আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেও=য়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ।
তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টি দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করেছে। এ কারণে তিনি নির্বাচন করবেন না। বুধবার রাতে রাজধানীর গুলশানের বাসায় অনুসারীদের নিয়ে এক বৈঠকের পর রওশন এরশাদ এই ঘোষণা দেন। তিনি একটি লিখিত বক্তব্য পড়েন। তবে সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন নেননি।
রওশন এরশাদ বলেন, ‘আমি দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। এবারও তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছি। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলাম। বর্তমান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব সহযোগিতা না করায় দলের পরীক্ষিত নেতা–কর্মীদের মনোনয়ন প্রদান করা হয়নি। দলের নেতাদের অবমূল্যায়ন করায় নির্বাচনে আমার অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।’
সোমবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। ওই তালিকায় রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত বহু নেতা বাদ পড়েছেন। পরে একটি বৈঠকও করেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং রওশন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রওশনের দাবি ছিলো, মশিউর রহমান রাঙ্গার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। তার অনুসারীদের মনোনয়ন দিতে হবে। তবে রাঙ্গার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে রাজি নন জি এম কাদের। তাকে মনোনয়নের তালিকাতেও রাখা হয়নি। রাঙ্গা রংপুর-১ আসনে লাঙ্গল নিয়ে তিনবার জিতেছেন।
দলীয় মনোনয়ন পাননি পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, যিনি ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও স্বতন্ত্র মিলিয়ে চার চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দলীয় মনোনয়ন ফরম ছাড়ার পর থেকেই বলে আসছেন রওশন তিনটি আসনের জন্য ফরম চেয়েছেন। এর একটি ছেলে সাদ এরশাদের জন্য, একটি ময়মনসিংহের বহিষ্কৃত নেতা কে আর রহমানের জন্য।
বিরোধীদলীয় নেতা চাইলে তার বাসায় গিয়ে ফরম দিয়ে আসবেন- এমন কথাও বলেছেন একাধিকবার।
শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতে রওশনের আসন ময়মনসিংহ-৪ এ জাতীয় পার্টি ময়মনসিংহ মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আবু মুসা সরকারকে মনোনয়ন দিয়েছে।
টানা দুই মেয়াদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টিতে কর্তৃত্ব নিয়ে রওশন এবং জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব চলছে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে। দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনা শাসক এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে বিবাদ আরও প্রকাশ্যে আসে।
বিএনপির বর্জন করা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে জাতীয় পার্টির দ্যোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন রওশন।
সেই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রার্থিতা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। তখন দলে রওশনকে ঘিরে তৈরি হয় আরও একটি বলয়। তারা জানান, ভোট করবেন। এরপর নানা নাটকীয়তা হয় দলে।
থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের নামে গত বছরের ৩০ অগাস্ট দলের কাউন্সিল ডাকা হয়। এর পাল্টা হিসাবে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে সেপ্টেম্বরের শুরুতে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে।
সেই বিরোধের মধ্যে দুজনে মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।
জি এম কাদেরের দলীয় চেয়ারম্যান হওয়ার বৈধতা নিয়ে আদালতে মামলা আছে। রওশন অনুসারী হিসেবে পরিচিত জিয়াউল হক মৃধার এই মামলার নিষ্পত্তি এখনও হয়নি।
জাগরণ/রাজনীতি/জাতীয়পার্টি/এসএসকে/এমএ