হামাসের সবুজ রকেট ও একজন খালিদ মিশাল

সুজন কবির প্রকাশিত: মে ১৪, ২০২১, ১২:৩০ পিএম হামাসের সবুজ রকেট ও একজন খালিদ মিশাল

সেপ্টেম্বর ১৯৯৭ সাল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী দল হামাসের তরুণ নেতা খালিদ মিশাল তখন জর্ডানের আম্মানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে। স্বয়ং বাদশা হুসেইন তাকে আশ্রয় দিয়েছেন। মাসখানেক আগেই তেল আবিবে হামাসের হামলায় ১৭ জন ইসরায়েলি মারা গেছেন। গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। তাকে হত্যা বা আটক করাটা প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জন্য প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০ সেপ্টেম্বর। আম্মান বিমানবন্দর দিয়ে জর্ডানে প্রবেশ করেন কানাডার পাসপোর্টধারী ছয় নাগরিক। আমস্টারডাম টরন্টো ও প্যারিস হয়ে পর্যটকের বেশে তারা আম্মানে এসেছেন।

২৫ সেপ্টেম্বর। খালিদ মিশাল জরুরি কেনাকাটা সারতে আম্মানের একটি শপিং মলে যাচ্ছেন। একটি প্রাইভেট কার তাদের গাড়ি অনুসরণ করছে। সেটা মিশালের নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়াল না। তারা মার্কেটের সামনে থামলেন। তাদের গাড়ির পাশেই ক্যামেরা হাতে দুই পর্যটক। পেছনের গাড়িতে আরও চারজন। ঘটনাটি ঘটল কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। ক্যামেরায় লাগানো সিরিঞ্জ দিয়ে মিশালের কান আর নাক বরাবর একটি স্প্রে ছুড়ল দুই পর্যটক। মুহূর্তেই অজ্ঞান খালিদ মিশাল। সেই দুজন পালিয়ে গেলেও আটক হলো গাড়িতে থাকা চারজন।

হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে খালিদ। ডাক্তাররা বললেন উচ্চমাত্রার বিষ দেওয়া হয়েছে তাকে। খালিদ ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছেন। জর্ডানের গোয়েন্দা সংস্থা জানাল এই বিষ মোসাদের সৃষ্টি। এর অ্যান্টিডটও আছে তাদের হাতেই। সেই অ্যান্টিডট না পেলে খালিদের মৃত্যু অনিবার্য।

বাদশা হোসেন বার্তা দিলেন ইসরায়েলে। জানিয়ে দিলেন খালিদ যদি মারা যায় তবে জর্ডানের হাতে আটক চার মোসাদ এজেন্টকে আম্মানের উন্মুক্ত রাস্তায় ফাঁসি দেওয়া হবে। আম্মানের ইসরায়েলি দূতাবাস ঘিরে ঘিরে ফেলল জর্ডানের নিরাপত্তা বাহিনী। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে ফোন করলেন বাদশা হোসেন। বললেন খালিদ মারা গেলে তিনি জর্ডান-ইসরায়েল শান্তি চুক্তি বাতিল করবেন। সেটা হলে ক্লিনটনের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ ভেস্তে যাবে। জবাবে ক্লিনটন বললেন; ‘ দ্যাট ম্যান ইজ ইম্পসিবল (নেতানিয়াহু)’।

২৭ সেপ্টেম্বর। লাইফ সাপোর্ট থেকে জীবন নিয়ে ফিরলেন খালিদ মিশাল। কিন্তু ঠিক কখন কীভাবে ইসরায়েলের পাঠানো অ্যান্টিডট আম্মানে পৌঁছাল, সেটি আর জানা গেল না। তবে জানা গেল, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ফোনে বাদশা হুসেনের কাছে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়েছেন। কেবল নেতানিয়াহু নয়। ইসরায়েলের ইতিহাসে এতটা নাস্তানাবুদ হওয়ার ঘটনা আর দ্বিতীয়টি নেই।

সেই থেকে খালিদের নাম হলো ‘জীবন্ত শহীদ’। ২০১২ সালে সেই ‘জীবন্ত শহীদ’ প্রথমবারের মতো গাজা উপত্যকায় ইসারায়েলের নাকের ডগায় আনুষ্ঠানিকভাবে হামাস উদ্ভাবিত সবুজ রঙের M 75 রকেটের উদ্বোধন করলেন।

প্রসঙ্গত, পরের বছর ২০১৩ সালেই ফিলিস্তিনে বড় ধরনের নিধনযজ্ঞ চালায় ইসরায়েল। আজও চলছে সেই ধারাবাহিকতা। আর খালিদ মিশাল আজও বেঁচে আছেন ইসরায়েল ও নেতানিয়াহুর অন্তরের জ্বালা হয়ে।