• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০১৯, ১০:০২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২০, ২০১৯, ১০:০৪ পিএম

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : দণ্ডিতরা কে কোথায়?

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা : দণ্ডিতরা কে কোথায়?

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট ৫২ জন আসামি ছিলেন। এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩ জনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাদেরকে গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন আদালত। এরপর এ মামলায় দণ্ডিত আসামির সংখ্যা ৪৯ এ দাঁড়িয়েছে। ১৯ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবর এবং আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ৩১ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। এছাড়া তারেক রহমান এবং হারিছ চৌধুরীসহ ১৮ জনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। আরো ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা তাদেরকে অভিযোগ পত্র থেকে বাদ দিয়েছেন। 

পলাতকদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ১০ বছর যাবত লন্ডনে অবস্থান করছেন। গ্রেনেড হামালা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে তাকে পলাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে। অর্থ পাচার এবং দুর্নীতির মামলায় এরইমধ্যে তার সাজা হয়েছে।

সেসময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন লুৎফুজ্জামান বাবর। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাবরকে আটক করা হয়। সেই থেকে তিনি কারাগারে। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এরইমধ্যে লুৎফুজ্জামান বাবরকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে।

আব্দুস সালাম পিন্টু ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। তিনি টাঙ্গাইল জেলা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। উপমন্ত্রী থাকলেও তারেক রহমানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে জানা যায়। 

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। গ্রেনেড হামলা মামলায় তিনি ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামি। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গ্রেনেড হামলা মামলা থেকে তার নাম বাদ দেয়া হয়।

উগ্র ইসলামপন্থী দল হরকাতুল জিহাদের নেতা মুফতি হান্নান ছিলেন গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামি। তার স্বীকারোক্তির মাধ্যমেই গ্রেনেড হামলা মামলার মোড় ঘুরে যায় বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তির পর তারেক রহমান এবং লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অনেককেই এ মামলার আসামি করা হয়। সিলেটে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ৩ জনকে হত্যার দায়ে ২০১৭ সালে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। সেই গ্রেনেড হামলায় ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী আহত হয়েছিলেন। 

সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই তাজুল ইসলাম। তিনি মাওলানা তাজউদ্দীন হিসেবে পরিচিত। গ্রেনেড হামলার পর তাকে ভুয়া পাসপোর্টের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে তাকেও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিএনপি সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব ছিলেন হারিছ চৌধুরী। তৎকালীন সরকারে যাদের প্রভাব অনেক বেশি ছিল হারিছ চৌধুরী তাদের মধ্যে অন্যতম। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন শাস্তি দেয়া হয়েছে। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান হারিছ চৌধুরী। বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ নিশ্চিত নয়। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশে আসা-যাওয়া করছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন।

সেসময় প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা বা ডিজিএফআই প্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাকে আটক করা হয়। তৎকালীন প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এরইমধ্যে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা বা এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম ছিলেন গ্রেনেড হামলা মামলায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামি। তাকেও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় এরইমধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। 

খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা এ মামলায় দীর্ঘ সময় জামিনে থাকলেও এখন কারাগারে। 

আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার সময় পুলিশ প্রধান (আইজিপি) ছিলেন শহুদুল হক। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। গ্রেনেড হামলা হওয়ার পর তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে রাষ্ট্রপক্ষ। কারণ, হামলার পর ঘটনাস্থল একবারও পরিদর্শন করেননি তিনি। 

শহুদুল হক একসময় সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। পরে তাকে পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ২০০১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর শহুদুল হককে পুলিশ প্রধানের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়। বিএনপি সরকারের সময় পুলিশ প্রধান পদে খুব বেশিদিন থাকতে পারেননি তিনি। আদালত অবমাননার দায়ে তাকে সেই পদ ছাড়তে হয়েছিল। ২০০৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত অর্থাৎ এক বছর আট মাস পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে  ছিলেন শহুদুল হক।

গ্রেনেড হামলার সময় আশরাফুল হুদা ঢাকার পুলিশ কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল পর্যন্ত অর্থাৎ চার মাসেরও কম সময় পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন আশরাফুল হুদা। মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া  হয়েছে তাকে।

গ্রেনেড হামলার সময় অতিরিক্ত পুলিশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন খোদাবক্স চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি পুলিশ প্রধান হন। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। 

বিএনপির টিকিটে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। প্রশাসনের ধারণা, কায়কোবাদ সৌদি আরবে পলাতক আছেন।

বিএনপি সরকারের সময় ডিজিএফআই-এর দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন। পরবর্তীতে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি ডিজিএফআই-এর প্রধান হন। সেই সরকারের মেয়াদ শেষ হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এখনো সেখানেই আছেন। মামলার কাগজপত্রে তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে।

গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে। 

সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান এবং এএসপি আব্দুর রশিদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। সাজাপ্রাপ্ত এ তিনজন বিএনপি সরকারের সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন।

গ্রেনেড হামলা মামলার আরেক আসামি হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ বিদেশে পলাতক রয়েছেন। তাকেও মৃত্যুদণ্ড  দিয়েছেন আদালত।

এইচ এম/ এফসি

আরও পড়ুন