ওই পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের বিচার দাবি ডাক্তারদের

শাহাদাত হোসেন তৌহিদ প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২১, ১০:৩৪ পিএম ওই পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেটের বিচার দাবি ডাক্তারদের

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এ কাইয়ুম, দায়িত্বরত এক ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালেয়ে সহযোগী অধ্যাপক সাঈদা শওকত জেনির বাকবিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক। চিকিৎকরা যেমন বলছেন, যেখানে ডাক্তারের মুভমেন্ট পাশ লাগবে না বলে আইন করা হয়েছে, সেখানে একজন ডাক্তারকে এভাবে হয়রানি করা অন্যায় হয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে এমন আচরণের জন্য পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের বিচার চেয়েছেন তারা। অন্যদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে একজন ডাক্তারের এমন আচরণকে অসৌজন্যমূলক আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পুলিশ বলছেন, এমন আচরণের মধ্য দিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনীকে অপমান করা হয়েছে।

এ বিষয়ে চিকিৎসক ও কলামিস্ট আব্দুন-নূর-তুষার জাগরণকে বলেন, “ডাক্তারদের যেখানে মুভমেন্ট পাশ লাগবে না বলা হয়েছে, সেখানে মুভমেন্ট পাশ চাওয়াটাই একটা ভুল। তাছাড়া যে পদ্ধতিতে এটা চাওয়া হচ্ছিল ও পরীক্ষা করা হচ্ছিল, সেটাও একটা ভুল। এটা আরো ভালোভাবে এটা দেখা যেতে পারতো। সহজ পদ্ধতিতে এবং আরামের সঙ্গে কাজটি করা যেত।

এদিকে ঘটনার জন্য দুপক্ষকে অভিযোগ করে রোগনিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ডাক্তারদের প্রতি ইদানীং আমরা অবজ্ঞা ও অপমান দেখতে পাই। পুলিশ যেভাবে উনার সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেছেন এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। উনি যেহেতু একজন ডাক্তার, সেহেতু এভাবে অপমান করা মোটেও ঠিক হয়নি। পাশাপাশি পুলিশ তার দায়িত্ব পালনের জায়গা থেকে ওই ডাক্তারের পরিচয় জানতে চেয়েছে— এটা ঠিক আছে। কিন্তু আমারা যারা সচেতন মানুষ, তাদেরও উচিত আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করা। পুলিশকে ‘তুই-তোকারি’ করে কথা বলাটাও ঠিক না। পারস্পরিক যে শ্রদ্ধাবোধ— এটা আসলে নেই।”

পুরো ঘটনার তদন্ত দাবি করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “লকডাউন চলাকালীন যাদের মুভমেন্ট পাশ লাগবে না, তার মধ্যে প্রথমেই হচ্ছেন ডাক্তার। পুলিশ তার কাছে মুভমেন্ট পাশ চেয়ে বেআইনি একটি কাজ করেছে।”

চিকিৎসকের গাড়িতে তার হাসপাতালের স্টিকার রয়েছে, গায়ে এপ্রোন রয়েছে, কর্মস্থলের সিম্বল রয়েছে, তাকে সন্দেহবশত জিজ্ঞাসা করার কোনো জায়গা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “প্রথমত ‘সংক্রমণ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ এবং নিমূর্ল আইন ২০১৮’ অনুযায়ী লকডাউন দেওয়া হয়। সেই আইনে ডাক্তারদের অবাধ চলাফেরা সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ডাক্তারকে যদি তাদের পেশাগত কাজে যাওয়া-আসার সময় বাধা দেওয়া হয় সেটি দণ্ডনীয় অপরাধ। সেক্ষেত্রে তিন মাসের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তাছাড়া পুলিশ যে তার আইডি কার্ড চাইবে, পুলিশকে আগে পুলিশ জানতে হবে, বাংলাদেশে ডাক্তারদের আইডি কার্ড সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় কি হয় না? আমি ১৯৮৫ সালে সরকারি চাকরিতে জয়েন করি। তখন থেকে গতকাল পর্যন্ত ডাক্তারদের আইডি কার্ড দেওয়ার নিয়ম প্রচলিত ছিল না। তবুও যদি পাশ চাইতে হয়, তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় চাইতে হবে।”

ডা. লেলিন আরো বলেন, “যেখানে দুপক্ষকেই নোংরা শব্দ ব্যবহার করেছে, তাকে (ডাক্তার) আটকানোর মধ্য দিয়ে যে নোংরামিটা শুরু হলো, এটি আসলে তদন্ত হওয়া উচিত। পুলিশ যখন আইন ভাঙে বিষয়টি খুব বিপদজনক। সেখানে যে ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন তার আচরণ ম্যাজিস্ট্রেটসুলভ ছিল না। বরং পক্ষপাতমূলক ছিল।”

এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতি ‘চিকিৎসকের অসৌজন্যমূলক আচরণের’ প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।

সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের(ডিএমপি) কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাক্তারের আচরণের মধ্য দিয়ে শুধু পুলিশ সদস্যদের অপমান করেননি, গোটা পুলিশ বাহিনীকে কটাক্ষ ও হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের প্রতি জনৈক চিকিৎসকের অপেশাদার ও অরুচিকর আচরণে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত মর্মাহত। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

এদিকে চিকিৎসক সাঈদা শওকত জেনি পুরো বিষয়টি নিয়ে বেশ হতাশ হয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, “আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। ডাক্তার হিসেবে যদি এই সম্মান পাই তবে আমার কিছু বলার নেই। কোথায় সম্মান করা হবে, সেখানে আমাকে বলে আমি নাকি ‘পাপিয়া’।”