আগামীকাল (১৪ জুলাই) দ্বাদশ আইসিসি বিশ্বকাপ আসরের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ইংল্যান্ডের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। প্রথমবারের মতো শিরোপা পাওয়ার লক্ষ্যে মাঠে নামবে দুই প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড।
ক্রিকেট বিশ্বকাপ মানেই যেন অন্যরকম এক উন্মাদনা। বিশ্বজুড়ে ভদ্রলোকের খেলা নামেই পরিচিত এই ক্রিকেট। তবে বিগত কয়েক বছরের বিশ্বকাপ আসরে ঘটে গেছে এমন কিছু ঘটনা যা বিতর্কিত করেছে ক্রিকেটকে, কলঙ্কিত হয়ে আছে ইতিহাসের পাতায়। এমন অপ্রীতিকর কিছু ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন ক্রিকেট অঙ্গনের বিখ্যাত নানা তারকা। চলুন জেনে নেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে ঘটে যাওয়া ৩টি অপ্রীতিকর ঘটনা সম্পর্কে।
ইডেন গার্ডেন দাঙ্গা (১৯৯৬ বিশ্বকাপ)
ভারতের কলকাতায় ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ চলছিল। ইডেন গার্ডেনসে সেদিন মুখোমুখি হয় দুই এশিয়ান পরাশক্তি শ্রীলঙ্কা ও ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতের বিপক্ষে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান করে টিম ইন্ডিয়াকে ২৫২ রানের টার্গেট ছুঁড়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। তবে সেদিন আচমকা যেনো তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ। ৩৪ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ তখন ৮ উইকেটে মাত্র ১২০ রান।
তবে বরাবরের মতোই ভারতীয় খ্যাপাটে ভক্তরা তাদের এই হার মেনে নিতে পারছিলো না। তারা খেলা চলাকালীন সময়েই মাঠের ভেতর বোতল ছোঁড়া শুরু করে। পুরো স্টেডিয়ামের নানা জায়গায় ধরিয়ে দেয় আগুন। এমন পরিস্থিতে আম্পায়ার ১৫ মিনিটের জন্যে খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ ভক্তরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। নিয়ন্ত্রণকারীরাও কোনোভাবে সামলিয়ে উঠতে পারছিলেন না। সেকারণে সেদিন খেলা বাতিল করতে বাধ্য হয় ক্রিকেট কমিটি। এবং শ্রীলঙ্কাকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তীতে রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে সেবার চ্যাম্পিয়নই হয় শ্রীলঙ্কা। তবে সে বিশ্বকাপের এ ঘটনাটি আজীবন এক কালো অধ্যায় হিসেবে থেকে আসছে।
বব উলমারের মৃত্যু (২০০৭ বিশ্বকাপ)
১৮ মার্চ ২০০৭ সাল। জ্যামাইকার প্লেগাসাস হোটেলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তৎকালীন পাকিস্তানের কোচ বব উলমারকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত ২০০৭ সালের সেই বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে শক্তিশালী পাকিস্তান। লজ্জাজনক পরাজয়ের সেই রাতেই হোটেলের রুমে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় বব উলমারকে। কে বা কারা এ ঘটনার জন্যে দায়ী বা কিভাবে এই মৃত্যু; এ ঘটনার কোনো কূল কিনারা করতে পারছিলেন না ক্যারিবিয়ান পুলিশ।
অনেকের মতে আয়ারল্যান্ডের কাছে হারার ফলে বাজিকরদের হাতে খুন হয়েছেন এই কোচ। তবে কেউ কেউ বলেন, পাকিস্তানিরা ইচ্ছে করেই ম্যাচ ফিক্সিং করে হেরেছিল সে ম্যাচ। আর যেনো এটি কোচের কাছ থেকে বিশ্ববাসীর কানে না যায় সে কারণেই খুন করা হয়েছিলো উলমারকে। তবে যেভাবেই খুন হোক এটি ক্রিকেট বিশ্বকাপে অন্যতম কালো একটি অধ্যায় হিসেবেই ইতিহাসে জমা হয়ে আছে।
অন্ধকারের ফাইনাল (২০০৭ বিশ্বকাপ)
২০০৭ বিশ্বকাপে বব উলমারের মৃত্যু ছাড়াও ঘটেছিলো আরো একটি করুণ কাহিনী। সেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফাইনাল এ প্রতিপক্ষ ছিলো অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। বারবাডোসের কেনিংস্টন ওভালে ম্যাচের শুরুতেই বাগড়া দেয় বেরসিক বৃষ্টি। তবে সবচেয়ে অদ্ভুত কথা হলো কেনিংস্টনের সেই মাঠে সেদিন ছিলো না কোনো ফ্লাড লাইট !
খেলা না হতে পারার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে অন্য কোনো রিজার্ভ ডেও ঠিক করে রাখা হয়নি সেবার। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি থামলে খেলা নামিয়ে আনা হয় মাত্র ৩৮ ওভারে। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ব্যাটিং তাণ্ডবে অস্ট্রেলিয়া গড়ে ২৮১ রানের বিশাল সংগ্রহ। তবে বিপত্তি ঘটে খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং করার সময়ে পুরো আকাশ অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। এমনকি শ্রীলঙ্কান খেলোয়াড়রা ঠিকঠাক বল চোখে দেখতে পারছিলেন না।
প্রথম তিন ওভারে লঙ্কানরা করে মাত্র ৯ রান। অন্ধকার থাকার কারণে ঠিকমতো বল দেখতে না পারার দরুণ একের পর এক উইকেট হারাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। পরবর্তীতে ৩৬তম ওভারে খেলা থামিয়ে ডিএল পদ্ধতিতে অস্ট্রেলিয়াকে ৫৩ রানে জয়ী ঘোষণা করা হয়।
কিন্তু পুরো ঘটনার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হয় আইসিসিকে। এ ঘটনার দায়ে শাস্তিস্বরূপ পরবর্তী বছরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেদিনকার ফাইনালের তিন আম্পায়ার স্টিভ বাকনার, আলিম দার ও বিলি বাউডেনকে টুর্নামেন্ট থেকে থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এমএইচএস