• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৯:৫০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯, ০৯:৫১ পিএম

তোপের মুখে যুবলীগ, ভেঙে যাচ্ছে মহানগর কমিটি !

তোপের মুখে যুবলীগ, ভেঙে যাচ্ছে মহানগর কমিটি !

অব্যাহত অভিযোগ আর সমালোচনার মুখে ভেঙে দেয়া হচ্ছে যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের কমিটি। ৪ বছর আগে এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে নতুন কমিটির গঠনের নির্দেশ থাকলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়ন হয় নি।

সম্প্রতি যুবলীগের মহানগর নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-চাঁদাবজি-ক্যাসিনোর ব্যবসা পরিচালনার অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার পর কমিটি ভেঙে দিতে যাচ্ছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমান্ড।

আওয়ামী লীগ ও যু্‌বলীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতের মধ্যেই কমিটি ভেঙে দেয়া হতে পারে। 

কয়েকদিন ধরেই যুবলীগে চলছে বহুমুখী তৎপরতা আর আলোচনা-সমালোচনা। সংগঠনের দুই নেতার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও ক্যাডারবাজির অভিযোগ আসার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পর থেকে সংগঠনটির নেতারা সংগঠন ও নিজেদের ইমেজ নিয়ে বেশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তোপের মুখে রয়েছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দও।

জানা গেছে, যুবলীগের গঠিত ট্র্যাইবুন্যালে অতি শিগগির অভিযুক্ত ওই দুই নেতাকে ডাকা হবে। তবে অভিযুক্ত দুই নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কার্যক্রম হিসেবে শোকজ করা হয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে আটদিনের সরকারি সফরে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার আগেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে দলীয় প্রধানের কাছ থেকে। এমনটাই বলছে দলের একাধিক সূত্র।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে যুবলীগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে যুবলীগের দোয়া অনুষ্ঠান ও যুব জাগরণ সমাবেশের প্রসঙ্গ আসতেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগে অপকর্ম হয় নি, কেউ করে নি এটা বলি না। অপকর্ম হলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই। এটা অন্তত আওয়ামী লীগে হয়, অন্য কোনও দল যেটা হয় না। বিএনপিও ব্যবস্থা নেয় না। আওয়ামী লীগে এই পলিটিক্যাল কনসার্ন আছে, কাজেই কেউ অনিয়ম, দুর্নীতি করলে তাকে শাস্তি পেতেই হবে। 

একবছর আগে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে গণভবনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে গেলে মহানগর যুবলীগ নিয়ে নিজের ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন তিনি বলেছিলেন, আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এখানে বেওয়ারিশ লাশ দাফন হয়। এখানে আমি ও শেখ রেহানাও সাহায্য করি। এ প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা দাবি করা ও চাঁদা না দেয়ায় ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেয়া- এটা আমি সহ্য করবো না।

জানা গেছে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যুবলীগ নিয়ে দলীয় প্রধানের দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান। সার্বিক বিতর্ক এড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযুক্ত মহানগরের দুই কমিটি ভেঙে দেয়া হতে পারে। এরই মধ্যে অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় তার বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।

সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেফতার হতে পারেন বলে আলোচনা ছিল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সারাদিন। এই গুঞ্জনের মধ্যেই সারারাত নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাকরাইল অফিসে ছিলেন সম্রাট।

জানা গেছে, মধ্যরাতে দলবল নিয়ে রাজধানীর কাকরাইলের অফিসে যান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিনই সেখানে অবস্থান করেন সম্রাট। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার সঙ্গে সেখানেই অবস্থান করছে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। কাকরাইলের সাততলা ভবনের তৃতীয় তলায় অবস্থান করছেন ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

ওই অফিসে থাকা একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা অনেক আগে থেকেই এখানে রয়েছে। সকালে কয়েক ঘন্টা ঘুমালেও এরপর নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বসেই সময় কাটিয়েছেন তিনি। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট কখন বের হবেন, জানতে চাইলে তারা বলেন, সম্রাট ভাই, অফিসে অবস্থান করছেন। তিনি অফিসেই থাকবেন।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর ঢাকা শহরের চারটি ক্যাসিনোতে অভিযান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে আটকের পর রাত দেড়টার দিকে দলবল নিয়ে কাকরাইলে নিজের অফিসে অবস্থান নেন সম্রাট।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, যে কোনও সময়ে আসতে পারে কমিটি ভাঙার খবর। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় প্রায় ছয় বছর আগে। সংগঠনটির তিন বছর মেয়াদি সর্বশেষ কমিটি হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। আওয়ামী লীগের ২০১৬ সালের সম্মেলনের আগে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন করা হলেও যুবলীগের সম্মেলন বা কমিটি হয় নি। এমনকি ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দিতে বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মূলত শীর্ষ নেতাদের অনীহার কারণেই সম্মেলন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুবলীগের প্রচার সম্পাদক ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু দৈনিক জাগরণকে বলেন, সংগঠনের যেসব নেতাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক ও অভিযোগ উঠেছে তার তদন্ত করার পর সেই তদন্ত রিপোর্টের সত্যতার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে যুবলীগের ট্র্যাইবুন্যাল। 

গণমাধ্যমে যুবলীগ সম্পর্কে সাম্প্রতিক অভিযোগ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, আওয়ামী যুবলীগ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নেতা-কর্মীকে দলের সংগঠন বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বহিষ্কারের মতো নজির গড়েছে। সকল অভিযোগ ও অপরাধের বিচার করেছে। আমাদের নিজস্ব ট্রাইবুনাল আছে। কেউ যদি অন্যায় করে থাকে তার বিচার ট্রাইবুন্যালে হবে। কিন্তু পুরো সংগঠনকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অপ্রপ্রচার চালিয়ে কালিমা লেপন করাটা রাজনীতির জন্য কোনভাবেই শুভ লক্ষণ নয়। 

এএইচএস/এসএমএম

 

আরও পড়ুন