রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আশ্বাস দিয়েছে চীন : প্রধানমন্ত্রী

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৮, ২০১৯, ০৪:৩২ পিএম রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আশ্বাস দিয়েছে চীন : প্রধানমন্ত্রী
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -বিটিভি ওয়ার্ল্ড থেকে নেয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চীন সবসময়ই মিয়ানমারের সঙ্গে আছে। কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি তারা উপলব্ধি করেছে। এ জন্য তারা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আশ্বাস দিয়েছে।

চীনে পাঁচ দিনের দ্বিপক্ষীয় সরকারি সফরের বিষয়ে সোমবার (৮ জুলাই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিকালে ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে চীন সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, পাঁচ দিনের সফরে গত ১ জুলাই চীনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সফরে গিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চীনের দালিয়ান শহরে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বার্ষিক সভায় যোগদান করেন এবং ‘কো-অপারেশন ইন দ্য প্যাসিফিক রিম’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য মিয়ানমারকে বোঝানোর বিষয়ে ঢাকাকে আশ্বস্ত করে বেইজিং। দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সমস্যা দ্রুত সমাধানের বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে একমত পোষণ করে চীনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই, এটা (রোহিঙ্গা সমস্যা) বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা।

তিনি এই সমস্যার দ্বিপক্ষীয় সমাধানের পক্ষে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করে এ বিষয়ে চীনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও উল্লেখ করেন।

বেইজিংয়ে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির প্রধান সং তাওয়ের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি ও মিয়ানমারের অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন সিপিসির এই নেতা।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত নয়টি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। গত ৪ জুলাই চীনা প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন সিপিসির কার্যালয় গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দুই নেতার উপস্থিতিতে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তার জন্য এলওসি (লেটার অব এক্সচেঞ্জ) এবং অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা, বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি এবং পর্যটন সংক্রান্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের খাদ্য সাহায্য সংক্রান্ত এলওসির আওতায় মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য চীন দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।

স্বাক্ষরিত অন্য চুক্তিগুলো হলো- ২. সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ৩. ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। ৪. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ৫. বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক চুক্তি। ৬. ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক। ৭. পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট। ৮. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন এগ্রিমেন্ট। ৯. ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন এগ্রিমেন্ট। চীন সফরে গিয়ে ডব্লিউইএফের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান ক্লাউস সোয়াব এবং বিভিন্ন চীনা কোম্পানির সিইওদের সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন এবং তিয়েনমেন স্কয়ারে চীনা বিপ্লবের বীরদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

জেডএইচ/এসএমএম