যৌতুকের দাবিতে চুল কেটে নির্যাতন, থানায় নেয়নি অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২২, ২০২২, ০৭:৩৭ পিএম যৌতুকের দাবিতে চুল কেটে নির্যাতন, থানায় নেয়নি অভিযোগ

যৌতুকের দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় গৃহবধূর চুল কেটে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। নির্যাতনের বিচার চেয়ে স্থানীয় থানার দ্বারস্থ হলেও থানা পুলিশ মামলা না নেওয়ায় নিরুপায় হয়ে নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত-১-এ মামলা দায়ের করেন নির্যাতিত গৃহবধূ।

মামলা করার প্রায় এক মাস হয়ে গেলেও কোনো বিচার না পাওয়ায় অসহায়বোধ করছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার দিনমজুর বাবার পরিবার। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, আদালত থেকে মামলার বিষয়ে থানায় কোনো নির্দেশনা আসেনি বা ওই গৃহবধূ থানায় কোনো অভিযোগও করেনি।

মামলাসূত্রে জানা যায়, গত ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার মধুপুর গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে ফিরোজ হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী ভাণ্ডারপুর দিঘিরপাড় গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে হাছিনা বেগমের (২৬)। বিয়ের দিন জামাইকে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসা করার জন্য এক লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দেয় হাসিনার বাবা।

বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই ফিরোজ হোসেন আরও এক লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য তার স্ত্রী হাছিনা বেগমকে বলে। হাছিনা দাবি মেনে না নেওয়ায় স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন তার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে নানান সময়।

নির্যাতনের একপর্যায়ে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি স্বামী ফিরোজ হোসেন, তার মামা ফজলু হোসেন এবং খালা শেফালী বেগমের প্ররোচনায় তাদের সঙ্গে নিয়ে আবার যৌতুকের এক লাখ টাকা এনে দেওয়ার জন্য হাছিনা বেগমকে চাপ প্রয়োগ করে।

এ সময় হাছিনা বেগম আকুতি নিয়ে বলেন, আমার বাবা দিনমজুর। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ নেই। কথা বলার একপর্যায়ে বেল্ট দিয়ে হাছিনার সারা শরীরে এলোপাতাড়ি মারপিট করতে থাকে ফিরোজ। এ সময় হাছিনা চিৎকার করতে থাকলে তারা মুখে কাপড় গুঁজে আবারও নির্যাতন করে হাছিনাকে। নির্যাতনের একপর্যায়ে হাছিনা অজ্ঞান হয়ে পড়লে স্বামী ফিরোজ হোসেনের মামা ও খালার নির্দেশে হাছিনার মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলা হয়। হাছিনার ওপর চলা নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে হাছিনার জ্ঞান ফিরে এলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ঘটনার পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি সকালে গৃহবধূ হাছিনা বেগম রানীনগর থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা বা অভিযোগ নেয়নি। পরে নিরুপায় হয়ে নির্যাতিত গৃহবধূ ২৮ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত-১-এ মামলা দায়ের করেন।

গৃহবধূর বাবা হোসেন আলী বলেন, আমি একজন দিনমজুর। অনেক কষ্টে মেয়েকে বিয়ে ও জামাইয়ের চাহিদামতো যৌতুক দিয়েছিলাম।

জামাইয়ের পরিবারের চাহিদামতো যা পেরেছি নানা সময় সাধ্যমতো দিয়েছি। তবুও বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই আমার মেয়েটাকে আবারও যৌতুকের জন্য চাপ ও নির্যাতন করে আসছিল। তবুও মেয়েটা সহ্য করে সংসার করছিল। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জামাই ফিরোজ হোসেন, তার মামা ফজলু হোসেন এবং খালা শেফালী বেগম আমার মেয়ে অনেক নির্যাতন করে যৌতুকের জন্য। তারপর বাড়ি থেকে বের করে দেয় মেয়েটাকে।

থানায় গেলে পুলিশ মামলা বা অভিযোগ নেয়নি। তাই আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত থেকে তদন্ত করার জন্য রিপোর্ট বা আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়। এতদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো সুষ্ঠু বিচার পাচ্ছি না আমরা।

গৃহবধূ হাছিনা বেগম বলেন, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই বুঝতে পারলাম স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন যৌতুকলোভী। নানান সময় তারা টাকা দাবি করে আসছিল। টাকা দিতে না পারায় গত কয়েক বছরে কতবার যে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা বলা মুশকিল।

সর্বশেষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি আমার স্বামীসহ তার মামা ফজলু এবং খালা শেফালীর প্ররোচনায় বেল্ট দিয়ে আমার শরীরে মারপিট করে। আমি চিৎকার করতে থাকলে তারা মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে আবারও নির্যাতন করতে থাকে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে রানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহিন আকন্দ বলেন, ওই গৃহবধূসহ পরিবারের কেউ এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তারা যদি থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতো তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হতো। আর আদালতে মামলা করেছেন, এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। আদালত থেকে কোনো নির্দেশনা বা তদন্ত করার জন্য কোনো চিঠিও পাইনি আমরা। আদালতের নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ইউএম