সৌদি আরবে গিয়ে নিজ খরচে সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার নিয়ম হওয়ার পরই অসন্তোষ তৈরি হয় বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের। সৌদি কর্তৃপক্ষের নতুন নিয়মের কারণে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে শ্রমিকদের। আর এ কারণে আজও (মঙ্গলবার) সৌদি এয়ারলাইনসের অফিসের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় তাদের।
প্রবাসী শ্রমিকরা জানান, যেখানে আগে টিকিটের মূল্য ছিল ৩০-৩৫ হাজার টাকা, সেখানে এখন ৭০-৮০ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ফ্লাইটের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রবাসী শ্রমিকদের। ফলে কর্মস্থলে ফিরতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। এমনকি বিদেশে পৌঁছেও পড়তে হচ্ছে চরম অনিশ্চয়তা ও আইনি সাজাভোগের শঙ্কার ভেতর।
সম্প্রতি সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউশন নতুন নিয়ম করেছে, কেউ যদি করোনাভাইরাস ছড়ায় তাকে ৫ বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫ লাখ সৌদি রিয়াল জরিমানা করা হবে। যদি ওই ব্যক্তি প্রবাসী হয়, তবে তাকে শাস্তির পর সৌদি আরব থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং তিনি আর কোনো দিন দেশটিতে যেতে পারবেন না। নতুন এই কঠোরতার প্রতিবাদের পাশাপাশি শ্রমিকরা দাবি করেন, তাদের যেন হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এতে হোটেলে থাকার খরচ বাঁচবে।
মো. শরিফ নামের এক সৌদিপ্রবাসী শ্রমিক বলেন, “প্রথমত, কোয়ারেন্টিনের জন্য আমাদের কাছ থেকে ৭০-৭৫ হাজার টাকা নিচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা, থ্রি স্টার হোটেলের রাখার কথা বলে খুবই নিম্নমানের হোটেলে আমাদের রাখছে। ওখানে গিয়েও নানা রকমের হয়রানি তো আছেই। পাশাপাশি ঢাকা থেকে রিয়াদের টিকিট কাটতে ৭০-৮০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে।”
সরকার ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রবাসী কর্মীরা এ সময় দাবি করেন, তাদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাতিল করে যেন হোম কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা হয়।
শাহজাহান বিশ্বাস নামের এক সৌদিপ্রবাসী শ্রমিক বলেন, “কোয়ারেন্টিনের জন্য ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা নিচ্ছে। যা আমাদের মতো প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য জোগাড় করা অনেক কষ্টকর। সরকার যদি আমাদের কূটনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়।”
টিকিট নিয়েও ভোগান্তিতে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেক সৌদিপ্রবাসী শ্রমিক।
টিকিটের তারিখ নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন টাঙ্গাইলে মির্জাপুর থেকে আসা আবদুর রশিদ নামে এক প্রবাসী শ্রমিক। তিনি বলেন, “আমার টিকিটের মেয়াদ চলতি মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত। আমি মেয়াদ বাড়াতে এসেছি। কিন্তু এয়ারলাইনস বলছে, ১৯ তারিখ এসে টিকিটের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে।”
এ নিয়ে অন্য এক প্রবাসী শ্রমিক বলেন, “জুনের ১৭ তারিখ আমার ফ্লাইট, এখন আমি এটা পরিবর্তন করব। কিন্তু তারা বলছে, ১৭ তারিখের পরে আসেন তাহলে তারিখ পরিবর্তন করে দেব। আমার কথা হচ্ছে, এর মধ্যে টিকিটটা যদি বাতিল হয়ে যায় তাহলে আমি কী করব? তারা বলছেন, ডেট ওভার হওয়ার পরে পরিবর্তন করতে হবে। ডেট ওভার হওয়ার পর এলে কি তারিখ পরিবর্তন করা যাবে?”
হোম কোয়ারেন্টিন নিয়ে কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তা রিপন বলেন, “সৌদি এয়ারলাইনসের সিস্টেম অনুযায়ী এজেন্সি থেকে আমরা টাকা জমা দিই। যে হোটেলটা মিলছে টিকিটের সাথে, তারিখ অনুযায়ী আমরা হোটেল বুকিং দিই। সেখান থেকে আমাদের রি-কনফার্ম একটা হোটেল বুকিং আসে। ওটাই আমরা টিকিটের সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছি। এখানে সৌদি এয়ারলাইনস কতটুকু নিচ্ছে, হোটেলকে কত দিচ্ছে, সেটা আমরা জানি না। হোটেলর অবস্থা কেমন, তা-ও এজেন্সিগুলো জানে না।”
বিষয়টি নিয়ে অনেকবার চেষ্টা করা হলেও সৌদি এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে কেউ কথা বলতে রাজি হননি।