অরণ্য নগরী হচ্ছে চাকচিক্যময় সিঙ্গাপুর

জাগরণ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২১, ০২:০২ পিএম অরণ্য নগরী হচ্ছে চাকচিক্যময় সিঙ্গাপুর

সিঙ্গাপুর ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের স্থান। নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চাকচিক্য আর উজ্জ্বলতা। ভেসে ওঠে একটি কসমোপলিটন শহর। উঁচু বিল্ডিং, নামীদামি শপিং মল, অত্যাধুনিক জীবনযাত্রার এক অসাধারণ উদাহরণ। লাখ লাখ পর্যটক প্রতিবছর ছুটে যান দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে। ছুটি কাটিয়ে আসেন। তবু যেন মন ভরে না। সুযোগ পেলে আবারও ছুটে যান ওই শহরে। 

ছবির মতো করে সাজানো ওই শহরটি। সবকিছুতেই রয়েছে পারফেকশনের ছোঁয়া। দিনের আলোতে তো মুগ্ধ করবেই, সেই সঙ্গে রাতের সিঙ্গাপুরও হয়ে ওঠে মায়াবী এক নগরী। পর্যটকদের কাছে রাতের সিঙ্গাপুর বেশি পছন্দ। রাতের অপেক্ষাতেই তারা দিন কাটায়। ইট, পাথর, কাঠে শিল্পের ছোঁয়া আর রংবেরঙের আলোকসজ্জায় সাজানো এই শহরের প্রতিটি অলিগলি। মায়ার টানেই বারবার ছুটে যান পর্যটকরা। ওই শহরও পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে বারবার নতুন আঙ্গিকে সেজে নেয়।

সিঙ্গাপুর এ বছর নিজের রূপকে খানিকটা পরিবর্তন করছে। ইট-কাঠ-পাথর-কাচের চাকচিক্য শহর নয়, সিঙ্গাপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে আকর্ষণ করবে প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের। এর জন্য় বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে দেশটি।

দেশটির সরকারের দাবি, অরণ্য নগরী তেঙ্গাহ হবে একবিংশ শতাব্দীর সেরা আবিষ্কার। ২০৩০ থেকে ২০৫০-এর মধ্যে শেষ হবে এই অরণ্য নগরী তৈরির কাজ। এরপর গোটা বিশ্বের পর্যটকরা এখানে ভিড় জমাতে পারেন, সেই আশা করা হচ্ছে।

পর্যটক টানতে নতুন শহর তৈরি করা হলেও শহরের পরিবেশকে একেবারেই নষ্ট হতে দেবে না সিঙ্গাপুর সরকার। প্রাকৃতিক পরিবেশকে আঘাত না করে যতটা জীবন যাপন করা সম্ভব, ঠিক ততটাই করা হবে। শহরের মধ্যেই আরণ্যক জীবনের স্বাদ পাবেন পর্যটকরা। 

কী কী থাকছে সিঙ্গাপুরের নতুন আরণ্যক জীবনের অবয়বে

প্রকৃতি ধ্বংস করে নাগরিক জীবন স্থাপন করেছিল দেশটি। তাতেই এখন কিছুটা প্রলেপের চেষ্টা করছে। দেশের একাংশ তেঙ্গাহ প্রদেশকেই ইকো-স্মার্ট সিটি তৈরি করা হচ্ছে। ইকো-স্মার্ট সিটির পোশাকি নাম হবে ফরেস্ট টাউন বা অরণ্য নগরী।

তেঙ্গাহ প্রদেশ মূলত সামরিক এলাকা। এখানে কারখানা ও সামরিক ঘাঁটির প্রয়োজনীয় হাব তৈরির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবেই সিদ্ধান্ত বদলে নেয় সিঙ্গাপুর সরকার। এরপরই প্রকৃতির নন্দনকাননে পরিণত হতে কাজ শুরু হয়।

তেঙ্গাহ প্রদেশের একটি নির্দিষ্ট জেলায় তৈরি হবে ৪২ হাজার বাড়ি। বসানো হবে তার কয়েক গুণ গাছ। কৃত্রিম পাহাড়, ঝর্ণা, বন্যজীবনও তৈরি হবে। সেগুলোকে বাস্তবিক রূপ দেওয়ার সাধ্যমতো চেষ্টা করবে বলেও সিঙ্গাপুর সরকার জানায়। 

নতুন অরণ্য নগরীতে চলবে না কোনো গাড়ি। তবে ব্যক্তিগত যাতায়াত মাধ্যম হিসেবে শুধু সাইকেল ব্যবহার করা যাবে। যাতায়াতের জন্য় নির্দিষ্ট পরিবেশবান্ধব বাসের ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে না কোনো ট্র্যাফিক জ্যাম। শহরের কার্বনের প্রবেশ একরকম নিষেধ।

ওই নগরীর প্রত্যেক মানুষের নিশ্বাসে প্রবেশ করবে তাজা অক্সিজেন। সেখানে বসবাসরত নাগরিকরাই নয়, বিশুদ্ধ ও দূষণমুক্ত পরিবেশ উপভোগ করবেন পর্যটকরাও। তাদেরও মানতে হবে শহরের নিয়মকানুন।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে থাকছে দূষণমুক্ত রাস্তাঘাট। গোটা শহরটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়েই এর ব্যবস্থা করা হবে। প্রচুর গাছ লাগিয়ে পরিবেশ শীতল রাখার পরিকল্পনাই তাদের। গাছের সংখ্যা এতটাই বেশি হবে যে, গরম কিংবা আর্দ্রতা কোনোটিই ছুঁতে পারবে না নাগরিক বা পর্যটকদের।

অরণ্য নগরীর পরিবেশ হবে ১০০ শতাংশ মনোরম। সৌরবিদ্যুৎতে চলবে সেখানকার নগরজীবন।