• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০১৯, ০৯:৫২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০১৯, ১০:১৪ পিএম

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পেপারবুক 

ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে পেপারবুক 

● পেপারবুক প্রস্তুত হলেই ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের শুনানি  

● পেপারবুক ছাপা এবং শুনানির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান বিচারপতি 

● শেখ হাসিনাকে হত্যা করে নেতৃত্বশূন্য করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য

● দণ্ডিতরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা

● হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড আনা হয় পাকিস্তান থেকে

............................................................................................................................

ডেথ রেফারেন্সের (মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমোদন) শুনানির জন্য ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের কাজ চলছে সুপ্রিম কোর্টে। পেপারবুক প্রস্তুত সম্পন্ন হলেই ডেথ রেফারেন্স শুনানির জন্য তা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে পাঠানো হবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে হাইকোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘পেপারবুক প্রস্তুত হচ্ছে। এখন টাইপের কাজ চলছে। পরে কম্পেয়ার হবে। টাইপ করা কাগজের সঙ্গে মূল নথি তুলনা করে দেখা হবে। পরে সিদ্ধান্ত হবে ছাপানোর কাজ বিজি প্রেস নাকি আমাদের এখানে (সুপ্রিম কোর্টে) হবে। ছাপানোর কাজ শেষ হলেই পেপারবুক প্রস্তুত সম্পন্ন হবে। তারপর সিদ্ধান্ত হবে, মামলাটি কোন বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হবে। কোথায় ছাপা হবে এবং কোন বেঞ্চে শুনানি হবে— সেই সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধান বিচারপতি।’ 

পেপারবুক প্রস্তুত প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দৈনিক জাগরণতে বলেছেন, ডেথ রেফারেন্সের মামলায় সাধারণত রাষ্ট্রপক্ষে পেপারবুক তৈরি করা হয়। যেমন— পিলখানা (বিডিআর) হত্যা মামলায় বিশেষ ব্যবস্থায় পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাতে দ্রুত পেপারবুক প্রস্তুত হয় তা সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টিতে আনবো। পেপারবুক প্রস্তুত হলেই ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিলের শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত দুইটি মামলায় গত বছরের ১০ অক্টোবর ঘটনার সময়কার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১।

দণ্ডিতদের মধ্যে অধিকাংশই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ নেতা। একই অপরাধে বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়।

বিচারিক আদালতের ওই রায়ে বলা হয়, ‘‘হরকাতুল জিহাদ (হুজি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগীরা গ্রেনেড হামলার কিছুদিন আগে বনানীর হাওয়া ভবনে গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে এক বৈঠকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করার সহযোগিতা চায় জঙ্গিরা। তারেক রহমান সবার সামনে জঙ্গিদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আর ওই হামলার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল শেখ হাসিনাকে হত্যা করে তার দলকে নেতৃত্বশূন্য করা।

২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে পূর্ণাঙ্গ এই রায় প্রকাশ করা হয়।

প্রকাশিত রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিলে ট্রাইব্যুনালের দেয়া সাজার রায় বাতিল চেয়েছেন দণ্ডিতরা।

দণ্ডিতদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৭ আসামি ৩৪টি এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৭ আসামি ১৪টি আপিল দায়ের করেছেন বলে ফৌজদারি আপিল শাখা সূত্র জানায়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—

লুৎফুজ্জামান বাবর, আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ উজ্জল, এনএসআই এর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

▪ ▪ পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করে আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— 

তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মোহাম্মদ খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

▪ ▪ দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্তরা হলেন—

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই এর মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। 

আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয় আদালত।

● ঘটনাপ্রবাহ ও বিচারপ্রক্রিয়া
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু ও তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। তখন জানা যায়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হামলার ছক কষা হয়েছিল। পাকিস্তান থেকে আনা হয় হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২।

সম্পূরক চার্জশিটে আসামি যারা—

তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবর, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও তৎকালীন মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, আবদুর রহিম, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন, আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, খোদা বক্স, ওবায়দুর রহমান খান, খান সাঈদ হাসান, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, মাওলানা আবদুর রউফ, সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, আরিফুর রহমান, মাওলানা আবদুস সালাম, আবদুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, রুহুল আমিন, মুন্সী আতিকুর রহমান, আবদুর রশিদ, মোহাম্মদ হানিফ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু। 

মোট ৫২ আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯ জনে। 

৪৯ জনের মধ্যে ৩১ জনকে কারাগারে। পলাতক রয়েছেন বাকি ১৮ জন।

পলাতক যারা—

তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এ টি এম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক ওরফে শওকত ওসমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম।

ছবি ● সংগৃহীত

এমএ/এসএমএম

আরও পড়ুন