সুশাসন নিশ্চিত না হলে বেশি দূর এগোতে পারব না : ড. বদিউল আলম মজুমদার

শাহাদাত হোসেন তৌহিদ প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২১, ০৮:৫৯ পিএম সুশাসন নিশ্চিত না হলে বেশি দূর এগোতে পারব না : ড. বদিউল আলম মজুমদার

ড. বদিউল আলম মজুমদার অর্থনীতিবিদ, উন্নয়নকর্মী, রাজনীতি বিশ্লেষক, নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ২০২১-২২ বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে দৈনিক জাগরণের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন তৌহিদ


জাগরণ : দেশের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে বড় প্রস্তাবিত ঘাটতি বাজেট। যখন দেশ স্বনির্ভর হওয়ার কথা ভাবছিল এবং ‘ভিশন ২০৪১’ সামনে, তখন এত বড় একটি ঘাটতি বাজেট শুধু কি দেশের প্রতিবন্ধকতাকে সামাল দেওয়ার জন্য নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার : এ ঘাটতি বাজেট তো আমরা অনেক দিন থেকে করছি। তবে এবারের ঘাটতি বাজেটের যৌক্তিকতা ছিল এর মাধ্যমে অতিমারির অভিঘাত থেকে মুক্ত হওয়াই লক্ষ্য। এটা যৌক্তিক আমি মনে করি। তবে সব বছরই আমরা এমন আকাশকুসুম কল্পনা করি যে আসলে বাস্তবায়ন হয় না। তবে এবার বেশি ব্যয় করা সরকারের পক্ষে জরুরি। আমাদের অর্থনৈতিক যে প্রভাব তা প্রশমিত করার জন্য।

জাগরণ : ভ্যাট ফাঁকি দিলে সমপরিমাণ জরিমানার একটি নির্দেশনা রয়েছে। এটা কি রাজস্ব আদায়ে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে?

ড. বদিউল আলম মজুমদার : ভ্যাট কার্যক্রমে এমনিতেই অনেক রকম দুর্নীতি রয়েছে। আমি ছোটখাটো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শুনেছি, কয়েক শ টাকা ভ্যাট দিতে হলেও উপরি দিতে হয় ভ্যাট যারা গ্রহণ করে তাদের। এর মাধ্যমে আরও দুর্নীতি বাড়বে বলে আমার আশঙ্কা।

জাগরণ : সরকারি বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। আমরা দেখতে পাই, এসএমই খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম সরকারি প্রণোদনা পাচ্ছেন বড় বড় শিল্পকারখানার মালিকরা। এতে কি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনো সুযোগ হবে বলে আপনি মনে করেন?

ড. বদিউল আলম মজুমদার : কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য এবং সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগ হলো বেসরকারি খাতে। এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ‘এসএমই’ খাতে বিনিয়োগ। কিন্তু আমাদের দেশে দুর্ভাগ্যবশত তেলা মাথায় তেল দেওয়ার নীতি চিরকালই চলে আসছে। এখনো হচ্ছে, এটা তারই ধারাবাহিকতা। যেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক নয়। প্রণোদনার টাকাও ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা পাননি, বড়রাই পেয়েছেন। এটা আমাদের জন্য কোনোভাবেই সুফল বয়ে আনবে না।

জাগরণ : এবার করোনাকালে দ্বিতীয় বাজেট। যে বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছিলেন সেটি হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এবার পেশকৃত বাজেটে দেখা গেল, স্বাস্থ্য খাতে তেমন বরাদ্দ নেই, মোট বাজেটের ৪.৭ শতাংশ। এ পরিমাণ যদি বাস্তবায়নও হয় বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলায় সক্ষম হবে কিনা? 

ড. বদিউল আলম মজুমদার : আমাদের স্বাস্থ্য খাতই অসুস্থ। সেখানে যত ব্যয়ই করি না কেন, এতে তেমন সুফল আসবে না যদি আমরা স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি এবং অপচয় আমরা রোধ করতে না পারি। এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার, কিন্তু কার্যকর বিনিয়োগ হওয়া দরকার। যেমন স্বাস্থ্য খাতে এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার, আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যেটা অতি সহজেই সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলে করা যায়, কিন্তু এটিকে সরকার কোনোই গুরুত্ব দিচ্ছে না। সরকার যেখানে অর্থকড়ি ব্যয় করছে এবং বড় বড় প্রকল্প বিনিয়োগ করছে, যার মাধ্যমে অনেক অপচয় হচ্ছে, দুর্নীতিও হচ্ছে। এবং যেটার মাধ্যমে ফায়দা দেওয়া হয় তাদের নিজস্ব দলীয় ব্যক্তিদের, সেগুলোর অবসান হওয়া দরকার। আমাদের সুশাসন নিশ্চিত করা দরকার। সুশাসন নিশ্চিত না হলে আমরা যতই ব্যয় করি, আমরা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারব না।