কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজ মজুদে ব্যস্ত ফড়িয়ারা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি প্রকাশিত: এপ্রিল ৪, ২০২২, ০১:৫৯ পিএম কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজ মজুদে ব্যস্ত ফড়িয়ারা

কুষ্টিয়া জেলার অন্যতম বড় পেঁয়াজের হাট কুমারখালীর বাঁশগ্রাম। প্রতি বৃহস্পতিবার বাজার বসে এখানে। ভোরের আযান হতে হাটে হাকডাক শুরু হয়ে যায়। জেলার নানা প্রান্ত থেকে থেকে ভ্যান, নসিমন, সাইকেলসহ নানা যানবাহনে বস্তা বস্তা পেঁয়াজ আসছে। চারিদিকে শোরগোল। ক্রেতা আর বিক্রেতাদের দর দামে সরব হয়ে ওঠে বাজার। এ বছর পেঁয়াজের ভালো ফলন পেয়ে খুশি কৃষকরা, তবে বাজারে এসে মন খারাপ কৃষকদের । গতবারের থেকে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম কমেছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা । 

কৃষকরা বলছেন, গত দুই বছর ভালো দাম ছিল পেয়াজের। এবার উৎপাদনে যে খরচ হয়েছে তাও উঠছে না। প্রতি কেজি ৮ থেকে ১৫ টাকা তাদের লোকসান হচ্ছে। রাখার জায়গা না থাকায় অনেকেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন। কৃষকদের মন খারাপ থাকলেও ফুরফুরে মেজাজে ফড়িয়া ও ব্যবসায়ীরা। কম দামে পেয়াজ কিনে শহরে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। পাশাপাশি তারা মজুদ করছেন গোডাউনে। সুযোগ বুঝে এসব পেঁয়াজ তারা তা দামে বিক্রি করে ফায়দা লুটবেন। 

উপজেলার কয়েকটি এলাকার কৃষক ও হাট ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৬০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার ৬০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে বীজ, কীটনাশক, পরিচর্যা, শ্রমিক ও পরিবহন বাবদ খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। আবার বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি। এতে প্রতি কেজিতে কৃষকের ৮ থেকে ১৫ টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রতি মন পেঁয়াজ ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রি করতে পারলে তাদের লাভ হতো বলে জানান কৃষকরা। 

বাঁশগ্রাম বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কৃষক ইন্তাজ আলী বলেন, আল্লাহর রহমতে পেঁয়াজ ভাল হয়েছে । তবে বাজারে দাম পড়ে গেছে । লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের । তবে লাভ হচ্ছে ব্যাপারী ও ফড়িয়াদের। তারা কম দামে কিনে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছে। আবার মজুদ করছে। বাঁশগ্রামের মত প্রতি শুক্রবার উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের পান্টি ডিগ্রি কলেজ মাঠে সাপ্তাহিক পেঁয়াজের হাট। এ বাজারেও কৃষক, ব্যবসায়ীদের পদচারণে মুখরিত কলেজের সবুজ চত্বর । আকার আকৃতি মানভেদে প্রতিকেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে । 

হাটে আসা কৃষকরা জানায়, এবার পিঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বাইরের দেশ থেকে পিঁয়াজ আমদানি করায় দাম কম। কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। 

যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের কৃষক ফজলু শেখ বলেন, ১১ মণ পিঁয়াজ হাটে এনেছিলাম । প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি । যা উৎপাদন ব্যয় থেকে ১৫ টাকা কম। এতে করে মন খারাপ। রমজান মাস শুরু হয়েছে। বাড়িতে কেনাকাটা রয়েছে। দোকানে বাকি আছে। এখন পেঁয়াজ আবাদ করে পথে বসার উপক্রম। গত বছর একই সময়ে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম ছিল হাজার টাকার বেশি। পরে এ দাম আরো বাড়ে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে দাম বেড়ে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে এবার সেই দিন নেই। চিত্র পালটেছে। 

বছরের শুরুতেই কৃষকরা ধাক্কা খাওয়ায় সামনে পেঁয়াজ উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বেশির ভাগ কৃষক। এছাড়া এক সাথে সারাদেশে পেঁয়াজ বাজারে আসায় চাহিদা কম। 

ব্যবসায়ীরা বলেন , আকার আকৃতি ও মান ভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ পেঁয়াজ কেনাবেচা হচ্ছে । এবার পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি ও বাইরের পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দাম কম। 

জেলা খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপ - পরিচালক ( ফসল ) বিষ্ণুপদ সাহা বলেন , জেলায় এ বছর পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা চাষ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার হেক্টর। আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩০ হেক্টর। যা প্রায় ১ হাজার হেক্টর বেশি।

জাগরণ/আরকে