। কিন্তু আমি আমার কাজ দিয়ে এ ধারণা বদলাতে চাই।

নিজেকে একজন এয়ার হোস্টেজ হিসেবে দেখতে চান মেঘা শর্মা। পাশাপাশি করতে চান মডেলিংও। সেই সাথে রুপান্তরিত নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে চান নিজে নেতৃত্ব দিয়ে।

জেলার সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা মনে করেন, মেঘা শর্মার পরিচয় সে একজন মানুষ। তার ইচ্ছা, তার স্বপ্ন পূরণ করতে সমাজের সব মানুষের এগিয়ে আসা উচিৎ। তাকে কটাক্ষ না করে তাকে সহযেগিতা করা উচিৎ। আর দশজন সাধারণ মানুষের মত তারও সমঅধিকার নিশ্চিৎ হবে সমাজে এটাই প্রত্যাশা করি।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জেন ডা. নুর নেওয়াজ বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞান দিন দিন উন্নত হচ্ছে মানব সেবার স্বার্থে। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের যে সকল চিকিৎসা,সার্জারি অথবা হরমনাল বেলেন্স সব কিছুতে যে চিকিৎসা গুলো বাংলাদেশে হচ্ছে এ চিকিৎসা গুলো অবশ্যই উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের সার্জনরা, মেডিকেল স্পেশালিস্ট, সার্জিকাল স্পেশালিস্টরা বোর্ড করে হরমনাল এক্সেসমেন্ট করে ট্রান্স জেন্ডারি হোক বা সেটা মেয়ে থেকে ছেলে কিংবা ছেলে থেকে মেয়েই হোক এ চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিচালন করেন। 

আমাদের দেশের পিজি হসপিটাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, রাজশহী মেডিকেল কলেজ সহ উন্নত হসপিটাল গুলোতে হয়ে এ চিকিৎসা এবং সার্জারি হয়ে থাকে। এটাকে আমাদের স্বাভাবিক ভাবে নিতে হবে যা চিকিৎসারি একটা ধাপ।  এ ধাপকে আমরা সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো। এখানে কোন প্রকার কুৎসা বা কুসংস্কার ধরে রাখবো না আর এ ধরনের চিকিৎসা নেওয়া মানুষদের সাবাভাবিক জীবন মান বজায় নিতে আমাদেরই স্বাভাবিক ভাবে তাদের এগিয়ে নিরেয় যেতে হবে।