করোনাভাইরাস

সংক্রমণের শীর্ষে ঢাকাসহ ১০ জেলা

জাগরণ প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০২১, ০১:০০ এএম সংক্রমণের শীর্ষে  ঢাকাসহ ১০ জেলা
প্রতীকী ছবি

রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ দেশব্যাপী করোনার মৃত্যু ও সংক্রমণের ভয়াল রূপ দেখা যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত জেলা ভিত্তিক সংক্রমণের শীর্ষে রয়েছে— ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, ফরিদপুর ও কক্সবাজার।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) তৃতীয় ঢেউ চূড়ায় উঠবে, তারপর ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে। এ সময়ে চলাচল, গণজমায়েত ইত্যাদি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সংক্রমণের উচ্চমুখী এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, জুলাইয়ে রোগী সংখ্যা এপ্রিল ও জুন মাসকে ছাড়িয়ে যাবে।

অধিদফতর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, করোনায় রোগী শনাক্তের ঊর্ধ্বগতিতে প্রয়োজনে ফিল্ড হাসপাতাল করা হবে। একইসঙ্গে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের শয্যা বাড়ানো ও জনবল পুনর্বণ্টন করা হচ্ছে।

বুধবার (৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম (এমআইএস) জানায়, রাজধানী ঢাকায় (মহানগরসহ) এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ৪১ হাজার ৪১১। মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৬২০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন তিন হাজার ২৮৫ জন। মারা গেছেন ২৯ জন।

চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬২ হাজার ২৮ জন। মারা গেছেন ৮৫০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৬১১ জন। মারা গেছেন চার জন।

রাজশাহীতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৯ হাজার চারজন। মারা গেছেন ২১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ২৩৪ জন। মারা গেছেন দুইজন।

খুলনাতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪৫৬ জন। মারা গেছেন ৩৩৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৫৮৫ জন। মারা গেছেন ১২ জন।

কুমিল্লাতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ৬২ হাজার ২৮ জন। মারা গেছেন ৮৫০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৩০৩ জন। মারা গেছেন নয়জন।

বগুড়াতে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬৩ জন। মারা গেছেন ৩৮১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৫৪ জন। মারা গেছেন চারজন।

নারায়ণগঞ্জে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৭৬৬ জন। মারা গেছেন ৪৬৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৫৬ জন। মারা গেছেন তিনজন।

যশোরে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ১৯১ জন। মারা গেছেন ২৫৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ৩৭৩ জন। মারা গেছেন ১২ জন।

ফরিদপুরে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ৯৫১ জন। মারা গেছেন ২৪৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৬৩ জন। মারা গেছেন সাতজন।

কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৯৭৩ জন। মারা গেছেন ১৪৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন ১৭৬ জন। মারা গেছেন চারজন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ডা. বে-নজির আহমেদ  বলেন, ‘জেলা পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সংক্রমিত রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্সিং করে দেখতে হবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পরিস্থিতি কী?  ঢাকা থেকে করোনা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে হবে যাতে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়।’

সরকারিভাবে কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনে সেন্টার খুলে সেখানে রাখতে হবে। তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তারা যেন অন্য জেলায় চলে যেতে না পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।’

ডা. বে-নজির বলেন, ‘যেসব জেলায় বর্তমানে সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বমুখী সেসব জেলায় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা বাজেট রাখতে হবে। যাতে করে সেসব জায়গায় দ্রুত রোগীদের আনা নেয়ার জন্য গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি করোনার প্রয়োজনীয় ওষুধসহ অক্সিজেন, হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন কনসেনটেট্ররের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, প্রতি ১০ লাখ রোগীতে শনাক্ত ৫৭৮০ দশমিক ৭ জন, সুস্থ ৫০২৯ দশমিক ৩ জন এবং মৃত্যু ৯২ দশমিক ০২ জন।

গত ৬ মাসের সংক্রমণের চিত্রে দেখা যায়, জানুয়ারিতে রোগী শনাক্ত হন ২১ হাজার ৬২৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজার ৭৭ জন, মার্চে ৬৫ হাজার ৭৯ জন, এপ্রিলে এক লাখ তিন হাজার ৯৫৭ জন, মে মাসে ৪১ হাজার ৪০৮ জন, জুনে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন। কিন্তু জুলাইয়ের মাত্র সাত দিনের মধ্যে ছয় দিনে ৫৩ হাজার ১৪৮ জন শনাক্ত হয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন  বলেন, ‘আমাদের দেশে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ বর্তমানে পিকে উঠতে শুরু করেছে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়ে তৃতীয় ঢেউয়ে বৃদ্ধিটা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি উঠতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে। ঈদের সময় যদি চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তাহলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি জোর দিতে হবে গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণে। কারণ কোরিয়ায় করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে গির্জা থেকে, ভারতে কুম্ভুমেলা থেকে।’’

 

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের শুরুতে দেশে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ২৫ শতাংশের কিছু বেশি। কিন্তু আজ ১১ হাজার ১৬২ জনের সংক্রমণের বিপরীতে শনাক্তের হার ৩১ দশমিক ৩২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, গতকাল ৬ জুলাই ১১ হাজার ৫২৫ যা ছিল ৩১ দশমিক ৪৬ শতাংশে।

গত ৫ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন নয় হাজার ৯৬৪ জন, এই দিনে শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগেরদিন ৪ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৬৬১ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

এরআগে গত ৩ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন ছয় হাজার ২১৪ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত ২ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৪৮৩ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ১ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৩০১ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ।

গত ৩০ জুন শনাক্ত হয়েছেন আট হাজার ৮২২ জন, ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ২৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর আগের দিন অর্থাৎ ২৯ জুন শনাক্ত হন সাত হাজার ৬৬৬ জন, ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

অর্থাৎ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্তের হার বেড়েছে ৫ শতাংশ। এর এক সপ্তাহ আগে ১৮ জুন শনাক্তের হার ছিল ১৯ শতাংশ এবং দুই সপ্তাহ আগে এই হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ।

বুধবার (৭ জুলাই) এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ চূড়ায় উঠছে। কতটা উঠবে সেটা বলা কঠিন। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদফতর তার জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। 

জাগরণ/এমএ/এসএসকে