প্রেমের টানে পাড়ি দিলেন ক্যানসাস থেকে গাজীপুরে

গাজীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুন ৪, ২০২২, ০৫:২৫ পিএম প্রেমের টানে পাড়ি দিলেন ক্যানসাস থেকে গাজীপুরে

পরিচয়টা শুরু বছরখানেক আগে। দুজনের কাছে মুঠোফোন নম্বর থাকলেও ফেসবুক মেসেঞ্জারেই কথা হতো বেশি। ফোন-ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে দৃঢ় হয় সম্পর্কের ভিত। এভাবে এক বছর কেটে গেলেও প্রেমিককে বাস্তবে দেখেননি প্রেমিকা। একনজর দেখতে হলে প্রেমিককে পাড়ি দিতে আটলান্টিক মহাসাগর। অবশেষে মহাসাগর পাড়ি দিয়েই বাংলাদেশে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রেমিক।

২৯ মে গাজীপুরের মেয়ে সাইদা ইসলামের প্রেমের টানে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রের যুবক রাইয়ান কফম্যান। এরপর পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়।

রাইয়ান যুক্তরাষ্ট্রের মিজুরি স্টেটের ক্যানসাস সিটির নাগরিক। তিনি নিজ এলাকার একটি প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানায় অপারেটর পদে কাজ করেন। লেখাপড়া করেছেন মাধ্যমিক পর্যন্ত। তার মা-বাবা ছাড়াও এক বড় ভাই রয়েছেন। তারা সেখানে প্রত্যেকেই আলাদাভাবে থাকেন। কনে ২৬ বছর বয়সী সাইদা ইসলাম গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার ভোগড়া মধ্যপাড়া এলাকার মোশারফ হোসেন মাস্টারের নাতনি ও সিকন্দার আলীর মেয়ে।

কনের নানা মোশারফ হোসেন মাস্টার বলেন, আমার জামাইয়ের নাম সিকন্দার আলী। তিনি ঢাকার দনিয়া এলাকায় থাকতেন। ২০১৯ সালে তিনি মারা যান। জামাইয়ের মৃত্যুর পর আমার মেয়ে দুই নাতনিকে নিয়ে ঢাকা থেকে গাজীপুরে চলে আসে। এখন তারা আমার এখানেই থাকছে। বাবা মারা যাওয়ার এক বছর পর স্নাতক পাস করে সাইদা। 

সাইদা বলেন, ২০২১ সালের এপ্রিলে ফেসবুকে রাইয়ান কফম্যানের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয়। এ সময় আমরা নিজেদের ফোন নম্বর ও ঠিকানা বিনিময় করি। এরপর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। ফোন ও ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে আমাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়। একপর্যায়ে দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলি। এভাবে প্রায় এক বছর ফেসবুকে প্রেম করি।

তিনি আরো বলেন, এরপর দুজনে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেই। রাইয়ান বিয়ে করার জন্য খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে তার ও আমার পরিবারের সম্মতিতে এ বছরের ২৯ মে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আসেন। এ দিনই আমাদের প্রথম দেখা হয়।

এয়ারপোর্ট থেকে রাইয়ান আমার সঙ্গে নানাবাড়িতে আসেন। পরে সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। বর্তমানে আমরা নানার বাড়িতেই আছি। বাংলাদেশে আসার আগেই বিয়ের গহনা ও কাপড়-চোপড়সহ মোবাইল ফোন কেনার জন্য আমার কাছে টাকা পাঠান রাইয়ান। তিনি আসার আগেই বিয়ের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করা হয়।

এদিকে গতকাল শুক্রবার নবদম্পতি স্থানীয় চান্দনা চৌরাস্তা বাজারে কেনাকাটা করতে যান। এ সময় দেশের বাজারের পরিবেশ নিয়ে এক মন্তব্যে রাইয়ান বলেন, বাজার খুবই জনাকীর্ণ ও গোলমেলে। রাস্তা-ঘাটের পরিবেশ খুবই নোংরা।

তবে সাইদার স্বজন ও বাংলাদেশিদের বিষয়ে অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করতে গিয়ে রাইয়ান বলেন, বাঙালিরা খুবই অতিথিপরায়ণ। আমেরিকায় অচেনাদের সঙ্গে কেউ খুব একটা কথা বলে না। কিন্তু বাংলাদেশে আসার পর দেখছি আমার প্রতি সবাই খুবই আন্তরিক। আমার ক্ষুধা না লাগতেই লোকজন আমাকে খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন, আদর-আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন- যা আমেরিকায় বিরল।

সাইদাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাইয়ান বলেন, আনুষঙ্গিক কাগজপত্র (কে-ওয়ান) ভিসা প্রসেসিং করতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। এসব সম্পন্ন হলেই সাইদাকে আমেরিকা নিয়ে যাবো।