আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে তৃণমূল বিএনপি। দলটি ৪৯৫টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর তোপখানা রোডে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান তৈমূর আলম। তিনি বলেন, তার দল ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া পাচ্ছে। বুধবার বিকাল পাঁচটায় সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
তৈমূর জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এই আসনে তৈমূরকে লড়তে হবে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর সাথে।
নির্বাচনে যাওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে যা অসাংবিধানিক। বিএনপি বারবার ভুল করেছে সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছে কর্মীরা। বিএনপি স্থানীয় নির্বাচন গুলোতে অংশ নিলে মাঠে দল শক্তিশালী হতো।
তৈমূর বলেন, তৃণমূল বিএনপি সোনালী আঁশ মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে। আরো কিছু দল জোটে যুক্ত হবে তৃণমূল বিএনপির নেতৃত্বে। যাদের নমিনেশন দেয়া হয়েছে তাদের কেন্দ্র পাহারা দেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। বিলাসবহুল প্রার্থী নয় পেশাজীবিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অংশগ্রহণমূলক সংসদ চায় তৃণমূল বিএনপি।
তিনি জানান, কিছু আসনে একাধিক প্রার্থী রাখা হয়েছে। জোটের প্রার্থিতাও হিসাবে রাখা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ‘সোনালী আঁশ’ প্রতীক পেয়ে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন পাওয়ার তিনদিন পর তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল হুদা মারা যান। এরপর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা। পরে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দলটিতে যোগ দিয়েই চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন শমসের মবিন চৌধুরী এবং মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পান তৈমূর আলম খন্দকার।
নাজমুল হুদা তৃণমূল বিএনপি গঠন করেন ২০১৫ সালের শেষ দিকে। তার আগে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করার পর আরও তিনটি দল গঠন করেছিলেন।
২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ)’ নামে একটি দল গঠন করেন তিনি। পরে সেই দল থেকে তাকে বহিষ্কার করেন দলটির প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
নাজমুল হুদা ২০১৪ সালের ৭ মে ‘বাংলাদেশ জাতীয় জোট’ নামে একটি জোট গঠন করেন। একই বছরের ২১ নভেম্বর তিনি ‘বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি’ নামে একটি দল গঠন করেন। আরও একটি নতুন দল গঠন করেছিলেন এ রাজনীতিক।
নাজমুল হুদা সবশেষ ‘তৃণমূল বিএনপি’ গঠন করেন ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে দলটি।
সে সময় নিবন্ধন না পাওয়ায় আইনি লড়াইয়ে যায় তৃণমূল বিএনপি। পরে আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন দলটিকে নিবন্ধন দেয়।
২০১৫ সালে শমসের মবিন চৌধুরী বিএনপি থেকে পদত্যাগের পর ২০১৮ সালে বিকল্পধারায় যোগ দেন। নির্বাচনের আগে বিকল্পধারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই সময় জোটের মনোনয়ন না পেয়ে সিলেট-৬ আসনে বিকল্পধারার কুলা প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে নামলেও পরে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন জানান শমসের মবিন।
তৈমূর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পর থেকে সক্রিয় ছিলেন। এ জন্য মামলা-হামলার শিকার, এমনকি জেলেও থাকতে হয়েছে তাকে। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার কারণে দেড় বছর আগে দল থেকে বহিষ্কার হন তৈমূর।
এরপরেও তিনি বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য লিখিত আবেদনও করেন। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি তার সাবেক দল।
জাগরণ/রাজধানী/তৃণমূলবিএনপি/কেএপি/এমএ