একটি পোকা জানিয়েছিল দেহকোষ ‘আত্মহত্যা’ করে

এস এম সাব্বির খান প্রকাশিত: জুন ৩০, ২০২১, ০৭:২৪ পিএম একটি পোকা জানিয়েছিল দেহকোষ ‘আত্মহত্যা’ করে
সি এলিগ্যান - ছবি : উইলি

১৯৫০এর দশকে ডিএনএ'র গঠন আবিষ্কৃত হবার পর দক্ষিণ আফ্রিকান জীববিজ্ঞানী সিডনি ব্রেনার এমন একটা প্রাণী খুঁজছিলেন - যা তাকে মানুষের শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক আচরণের পেছনে যে জীনগুলো কাজ করে তা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে। তিনি বেছে নিয়েছিলেন একটি ক্ষুদে নেমাটোড বা পরজীবী কৃমিজাতীয় পোকা যার নাম সাইনোহাবডাইটিস এলিগ্যান্স - সংক্ষেপে সি এলিগ্যান।

এর গায়ের চামড়া একেবারে স্বচ্ছ - তাই একে মাইক্রোস্কোপের নিচে রেখে জীবিত অবস্থাতেই তার দেহকোষগুলো কিভাবে কাজ করে তার প্রক্রিয়া সরাসরি দেখা সম্ভব। এর পর থেকে মানুষের দেহ কিভাবে কাজ করে তার সম্পর্কে বহু রকমের আবিষ্কারের কেন্দ্রে ছিল এই পোকাটি।

সি এলিগ্যান

জীবনের নানা বিব্রতি আর বিভ্রান্তির কষাঘাতে আত্ম-নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মহত্যার মতো ভুল পথ বেছে নেয় সৃষ্টিকূলের সবচেয়ে আদর্শ প্রাণী- অনেক মানুষই। কিন্তু শুধু মানুষই যে এই কাজটি করে তা নয়। মানবদেহের কোষও আত্মহত্যা করে! তাও সেই সময়, যখন কিনা একজন মানুষ তাঁর সত্তা বা অস্তিত্ব সম্পর্কে কোনো ধারণাই পায় না! জীব বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর তথ্য উদ্ভাবন করেই প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সিডনি ব্রেনার এবং তার আরো দুজন সহকর্মী ২০০২ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

সেল সুইসাইড বা দেহকোষের আত্মহত্যার প্রক্রিয়াটি ঘটে - মাতৃগর্ভে থাকার সময় মানুষের দেহের আকৃতি গঠনের সময়। যখন তার হাত ও পায়ের আঙুল, দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ তৈরি হয় ।

এর ব্যাখ্যা করে বব ওয়াটারস্টোন বলছিলেন. দেহকোষের আত্মহত্যা হচ্ছে একটা জীববৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া। যে দেহকোষগুলো প্রয়োজনীয় নয় - সেগুলো প্রোগ্রামের মত আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। প্রোগ্রাম সক্রিয় হয়ে উঠে কোষটাকে মেরে ফেলে।

ছবি : ওয়ারম অ্যাটলাস

এটা খুবই প্রয়োজনীয় একটা প্রক্রিয়া। যদি কোষের মৃত্যু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ না করে, যদি দেহকোষের আত্মহত্যার প্রক্রিয়াটি কার্যকর হয়ে উঠতে না পারে - তাহলে আপনার দেহে কয়েক রকমের ক্যান্সার হতে পারে। এসব গবেষণায় সি এলিগ্যান একের পর এক অবদান রেখেছে।

জিন কিভাবে কাজ করে তা আমরা সি এলিগ্যান নামক বিস্ময়কর একটি কৃমি পোকার ভেতর দিয়ে অনেক দ্রুতগতিতে জানতে পেরেছি - মানবদেহকোষের মাধ্যমে যা জানতে অনেক সময় লাগতো। এক কথায় বলতে গেলে এই পোকাটির কারনেই সম্ভব হয়েছিল মানব দেহকোষের রহস্য উদ্ঘাটন। 

এমনকি মহাশূন্যের চরম পরিবেশেও মধ্যে দেহকোষ কিভাবে কাজ করে তা জানার ক্ষেত্রেও এই সি এলিগ্যান ব্যবহৃত হয়েছে।

২০০৬ সালে সি এলিগ্যান নিয়ে কাজ করে আরো দুজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পান। তাদের একজন- লিস্কো বলছেন, মহাশূন্যে স্পেস শাটলের মধ্যেও জীববৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালাতে সি এলিগ্যান ব্যবহৃত হয়েছে। পৃথিবীর প্রথম প্রাণী হিসেবে মহাশূন্যে তা প্রজনন এবং বংশবৃদ্ধি করতেও সক্ষম হয়েছে।

ছবি : ওয়ারম অ্যাটলাস

২০০৩ সালের ফেব্রয়ারিতে স্পেস শাটল কলম্বিয়া পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় বিস্ফোরণের ধ্বংস হয়ে যায়। নভোচারীদের সবাই নিহত হন। কিন্তু বেঁচে ছিল সি এলিগ্যানগুলো।

গর্ডন লিস্কোবলছিলেণ, বিস্ফোরণের পর সি এলিগ্যান ভর্তি পাত্রগুলোর কয়েকটি মাটিতে খুঁজে পাওয়া যায়। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা যায়, পোকাগুলো জীবিত আছে। এটা একটা আশ্চর্য ব্যাপার যে ওই বিস্ফোরণের পরও তারা টিকে থাকতে পেরেছে।