যা আশা ছিল, সব শুকিয়ে গেছে

তসলিমা নাসরিন প্রকাশিত: মে ১২, ২০২১, ০২:৪১ পিএম যা আশা ছিল, সব শুকিয়ে গেছে

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীকে এতকাল মুসলমান ভেবেছিল মুসলমানেরা। তাঁর মায়ের শাঁখা সিঁদুর পরা ছবি দেখার পর হিন্দুবিদ্বেষী মুসলমানেরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। চঞ্চল চৌধুরীর পাশে দাঁড়িয়েছে শুভবুদ্ধির মানুষ।

চৌধুরী, মজুমদার, তালুকদার, বিশ্বাস, সরকার, ভুঁইয়া, তরফদার, মন্ডল, শিকদার, হালদার, খাঁ, শাহ এরকম প্রচুর পদবী/উপাধি হিন্দু মুসলমান উভয়েরই। আশির দশকে শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানের মধ্যে আরবির বদলে বাংলা নামকরণের চল শুরু হয়েছিল। এর ফলে অনেক মুসলমানের নাম শুনলে মনে হতে পারে হিন্দু। আমার বাবার বংশের পদবী সরকার। জানিনা কী কারণে আমার বাবা এই পদবী ব্যবহার করেননি। আমার বাবার নাতির নাম সুহৃদ। বাবা যদি পদবী ব্যবহার করতেন, তাহলে তাঁর নাতির নাম হতো সুহৃদ সরকার। বাংলাদেশকে নিয়ে আমার যা স্বপ্ন ছিল, সব উড়ে গেছে, যা আশা ছিল, সব শুকিয়ে গেছে। গেছে, কারণ বাংলাদেশ দিন দিন ভয়ঙ্কর রকম মৌলবাদী হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ হিন্দুই মান সম্মান নিয়ে বাঁচার জন্য দেশ ছেড়ে চলে গেছে। যাদের সুযোগ সামর্থ আছে তারা চলে গেছে ইউরোপ আমেরিকায়, যাদের নেই তারা বর্ডার পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে।

চঞ্চল চৌধুরীর সমস্যা হলে তিনি অনায়াসে ইউরোপের কোনও দেশ বা আমেরিকায় পাড়ি জমাতে পারবেন। তাঁর জন্য এ কোনও সমস্যা বলে আমি মনে করি না। আমি ভাবছি ঝুমন দাস আমনের কথা। মানুষটি এখনও জেলে পড়ে আছে। কোনও অপরাধ না করেই জেলে। আর মামুনুল হকের যে অনুরাগী সন্ত্রাসীরা গ্রামের হিন্দুদের বাড়িঘর ভাঙচুর করলো, তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঝুমন দাসের মুক্তির জন্য সকলে দাবি জানাক। ঝুমন দাসের নিরাপত্তার জন্য দাবি উঠুক। ঝুমন দাস বাংলাদেশে নিরাপদ বোধ না করলে তাকে নিরাপদ কোনও দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা হোক।

বাংলাদেশটির জন্ম হয়েছিল অফুরন্ত সম্ভাবনা নিয়ে। পঞ্চাশ বছর পর দেশটি একটি আস্তাকুঁড়ে পরিণত হয়েছে। লক্ষ লক্ষ বোধহীন বুদ্ধিহীন ধর্মান্ধ আবর্জনা দেশটির আজ সুযোগ্য সন্তান। আমি ধর্মকে দোষ দিই না, ধর্মের হাত পা মুখ মাথা নেই, ধর্মের হাতে চাপাতি নেই, আছে মানুষের হাতে। এই মানুষকে নষ্ট করার দায় আমি সরকারকে দিই। দূরদৃষ্টিহীন স্বার্থান্ধ সরকারকে।