ব্যাংকখাতে খেলাপি ঋণের প্রতি ১০০ টাকার ৪০ টাকাই এখন ব্যবসা ও পোশাক খাতের। ঋণের টাকা নিয়ে ফেরত না দেয়াতে পিছিয়ে নেই বৃহৎ, কৃষি ও নির্মাণ শিল্পের উদ্যোক্তারাও।
আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকগুলোতে দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
আর্থিক খাতে এমন নাজুক পরিস্থিতি উত্তরণে ব্যাংক একীভূত করার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ দিচ্ছেন সাবেক ব্যাংকাররা।
বছরভর ডলারের চড়া দাম, আছে মুদ্রাটির সংকটও। এ কারণে চাইলেও সম্ভব হয়নি চাহিদামতো পণ্য আমদানি করা।
আবার অর্থপাচারের উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খুলে পণ্য আমদানিতেও হয়েছে ঋণ অনিয়ম। ফলে গেলো বছর ব্যবসাখাতে যে ঋণ তার বেশিরভাগই এখন খেলাপি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতের সম্পদের গুণগতমানে সামান্য অবনতি হয়েছে। কেননা, খেলাপি ঋণের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।
করোনা পরবর্তী ব্যবসা সচল রাখতে আর্থিক খাত থেকে সহজ কিস্তিতে ঋণ, প্রণোদনা ও একাধিক সুযোগ সুবিধা নিয়েও, বাণিজ্যিক ঋণের পরেই খেলাপির শীর্ষে দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা। ঋণের অর্থ নিয়ে যথাসময়ে ফেরত না দেবার তালিকায় আছেন বৃহৎ শিল্প খাতের উদ্যোক্তারাও।
পিছিয়ে নেই কৃষকরাও। গেলো বছর অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, জ্বালানির দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণের বিপরীতে ফসলের কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি তারা। খেলাপি ঋণের তালিকার শীর্ষে আছে নির্মাণ ও জাহাজ শিল্পসহ আরও অনেক খাত।
তাহলে কি বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা ইচ্ছে করে ঋণের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না?
পোশাক রপ্তানিকারক ও গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’র (বিকেএমইএ) নির্বাহী চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অনেক কারখানা মালিকরা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রেতাদের কাছ থেকে মালামাল নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না, এদিকে ব্যাংকেও মাসিক কিস্তি দিতে পারছেন না। এর ফলে অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হবে।
সাবেক ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংক খাতে অনাদায়ী ঋণ যে বাড়বে তা অনুমেয় ছিলো। দীর্ঘদিনের ছাড়, মালিকপক্ষের অনৈতিক ঋণ সুবিধা চাওয়ার বিপরীতে দক্ষ ব্যাংকারের অভাবও এ পথটাকে আরও সহজ করেছে। তারা বলছেন, আর্থিক খাতের এমন নাজুক অবস্থা বদলাতে এখন প্রয়োজন বেশ কিছু ত্বরিত উদ্যোগের।
সাবেক ব্যাংকার আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকে যদি ঋণের টাকা ফেরত না আসে তাহলে তারল্য কোথা থেকে আসবে? এ সংকট সমাধানে সুশাসন নিশ্চিত ও ব্যাংক একীভূত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সাবেক ব্যাংকারদের মতে, সম্প্রতি আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে, ব্যাংকখাতের সূচকগুলোর যে অবস্থা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে ব্যাংকগুলোর ক্ষত অনেক বেশিই। তাই, কোনো রাখঢাক ছাড়াই এ খাত নিয়ে পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
জাগরণ/অর্থনীতি/এমএ