মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে সোশ্যাল মিডিয়া

ইশতিয়াক হোসেন প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২১, ০৪:২০ পিএম মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে সোশ্যাল মিডিয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দৈনন্দিন জীবনের সর্বব্যাপী অংশে পরিণত হয়েছে। এমনকি যখন এই প্রতিবেদনটি পড়ছেন, তখনো আপনি যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত রয়েছেন। এভাবেই সময়ের প্রয়োজনে কিংবা অজান্তেই যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকি আমরা। তবে জানেন কি, মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যোগাযোগমাধ্যম।

ভাবের আদান-প্রদানে আমাদের মনও প্রফুল্ল হয়। সামাজিক জীবনে তাই সামাজিকতার গুরুত্ব অসীম। এটি মানসিক সুস্থতাও ধরে রাখে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আসক্তিতে পরিণত হয়। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার অনুপস্থিতিতে আমাদের মস্তিষ্ক ভারসাম্যহীন হয়ে পরে। ‘স্বাভাবিক’ বোধ করতে তখন সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে যায় মানুষ। আর আসক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত আচরণ কখনোই স্বাস্থ্যকর নয়।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে তাই সচেতন প্রয়োজন। যা এর ক্ষতিকারক প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। যদি আপনার উদ্দেশ্যটি কেবল দূরের বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়  অথবা তথ্য ও সংবাদ সংগ্রহের জন্য হয়, তবে অহেতুক নিউজ ফিড ঘাঁটা বা অপ্রয়োজনীয় ভিডিও দেখা কেবল সময়ের অপচয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা রাজনৈতিক উত্তেজক পোস্ট, পরিচিত ব্যক্তির মনের ক্ষোভ-হতাশা, উসকানিমূলক, আপত্তিজনক বক্তব্য ইত্যাদিও আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। যা আপনার মনের মধ্যে শুধু ক্রোধ আর বিরক্তির উদ্রেক দেবে।

এসবে আবার রয়েছে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের আচরণ বদলানোর বিভিন্ন পোস্ট, যা দেখার  গুরুদায়িত্ব নিলে আপনার মানসিক অশান্তি বেড়েই যাবে। সে সঙ্গে আবার সম্পর্কছিন্ন্যও  অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে পড়ে মাঝে মাঝে।

মনোবিজ্ঞানীদের পরামর্শ, সোশ্যাল মিডিয়ায় যে লোকেরা নিয়মিত ঘৃণা এবং নেতিবাচক তথ্য, ভুল তথ্য প্রচার করে বা তাদের অনলাইন উপস্থিতি আপনার মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক করে, তাদেরকে আনফলো করুন। প্রয়োজনীয়টি রেখে অপ্রয়োজনীয় তথ্যের নোটিফিকেশন বন্ধ রাখুন। যাদের সঙ্গে আপনার চিন্তাভাবনা ভাগ করে আনন্দ ও সাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, শুধু তাদের সঙ্গেই সংযোগ রাখুন।

অন্যের আনন্দ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে নিজের ব্যর্থতা ও বিফলতা তুলনা না করে চিন্তা করুন, সবার জীবনেই দুঃখ-কষ্ট থাকে। একটি সুন্দর সময়ের অভিজ্ঞতার আগে অনেক অপেক্ষা ও পরিশ্রম করতে হয়। তাই তুলনা করে নিজের আনন্দে ভাটা টানবেন না।

গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় করলে দুঃখ, একাকিত্ব এবং হিংসাবোধের উদ্রেক হয়। এ অনুভূতিগুলো সুখী, স্বাস্থ্যকর জীবনের পরিপন্থী। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম উভয়ই ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করার পদ্ধতি আছে, যা দ্বারা আপনি এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে বাঁচতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিরতি নিন। এই বিরতি আপনাকে অন্যান্য ফলদায়ক অভ্যাসের প্রতি উৎসাহিত করবে।

‘স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন’ যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমনি সমস্ত সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকাও অসম্ভব। এর নেতিবাচক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে সোশ্যাল মিডিয়ার  মাধ্যমগুলোর সুবিধা গ্রহণ করুন। এভাবেই সামাজিক মিডিয়ায় যুক্ত থেকেও মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন।