তেলে নিষেধাজ্ঞা দিলে গ্যাস বন্ধের হুমকি রাশিয়ার

বিশ্ব ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২২, ০৩:৫৮ পিএম তেলে নিষেধাজ্ঞা দিলে গ্যাস বন্ধের হুমকি রাশিয়ার
ফাইল ফটো।

পশ্চিমারা মস্কোর তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে জার্মানিতে মূল পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে রাশিয়া।

দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্ডার নোভাক বলেছেন, “রাশিয়ার তেলের ওপর অবরোধ আরোপ করা হলে আন্তর্জাতিক বাজারে এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়বে।”

এরই মধ্যে বিশ্ব বাজারে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১৩০ ডলারে পৌঁছেছে, সেটা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে প্রতি ব্যারেল ৩০০ ডলারে পৌঁছাতে পারে বলে হুঁশিয়ার করছে রাশিয়া।

মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেইনে আগ্রাসনের জেরে রাশিয়াকে আরও চাপে ফেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে মস্কোর তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা মেপে দেখছে। তবে জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস এ ধরনের পরিকল্পনা প্রত্যাখান করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের গ্যাসের ৪০ শতাংশ এবং তেলের ৩০ শতাংশের যোগান পায় রাশিয়া থেকে। এই সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ করা হলে সহসাই কোনো বিকল্প উৎস থেকে যোগান দেওয়া সম্ভব না।

সে কথা তুলে ধরে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক বক্তৃতায় বলেন, “ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার তেলের একটি বিকল্প দ্রুত খুঁজে বের করা অসম্ভব।

“এটা করতে অনেক সময় দরকার, এবং ইউরোপের ভোক্তাদের জন্য এটা অনেক বেশি ব্যয়সাপেক্ষ হবে। শেষ পর্যন্ত, এর ফলাফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারাই।”

রাশিয়া থেকে জার্মানিতে সরাসরি গ্যাস সরবরাহের জন্য স্থাপন করা পাইপলাইন নর্ড স্ট্রিম ২ স্থগিত করার যে সিদ্ধান্ত জার্মানি নিয়েছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে আলেক্সান্ডার নোভাক বলেন, তেলের ওপর অবরোধ আরোপ করা হলে এর জবাব দেওয়া হবে।

“একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমঅধিকার আমাদেরও আছে এবং বিদ্যমান নর্ড স্ট্রিম ১ গ্যাস পাইপ দিয়ে গ্যাস সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দেব আমরা।”

রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ, ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে তাদের অবস্থান দ্বিতীয়। জ্বালানি খাতে কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ করা হলে তা সেদেশের অর্থনীতিকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এ ধরনের অবরোধ আরোপের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি দাবি জানিয়ে আসছে ইউক্রেইন, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশেই উদ্বেগ রয়েছে, কারণ সেরকম পদক্ষেপ নেওয়া হলে আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রভাব হবে ব্যাপক।

এমন অবরোধ আরোপের শঙ্কায় সোমবার এক পর্যায়ে ব্রেন্ট ক্রুড অয়েলের দাম ব্যারেল প্রতি ১৩৯ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যুক্তরাজ্যেও পেট্রলের গড় দাম লিটার প্রতি ১৫৫ পেনিতে পৌঁছেছে, যা রেকর্ড।

রয়টার্স জানিয়েছে, মিত্রদের ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে রাশিয়ার তেলের ওপর অবরোধ আরোপ করতে পারে। যদিও সেদেশে রাশিয়া থেকে মাত্র ৩ শতাংশ তেল আমদানি করা হয়।

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ বিস্তৃত পরিসরে অবরোধ আরোপের ধারণা নাকচ করে বলেছেন, ইউরোপ অবরোধের তালিকা থেকে সঙ্গত কারণেই রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে ছাড় দিয়েছে, কারণ এ মুহূর্তে অন্য কোনো উপায়ে ওই সরবরাহের ঘাটতি মেটানো সম্ভব না।

তবে ইউরোপের দেশগুলো ধীরে ধীরে রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর এই নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে চায়। বেশ কিছু পশ্চিমা কোম্পানি এরইমধ্যে রাশিয়ার জ্বালানি কোম্পানি থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার এবং রাশিয়া থেকে পণ্য পরিবহন বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আলেক্সান্ডার নোভাক বলছেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ইতোমধ্যে রাশিয়ার কোম্পানিগুলোর ওপর পড়তে শুরু করেছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া এখনও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে।

‘ব্যাপক চাপ’
নোভাক বলেন, “রাশিয়ার তেল ও পেট্রোকেমিকেলের ওপর সম্ভাব্য অবরোধ আরোপ নিয়ে যেসব বিবৃতি ও আলোচনা আমরা শুনতে পাচ্ছি তাতে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা দেখছি যে আমাদের অংশীদারেরা, জাহাজ কোম্পানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে।”

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা সোমবার জানিয়েছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ১৭ লাখের বেশি ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে মধ্য ইউরোপে পালিয়েছে। তাদের মধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী পোল্যান্ডে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দমিত্রি পেসকোভ রয়টার্সকে বলেছেন, ইউক্রেইন যদি লড়াই বন্ধ করে, তাদের সংবিধান সংশোধন করে নিজেদের নিরপেক্ষ ঘোষণা করে এবং রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিভুক্তি ও রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রদেশগুলোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে মস্কো এই অভিযান স্থগিত করবে।

ইউক্রেইনের একজন মধ্যস্ততাকারী মিখাইলো পোদোলিয়াক জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তৃতীয় দফার বৈঠকে বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে কিছু সমঝোতা হলেও বেশিরভাগ বিষয় নিয়েই অচলাবস্থা কাটেনি।

 

এসকেএইচ//