লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গাড়ি চলাচলে গতিসীমা নির্ধারণ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২২, ০১:১৩ পিএম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গাড়ি চলাচলে গতিসীমা নির্ধারণ

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি 
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে কমলগঞ্জ - ভানুগাছ সড়ক পথে বন্যপ্রাণী রক্ষায় গাড়ির সর্বোচ্চ ২০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ করছে বন বিভাগ। 
 
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সকালে বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস উপলক্ষে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ (ভানুগাছ- শ্রীমঙ্গল) সড়কে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুরোধে এই গতি নির্ধারণ করেন। বনের সড়কের উভয় পাশে দুটি চেকপোস্ট থাকবে, যাতে বনের ভেতর গাড়ি প্রবেশ করলে তার গতি নিয়ন্ত্রিত থাকে।

লাউয়াছড়া চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ ধরনের বন। এখানে বড়-বড় বৃক্ষ গুল্ম, ঝোপঝাড়, বাঁশ, বেতসহ বিভিন্ন লতাগুচ্ছ দেখা যায়। এই উদ্যানে প্রায় ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ, চার প্রজাতির উভচরপ্রাণি, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী ও ২৪৬ প্রজাতির পাখিসহ শতাধিক প্রজাতির প্রজাপতি ও কীটপতঙ্গ রয়েছে। সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের এক অপরূপ আধার এই লাউয়াছড়া বন।

বনের ভেতরের এ সড়ক সরানো এবং ট্রেনের গতি সীমিত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে জানিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, লাউয়াছড়া বনের ভেতরে চলে যাওয়া সড়কে যদি ২০ কি.মি. গতিতে যানবাহন চলাচল করে তবে বন্যপ্রাণী রক্ষা পাবে। 

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নানান কারণে হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার প্রাণিকুল। লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে ৩৩ হাজার কেভি বিদ্যুৎ লাইন টানা রয়েছে। ঢাকা -সিলেট রেলপথ, শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার সংযোগ সড়ক, বিদ্যুৎ লাইনে বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ রাখতে কাভার লাগানোর জন্য বন বিভাগ বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে। ৪ অক্টোবর বিশ্ব প্রাণী দিবস উপলক্ষে প্রাণীদের রক্ষায় সরকারের জোরালো পদক্ষেপ কামনা করেছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও।

বন গবেষক, স্থানীয় সূত্র, গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায় বিগত প্রায় ১০ বছরে লাউয়াছড়া বনের প্রায় ৩০ শতাংশ গাছ উজাড় হয়ে গেছে। ১ হাজার ২৫০ হেক্টর আয়তনের চিরহরিৎ উদ্যান থেকে। ফলে খাদ্য সংকটসহ আবাসস্থল নষ্ট হওয়ায় প্রাণীরা লোকালয়ে বেরিয়ে আসছে। 

বনবিড়াল, সাপ, বানররা বনের আশপাশের গ্রামগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়, কখনো গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ছে, মারাও যাচ্ছে। 

শ্রীমঙ্গলের বন্য প্রাণী সেবা সংস্থা, বন বিভাগের তথ্য অনুসারে গত ১ বছরে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়েছে ১০টি গন্ধগোকুল, বিভিন্ন জাতের ৫০টি সাপ, ৫টি হরিণ শাবক, ৫টি মেছো বিড়াল, ৭টি লজ্জাবতী বানর এবং ৫০টি পাখিসহ প্রায় দুই শতাধিক আটক ও আহত বন্য প্রাণী।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে। লাউয়াছড়ার ভেতরের রেলপথের ও সড়কের দুপাশে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করে প্রাণীদের চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য। 

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহাদ মিয়া বলেন, লাউয়াছড়ার বন্য প্রাণীরা এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জরুরী ভাবে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

শ্রীমঙ্গলের বন্য প্রাণী সেবা সংস্থার পরিচালক স্বপন দেব সজল জানান, ২০১২ সাল থেকে লোকালয়ে বেরিয়ে আসা ও আহত প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রাণী তার সংস্থার মাধ্যমে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করেছেন।

লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, বন্য প্রাণীদের সুরক্ষায় ইতিমধ্যে উল্লুককসহ বানর প্রজাতির প্রাণীদের জন্য পাঁচটি সেতু তৈরি করা হয়েছে। 

জাগরণ/আরকে